Skip to content

আযান ও ইকামতের সময় I Azan and Iqamat

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

আযান ও ইকামতের সময় ?

আযান ও ইকামাত –

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

আযান ও ইকামত এর প্রচলন কবে থেকে শুরু হয় –

আযান ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। নামাজের জন্য মানুষকে ডাকার মাধ্যম এবং একত্রিত করার আজানের অন্যতম কারণ । আজান শুনে মানুষ সব ব্যস্ততা ছেড়ে নামাজে আসে। আযানের শব্দে আছে আল্লাহ তাআলার বড়ত্বের ঘোষণা, আল্লাহর একাত্ববাদের ঘোষণা, রাসুল (সা.)-এর রিসালতের সাক্ষ্যদান ও তাঁর প্রশংসা।

সর্ব প্রথম কখন এবং কোথায় আযানের সূচনা হয়েছিল তা নিয়ে কিছু মতবাদ আছে। সাধারণত এ নিয়ে চার ধরনের মতবাদের কথা শোনা যায়। নিন্মে তা আলোচনা করা হল –

১।  সর্বপ্রথম মেরাজের রাতে আযানের সূচনা হয়। মসজিদুল আকসায় জিবরাইল (আ.) আযান ও ইকামত দেন এবং সেখানে রাসুল (সা.) সব নবীকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

(মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ১/৩২৮)

২।  হিজরতের আগে মক্কায় আযানের সূচনা হয়।

(হাশিয়াতু ইবনে আবিদিন : ১/৪১৩)

৩।  রাসুল (সা.) মসজিদে নববী নির্মাণের পর প্রথম হিজরিতে মদিনায় আযানের সূচনা হয়। এই মত বেশি প্রসিদ্ধ।

(সহিহ ইবনে খুজায়মা : ১/১৯০)

৪।   দ্বিতীয় হিজরিতে কিবলা পরিবর্তনের পর আযানের সূচনা হয়।

(ফতহুল বারি : ২/৬২)

৫।  আবু উমাইর ইবনে আনাস (রা.) তার এক আনসারি চাচা থেকে বর্ণনা করেন, আজানের বাক্য কী হবে এবং কীভাবে মুসলমানদেরকে আজানের জন্য ডাক দেয়া যায় তা নিয়ে প্রথম দিকে বেশ চিন্তায় ছিলেন রাসুল (সা.)। এ সময় সাহাবিরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কেউ বলেন, নামাজের সময় পতাকা ওড়ানো হোক। কেউ বলেন, শিঙ্গা-ধ্বনি দেয়া হোক। কারোর আবার পরামর্শ ছিল ঘণ্টা বাজানো হোক। তবে এসবের কোনোটিই রাসুল (সা.) এর পছন্দ হলো না।

ওই দিন সেখানে উপস্থিত সাহাবিদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) নামে একজন সাহাবি ছিলেন। বিষটি মাথায় নিয়ে সেনি তিনি বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্বপ্নযোগে আজানের নির্দেশনা পান। পরদিন ভোরে তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি কিছুটা তন্দ্রাছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক আগন্তুক এসে আমাকে আজান ও (ইকামত) শিখিয়ে দিলেন।

বর্ণনাকারী বলেন, একইভাবে ওমর (রা.)ও ২০ দিন আগেই স্বপ্নেযোগে আজান শিখেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কাছে তা ব্যক্ত না করে গোপন রেখেছিলেন। পরে ওই বর্ণনাকারী বিষয়টি বলার পর ওমর (রা.) তা স্বীকার করেন এবং আগে না বলার জন্য রাসুল (সা.) এর কাছে ক্ষমা চান।

এরপর রাসুল (সা.) বললেন, বেলাল! ওঠো, এবং আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ তোমাকে যেরূপ নির্দেশ দেয় তুমি তাই করো। অতঃপর বেলাল (রা.) আজান দিলেন।  (সংক্ষিপ্ত)

(আবু দাউদ হাসান হাদিস : ৪৯৮ ই ফা বা )

আযানের শব্দাবলিই ইকামাতের শব্দ। তবে পার্থক্য হলো: আযানের শব্দগুলো যেখানে দুইবার, ইকামাতের ক্ষেত্রে সেখানে বলবে একবার করে। আনাস (রা) বলেছেন, সাহাবী বেলাল (রা)-কে এভাবেই ইকামত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে কাদ কা-মাতিস্ সলাহ দু’বার বলবে।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫৭৮,৫৭৯,৫৮০ ই ফা বা / ৬০৫,৬০৬,৬০৭ আন্তঃ)

অপরদিকে আযানের মতো এ শব্দগুলো দুইবার বলাও সহীহ হাদিসও রয়েছে।

(আবু দাউদ সহীহ হাদিস- ৫০১)

অপরদিকে আযানের মতো এ শব্দগুলো দুইবার বলাও হাসান হাদিসও  রয়েছে।

(আবু দাঊদ হাসান হাদিস – ৫০২ ই ফা বা )

যার প্রচলন রয়েছে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। তবে উত্তম হলো, ইকামাতের বাক্যগুলো একবার করে বলা। কেননা, এটি বুখারীর হাদীস, দ্বিতীয়ত: বিখ্যাত মুয়াযযিন বেলাল (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (স) এভাবেই নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃতীয়ত: এটা অধিকতর বিশুদ্ধ বিধায় আল্লাহর ঘর মক্কা ও মদীনায় যথাক্রমে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে এভাবেই ইকামাত দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ইকামাত হলো এভাবে:

