Skip to content

পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময় I Daily five time namaz

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Table of Contents

পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময় ?

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন –    اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ   পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

 

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন :

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

অর্থ – তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।

( সূরা আন-কাবুত আয়াত:  ৪৫)

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন :

فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

অর্থ – অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।

( সূরা আন-নিসা আয়াত- ১০৩ )

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন :

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

অর্থ – অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

( সূরা আল-আহযাব আয়াত- ২১ )

 

সলাতের সময় বা ওয়াক্ত :

পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা যেভাবে এসেছে :

সমাজে  কিছু লোক না বুঝে  বলে থাকেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের ব্যাপারে কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই বা  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়। অথচ, প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা মিরাজের রাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত করে উম্মতের জন্য উপহারস্বরূপ দান করেছেন। আর মানুষের জন্য প্রতি দিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক।

নামাজের এই ৫ টি ওয়াক্তও পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।  দিন এবং রাতের যেই যেই সময়গুলোতে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে তারও নির্দেশনা এসেছে কুরআনুল কারিমে।

হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত , জিবরীল (আলাইহিস সালাম)  যখন  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন হে মুহাম্মদ! আপনি দাঁড়ান যুহরের সালাত আদায় করুন , এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়ে  এসে এসে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত আদায়ের কথা বলতেন এবং জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নিজেই ইমামতি করতেন

(আন- নাসাঈ সহীহ হাদিস -৫১৪,৫২৭ ই ফা বা , তিরমিজী সহীহ হাদিস – ১৫০ ই ফা বা)

 

সালাত দু’ধরণের: ফরয ও নফল সালাত। ফরয সালাত আবার দু’প্রকার: ফরযে আইন ও ফরযে কিফায়া। ফরযে আইন সালাত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়ষ্ক মুসলিম নর-নারীর পর ফরয। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরযে আইন।

 

আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا

অর্থ – নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।

( সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০৩)

وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ

অর্থ –  আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হলো সঠিক দীন।

( সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫ )

 

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

“ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের ওপর। আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ”।

নাফে‘ ইবন আযরাক ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কুরআনে পেয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পেয়েছি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন,

فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ      ۝     وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ

অর্থ – সুতরাং, তোমরা আল্লাহর তাসবিহ তথা পবিত্রতা ঘোষনা কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে।

আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।’

( সুরা রূম আয়াত: ১৭-১৮ )

 

আল্লাহ তাআলা সুরা রূমের উল্লেখিত দু’টি আয়াতে তাসবিহ বলতে নামাজ পড়াকে বুঝিয়েছেন। এ আয়াতদ্বয়ে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তাহলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ের কথা।

প্রথম আয়াতে ‘তুমসুনা’ (সন্ধ্যা) শব্দ দ্বারা মাগরিব ও ইশা, ‘তুসবিহুন’ (সকাল) শব্দ দ্বারা ফজর নামাজকে বুঝিয়েছেন। আর দ্বিতীয় আয়াতে ‘আশিয়ান’ (বিকাল/অপরাহ্ন) শব্দ দ্বারা আসর নামাজ এবং ‘তুজাহিরুন’ (দুপুর) শব্দ দ্বারা জোহর নামাজের সময়ের উল্লেখ করেছেন।

ফাতহুল কাদির, আহসানুল বয়ান

আল্লাহ তায়ালা অন্য আরেকটি সুরাতেও এই এশারের সালাতের ওয়াক্তের কথা উল্লেখ করেন :

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِیَسۡتَاۡذِنۡکُمُ الَّذِیۡنَ مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ وَ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَبۡلُغُوا الۡحُلُمَ مِنۡکُمۡ ثَلٰثَ مَرّٰتٍ ؕ مِنۡ قَبۡلِ صَلٰوۃِ الۡفَجۡرِ وَ حِیۡنَ تَضَعُوۡنَ ثِیَابَکُمۡ مِّنَ الظَّهِیۡرَۃِ وَ مِنۡۢ بَعۡدِ صَلٰوۃِ الۡعِشَآءِ ۟ؕ ثَلٰثُ عَوۡرٰتٍ لَّکُمۡ ؕ لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ وَ لَا عَلَیۡهِمۡ جُنَاحٌۢ بَعۡدَهُنَّ ؕ طَوّٰفُوۡنَ عَلَیۡکُمۡ بَعۡضُکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাসদাসীগণ আর তোমাদের যারা বয়:প্রাপ্ত হয়নি তারা যেন ( তোমাদের কাছে আসতে ) তোমাদের অনুমতি গ্রহণ করে তিন সময়ে- ফাজর নামাযের পূর্বে, আর যখন দুপুরে রোদের প্রচন্ডতায় তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ আর ‘ইশার নামাযের পর। এ তিনটি তোমাদের পোশাকহীন হওয়ার সময়। এ সময়গুলো ছাড়া অন্য সময়ে (প্রবেশ করলে) তোমাদের উপর আর তাদের উপর কোন দোষ নেই। তোমাদের এককে অন্যের কাছে ঘুরাফিরা করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্দেশ খুবই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, বড়ই হিকমতওয়ালা। তাইসিরুল

