Skip to content

হায়েজ নেফাজ / hayez nefaz

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

অধ্যায়- পবিত্রতা

হায়েয, নিফাস ও ইস্তেহাযা

আসসালামু আলাইকুম , মহিলাদের গর্ভস্থান হতে নির্গত রক্ত তিন প্রকার: যথা- হায়েয, নিফাস ও ইস্তেহাযা।

হায়েয ( ঋতুস্রাব ) কি ?

হায়েয একটি আরবি শব্দ। হায়েযের আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া। শরীআতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময় নারীর রেহেমের গভীর থেকে কোনো অসুখ ও আঘাত ব্যতীত যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাই হায়েয। হায়েয মনুষ্য স্বভাব ও প্রকৃতি, যার ওপর আল্লাহ আদমের মেয়েদের সৃষ্টি করেছেন। তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ এ রক্ত সৃষ্টি করেন যেন গর্ভে থাকা বাচ্চা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। প্রসবের পর এ রক্তই দুধ হিসেবে রূপান্তর হয়। নারী গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারীনী না হলে গর্ভাশয়ে সৃষ্ট রক্ত ব্যবহৃত হওয়ার কোনো স্থান থাকে না, তাই তা নির্দিষ্ট সময় জরায়ু দিয়ে নির্গত হয়, যার নাম ঋতুস্রাব।

হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

অর্থ – “তাদের (নারীদের) পক্ষে বৈধ নয় গোপন রাখা যা আল্লাহ্‌ তাদের জরাযুতে সৃষ্টি করেছেন’’।

(সূরা আল বাকারা ২:২২২)

অর্থ – ‘‘তারা তোমাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাও, সেটা হচ্ছে কষ্টদায়ক বস্তু”।

( সূরা আল বাকারা ২:২২৮ )

ঋতুবতী নারীর পক্ষে কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ

অর্থ – “ পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করবে না ”

( সূরা আল-ওয়াকি আহ আয়াত নং- ৭৯ )

সহিহ হাদিস হতে সংগ্রহিতঃ

কাবা ঘর অথবা অন্য কোন মসজিদে ঋতুবতীর অবস্থান জায়েয নয়। তবে প্রয়োজনে মসজিদের ভেতর দিয়ে যেতে পারে এবং প্রয়োজন মিটাতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জায়নামায আনতে বললে তিনি বলেন, ওটা তো মসজিদে আছে, আর আমি ঋতুগ্রস্ত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, “তোমার ঋতুস্রাব তো তোমার হাতে লেগে নেই” সুতরাং মসজিদে রক্তবিন্দু পড়বে না মর্মে আশংকামুক্ত থাকা অবস্থায় ঋতুবতী মসজিদ দিয়ে গেলে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি সে মসজিদে ঢুকে বসতে চায়, তাহলে তা জায়েয হবে না। কেননা রাসূল সাছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের, তরুণী, কুমারী এবং ঋতুবতীদের ঈদগাহে যেতে বলেছেন, তবে তিনি ঋতুবতীদেরকে নামাযের স্থান ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ে ঋতুবতী হতাম কিন্তু তিনি আমাদের সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অথবা আমরা তা কাযা করতাম না। তবে সিয়াম কাযা করতাম। এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, কুরআন হাদিস বা বক্তব্য শোনার জন্য মসজিদে অবস্থান করা ঋতুবতীর জন্য জায়েয নয়। ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলা জরুরী প্রয়োজনেঃ যেমন শিক্ষিকা ও ছাত্রীর ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াত করাতে কোন দোষ নেই। তবে বিনা প্রয়োজনে বা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ছওয়াবের আশায় তার জন্য কুরআন তেলাওয়াত না করাই উত্তম। কেননা অধিকাংশ আলেম মনে করেন যে, ঋতুবতীর জন্য কুরআন তেলাওয়াত ঠিক নয়।

( তথ্যসূত্রঃ বুখারী হাদিস নং-৩১৫, ৯৭৪, মুসলিম হাদিস নং-৩:১৫, ৩৩৫, ১০:৮৯০, ১১:২৯৮, ২১৩৭, তিরমিযী হাদিস নং-১৩০, নাসাঈ, হাদিস নং-২৩১৮, আবু দাউদ, হাদিস নং-২৬২, ইবন মাজাহ হাদিস নং-৬৩১, আহমদ হাদিস নং-৬/২৩২, ২৪৭১৪, দারেমী হাদিস নং-৯৮৬ )

সূচিপত্র (নামাজ শিক্ষা বই)……………

নেফাস কী ?