যে ব্যক্তি আযান শোনে, তার উপর মসজিদে যাওয়া ওয়াজিব-

ক।  কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ), সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক অন্ধ ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার এমন কোন লোক নেই, যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। তারপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিজ ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। লোকটি চলে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি (জামা’আতে) হাযির হবে।

(মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৩৬১ ই ফা বা)

 খ। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি পছন্দ করে যে, আগামীকাল বিচার দিবসে সে মুসলিম হিসাবে আল্লাহ সাক্ষাত লাভ করবে, তার উচিত এই সালাতসমুহের সংরক্ষণ করা, যেখানে সালাতের জন্য আহবান করা হয়। কারণ, আল্লাহ তোমাদের নবীকে হিদায়াতের সকল পথ বাতলে দিয়েছেন। আর এই সমস্ত সালাত হল হিদায়াতের পথ সমুহের অন্যতম। তোমরা যদি এই সকল সালাত ঘরে আদায় কর, যেমন একদল লোক জামাআত ছেড়ে ঘরে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সূন্নাতকে ছেড়ে দিলে। তোমরা যদি নবীর সূন্নাত ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা অবশ্যই গুমরাহ হয়ে যাবে। যে উত্তমরুপে পবিত্র হয়ে এই সকল মসজিদের একটির দিকে অগ্রসর হবে তার প্রত্যেক কদমের জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি গুনাহ মাফ করা হবে। তারপর একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া আর কাউকে জামাআত থেকে বাদ পড়তে আমরা দেখিনি। অনেক লোক দু’ জনের কাঁধে ভর করে হেচঁড়িয়ে হেচঁড়িয়ে মসজিদে আসত এবং তাদের সারিতে দাঁড় করিয়া দেয়া হতো।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৩৬১, ১৩৬২, ১৩৬৩ ই ফা বা )

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

 ইকামতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করা-

আবদুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ) … নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তা’লা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৬৮২ ই ফা বা /৭১৭ আন্তঃ)

কাতার সোজা করার সময় মুকতাদির প্রতি ইমামের ফিরে দেখা-

আহমদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের ইকামত হচ্ছে, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমরা কাতার গুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাড়াও। কেননা, আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৬৮৪ ই ফা বা /৭১৯ আন্তঃ)

আযানের ফযীলত (সহীহ হাদিস) –

ক। আযানের ফযীলত মুয়াযযিনের উত্তর দান

মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মুয়াযযিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড় সম্পন্ন লোক হবে।

(মিশকাত সহীহ হাদিস – ৬৫৪ মুসলিম সহীহ হাদিস -৭৩৮ ই ফা বা / ৩৮৭ আন্তঃ , ইবনু মাজাহ্ সহীহ হাদিস – ৭২৫)

খ। আযানের ফযীলাত ও মুয়ায্যিনদের সাওয়াব-

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি বারো বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়।

(ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস – ৭২৮, মিশকাত সহীহ হাদিস – ৬৭৮)

আযানের ফযীলত (যঈফ  হাদিস)-

গ। আযানের ফযীলত –

মুহাম্মদ ইবনু হুমায়দ আর রাযী (রহঃ) …. ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যাক্তি ছাওয়াবের আশায় সাত বছর আযান দিবে তাঁর জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির সদন লিখে দেওয়া হবে।

(মুসলিম যঈফ হাদিস – ২০৬  ই ফা বা)

 

আযান – এর শব্দ গুলো

اللهُ أَكْبَرُ – اللهُ أَكْبَرُ

اللهُ أَكْبَرُ – اللهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ

أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ

حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ

اللهُ أَكْبَرُ – اللهُ أَكْبَرُ

لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ

ফজরের নামাযের আযানের সময় দুবার –

 আচ্ছলাতু খইরুম মিনান্নাওম  – আচ্ছলাতু খইরুম মিনান্নাওম

اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ

اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ

আযান এর বাংলা অর্থ –

আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ  –  আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ

আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ  –  আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ  ছাড়া কোন ইলাহ নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ  ছাড়া কোন ইলাহ নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল

ছলাতের জন্য এসো

ছলাতের জন্য এসো

কল্যাণের জন্য এসো

কল্যাণের জন্য এসো

আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ – আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই

ফজরের আযানে নিম্নবর্নিত ২টি বাক্য বেশি ব্যবহৃত হয় –

ঘুম থেকে ছলাত উত্তম

ঘুম থেকে ছলাত উত্তম

 ইকামাত এর শব্দ গুলো –

  • আল্লা-হু আকবার – আল্লা-হু আকবার (২ বার)
  • আশহাদু আল্ লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ (১ বার )
  • আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (১ বার )
  • হাইয়্যা আলাস্ সলা-হ (১ বার )
  • হাইয়্যা আলাল ফালা-হ (১ বার )
  • কাদ কা-মাতিস্ সলাহ  (২ বার)
  • আল্লা-হু আকবার – আল্লা-হু আকবার (২ বার)
  • লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (১ বার )

 ইকামত এর উচ্চারণ আরবি –

اللهُ أَكْبَرُ – اللهُ أَكْبَرُ

أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ

حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ

قد قامت الصلاةُ

قد قامت الصلاةُ

اللهُ أَكْبَرُ – اللهُ أَكْبَرُ

لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ

ইকামত এর বাংলা অর্থ –

আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ  –  আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ  ছাড়া কোন ইলাহ নেই

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল

ছলাতের জন্য এসো

কল্যাণের জন্য এসো

নামাজ আরম্ভ বা শুরু  হলো

আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ – আল্লাহ সর্ব শ্রেষ্ঠ

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

Leave a Reply