 

তাফসীরে আহসানুল বায়ান :
[1] দাস বলতে দাস-দাসী উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। ثلاث مرَّات (তিনবার) বলতে ‘তিন সময়’ উদ্দেশ্য। এই তিন সময় এমন যে, মানুষ কক্ষে (রুমের ভিতর) নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেমকেলিতে লিপ্ত অথবা এমন পোশাকে থাকতে পারে যে পোশাকে অন্য কারো দেখা বৈধ বা উচিত নয়। সেই কারণে সেই তিন সময়ে ঘরের দাস-দাসীদের জন্য এ কথার অনুমতি নেই যে, তারা বিনা অনুমতিতে মালিকের রুমে প্রবেশ করবে।

[2] عَورَات শব্দটি عَورَة শব্দের বহুবচন। যার আসল অর্থ কমি ও ত্রুটি। অতঃপর এর ব্যবহার এমন জিনিসের উপর হতে শুরু করে, যার প্রকাশ করা ও দেখা পছন্দনীয় নয়। মহিলাকে সেই জন্য ‘আওরাত’ বলা হয়। কারণ তার প্রকাশ ও নগ্ন হওয়া এবং তাকে দেখা শরীয়তে অপছন্দনীয়। এখানে উক্ত তিন সময়কে عَورَات (পর্দার সময়) বলা হয়েছে। অর্থাৎ, এ সময়গুলি তোমাদের নিজেদের পর্দা ও গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়; যাতে তোমরা তোমাদের বিশেষ পোশাক ও অবস্থাকে (স্ত্রী ছাড়া অন্যের কাছে) প্রকাশ করতে অপছন্দ করে থাক।

[3] উক্ত তিন সময় ছাড়া ঘরের দাস-দাসীদের রুমে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; তারা বিনা অনুমতিতে আসা-যাওয়া করতে পারে।

[4] এটি সেই কারণ, যে কারণে হাদীসে বিড়ালের পবিত্র হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘বিড়াল অপবিত্র নয়; কারণ যারা অধিকাধিক তোমাদের কাছেই ঘোরা-ফেরা করে থাকে, সে তাদের মধ্যে একজন।’’ (আবু দাউদঃ পবিত্রতা অধ্যায়, তিরমিযী) ক্রীতদাস-দাসী ও মালিক এক অপরের মধ্যে সব সময় দেখা সাক্ষাতের প্রয়োজন হয়। আর এই ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার খাতিরেই মহান আল্লাহ উক্ত অনুমতি প্রদান করেছেন। যেহেতু তিনি সর্বজ্ঞ, মানুষের প্রয়োজন ও সুবিধা-অসুবিধা জানেন। তিনি প্রজ্ঞাময়, তাঁর প্রতিটি আদেশের পশ্চাতে উপকার ও যুক্তি রয়েছে।

( সূরা আন-নূর আয়াত : ৫৮ )

 

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন :

فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِهَا ۚ وَ مِنۡ اٰنَآیِٔ الَّیۡلِ فَسَبِّحۡ وَ اَطۡرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّکَ تَرۡضٰی

অর্থঃ সুতরাং এরা যা বলে তার উপর ধৈর্য ধারণ কর এবং তাসবীহ পাঠ কর তোমার রবের প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমে, সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং তাসবীহ পাঠ কর রাতের কিছু অংশে ও দিনের প্রান্তসমূহে, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার ।

তাফসীর আল-বায়ান :

কোন কোন মুফাসসিরগণের মতে তসবীহ (প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা) বলতে নামায এবং এ আয়াত হতে পাঁচ অক্তের নামাযকে বুঝানো হয়েছে। সূর্য উঠার আগে ফজরের নামায, সূর্য ডোবার আগে আসরের নামায, ‘রাত্রিকালে’ বলতে মাগরিব ও এশার নামায এবং ‘দিনের প্রান্তভাগসমূহ’ বলতে যোহরের নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কেননা যোহরের সময় দিনের প্রথম ভাগের শেষ প্রান্ত এবং দিনের শেষ ভাগের প্রথম প্রান্ত। আর কিছু উলামার মতে, এই সময় গুলোতে সাধারণভাবে আল্লাহর মহিমা তথা প্রশংসা বর্ণনার কথা বলা হয়েছে; যার মধ্যে নামায, কুরআন পাঠ, যিকর, দু’আ ও নফল ইবাদত সবই শামিল। অর্থ এই যে, তুমি মক্কার মুশরিকদের মিথ্যা ভাবার কারণে অধৈর্য ও মনঃক্ষু­ণ্ণ হবে না; বরং আল্লাহর মহিমা ও প্রশংসা বর্ণনা করতে থাকো। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করবেন তাদেরকে পাকড়াও করবেন।

(সূরা ত্বহা আয়াত -১৩০)