নেফাসের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘জন্ম’। স্ত্রীলোকের সন্তান প্রসবের পর গর্ভ হইতে যে রক্তস্রাব হয় উহাকে নেফাস বলে। নেফাসের সর্বোচ্চ মুদ্দত ৪০ দিন কম মুদ্দতের কোন সীমা নাই। ৪০ দিনের বেশী রক্ত দেখা গেলে উহাকেও এস্তেহাজা বা রোগ মনে করিতে হইবে। নেফাসের রক্ত ১৫,২০,২৫,২৭,৩০,৩৫ দিনের মধ্যে কিংবা উক্ত মুদ্দতের মধ্যে যে কোনদিন বন্ধ হইতে দেখিলে তখন গোসল করিয়া নামাজ দোআ পড়া ইত্যাদি কার্য করিবে।

হাদিসের বর্ণনায় –

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিফাসগ্রস্তা নারীদের নিফাসকাল চল্লিশ দিন নির্ধারণ করতেন। এই মেয়াদের আগেই কেউ পবিত্র হলে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার।

(সুনান ইবনে মাজাহ যঈফ হাদিস – ৬৪৯,আলমুজামুল আওসাত হাদীস -৮৩১১, সুনানে দারাকুতনী হাদীস -৮৫২, সুনানে কুবরালিল বায়হাকী হাদীস- ১৬১৯ )

 ইস্তিহাযা কী ?

হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত যে রক্ত দেখা যায় সেটা ইস্তিহাযা। ওই অবস্থার হুকুম হলো পবিত্র থাকার হুকুমের মতো।

হাদিসের বর্ণনায় –

কুতায়বা (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এক মহিলার অবিরাম রক্তস্রাব হতো। তার জন্য উম্মে সালমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সমাধান চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে দেখবে ইস্তিহাযার আক্রান্ত হবার পূর্বে মাসে কতদিন কত রাত তার হায়েয আসত। প্রতি মাসের ততদিন সময়ে সালাত ছেড়ে দেব। এ পরিমান সময় অতিবাহিত হলে সে গোসল করবে, পরে কাপড় দ্বারা পট্টি বাধবে, তারপরে সালাত আদায় করবে।

(আন-নাসাই সহীহ হাদিস – ৩৫৫ ই ফা বা )

সহিহ হাদিস হতে সংগ্রহিত –

(ইসতিহাযা) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনতু আবূ হুবায়ুশ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার ইসতিহাযাহ হয়েছে এবং পবিত্র হচ্ছি না/হই না। এমতাবস্থায়, আমি কি সালাত ছেড়ে দিব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, এ হলো ধরনের বিশেষ রক্ত যা রগ থেকে বের হয় হায়েযের রক্ত নয়। যখন তোমার হায়েয শুরু হয় তখন তুমি সালাত ছেড়ে দাও, আর হায়েয শেষ হলে রক্ত ধুয়ে সালাত আদায় কর অথবা ইসতিহাযাহ হওয়ার পূর্বে যতদিন হায়েয হতো সে কয়দিন সালাত অবশ্যই পরিত্যাগ করো তারপর গোসল করে নিবে ও সালাত আদায় করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযু করবে।

* হায়েয ও নিফাসের মেয়াদের অতিরিক্ত সময়কালীন রক্তস্রাবকে ইসতিহাযা এবং সেই মহিলাকে মুস্তাহাযা বলা হয়।

( তথ্যসূত্রঃ বুখারী হাদিস নং-২২৬, মুসলিম হাদিস নং-৩৩৩, ৩৩৪, তিরমিযী হাদিস নং-১২৫, ১২৮, ১২৬, নাসাঈ হাদিস নং-২০৭, ২১৫, ৩৬৪, আবু দাউদ হাদিস নং-২৮২, ২৯৭, ইবন মাজাহ হাদিস নং- ৬২০, ৬২২, ৬২৪, ৬২৫, ৬২৭, আহমদ হাদিস নং-৬/২০৪, ৬/২২২, ৬/৪৬৪, ৬/৪৩৯, মালিক হাদিস নং-১৩৭, দারেমী হাদিস নং-৭৭৪, ৭৯৩, আবু দাউদ হাদিস নং- ২৭৯, ২৮০, ২৮৭, রমিযি, হাদীস নং ১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২২; আহমদ: ৬/৪৩৯)

ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফ্ফারা –

ইবনু ’আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ’আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। যে ব্যক্তি হায়িয অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করে তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে যেন এক দীনার অথবা আধা দীনার সাদাকাহ্ করে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সহীহ বর্ণনাসমূহে এরূপই রয়েছে। তিনি বলেন, এক দীনার অথবা আধা দীনার। শু’বাহ কখনো হাদীসটি মারফুভাবে বর্ণনা করেননি।

(আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ২৬৪ ই ফা বা, তাহকীককৃত, আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস – ৩৭০ ই ফা বা , তিরমিজী যঈফ হাদিস – ১৩৬ ই ফা বা, ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস – ৬৪০)

সূচিপত্র (নামাজ শিক্ষা বই)……………

বেশি বেশি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ থাকল……………………

Leave a Reply