মহান আল্লাহ-তায়ালা বলেন :

وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَهۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ

অর্থঃ আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

তাফসীর তাফসীরে জাকারিয়া :

স্মরণ করা অর্থ নামাযও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনভাবেই তা হোক না কেন। সকাল-সাঁঝ বলতে সুনির্দিষ্টভাবে এ দুটি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দু’ সময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে সকালের ও বিকালের নামাযকে। [তাবারী] অনুরূপ অর্থে অপর সূরায় এসেছে, “এবং আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে।” [সূরা কাফ: ৩৯] পক্ষান্তরে সকাল-সাঁঝ কথাটা “সর্বক্ষণ” অর্থেও ব্যবহৃত হয়। [কাশশাফ] এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসংগে বলা হয়েছে, তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায়, আল্লাহ তার রব, সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ার জীবন শেষ হবার পর তাকে তার রবের কাছে হিসাব দিতে হবে।

( সূরা আল-আরাফ আয়াত : ২০৫)

 

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন :

فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ الۡغُرُوۡبِ

অর্থঃ অতএব এরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং সূর্য উদয়ের পূর্বে ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে তুমি তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ কর।

তাফসীরে আল-বায়ান :

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার তসবীহ (পবিত্ৰতা বর্ণনা) করা। মুখে হোক কিংবা সালাতের মাধ্যমে হোক। এ কারণেই কেউ কেউ বলেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে তসবিহ করার অর্থ ফজরের সালাত এবং সূর্যাস্তের পূর্বে তসবীহ করার মানে আছরের সালাত। [ফাতহুল কাদীর] এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চেষ্টা কর, যাতে তোমার সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সালাতগুলো ছুটে না যায়, অর্থাৎ, ফজর ও আছরের সালাত। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন ৷ [ বুখারী ৫৭৩ ]

তাছাড়া সে সব তসবিহও আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো সকাল-বিকাল পাঠ করার প্রতি সহীহ হাদীসসমূহে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশত বার করে ‘সোবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি’ পাঠ করে, তার গোনাহ ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের তরঙ্গ অপেক্ষাও বেশি হয়। [ মুয়াত্তা ৪৩৮, বুখারী ৫৯২৬, মুসলিম ৪৮৫৭ ]

( সূরা কাফ আয়াত : ৩৯)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers …………..

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সকল গুনাহের কাফফারা সরুপ – 

১। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … হুমরান ইবনু আবান থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, কোন মুসলিম যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করেছেন তা পূর্ণাঙ্গরুপে অর্জন করে এবং তারপর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তাহলে এ সকল সালাত তাদের মধ্যবর্তী সময়ের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।

(মুসলিম সহীহ হাদিস – ৪৩৯ ই ফা বা /২৩১ আন্তঃ)

২। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে?” তারা বললেন, তার দেহে কোনরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫০৩ ই ফা বা /৫২৮ আন্তঃ)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আ থেকে আরেক জুমু’আ এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান কাফফারা সরুপ

আবূ তাহির ও হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ), এক জুমূআ থেকে আরেক জুমুআ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এইসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।

(মুসলিম সহীহ হাদিস – ৪৪৫ ই ফা বা /২৩৩ আন্তঃ)

নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা –

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) …. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হল, সালাত (নামায/নামাজ)ও কি? তিনি বললেন, সে ক্ষেত্রেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি?

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫০৪ ই ফা বা /৫২৯ আন্তঃ)

ফজরের আযান এবং ফজরের সালাতের সময় প্রসঙ্গে –

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে আদেশ করলেন। বিলাল (রাঃ) প্রভাত হওয়ার (সুবেহে সাদিকের প্রারম্ভে) সাথে সাথে আযান দিলেন। পরবর্তী দিন ভোর ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ফজরের সালাতে বিলম্ব করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে ইকামত বলার নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাঃ) ইকামত দিলেন এবং সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ এটাই ফজরের সালাতের সময়।

( আন -নাসায়ী  সহীহ হাদিস – ৬৪৩ ই ফা বা )

যুহরের সলাতের ওয়াক্তের সময় –

১। যুহরের সময় হয় সূর্য ঢলে পড়ার পর-

وَقَالَ جَابِرٌ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِالْهَاجِرَةِ.

জাবির (রাযি.) বলেন, দুপুরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতেন।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্য ঢলে পড়লে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন………………।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫১৩ ইফা বা / ৫৪০ আন্তঃ)

২।  প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা-

আয়্যূব ইবনু সুলাইমান (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫০৮ ইফা বা / ৫৩৩-৩৪ আন্তঃ)

৩।  যোহরের নামাযের শেষ সময়-

আবূ আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আযরামী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গ্রীষ্মকালে যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন কোন ব্যাক্তির ছায়া তিন হতে পাঁচ কদমের মধ্যে হতো এবং শীতকালে ছায়া যখন পাঁচ হতে সাত কদমের মধ্যে হতো।

(সুনান আন নাসাঈ  সহীহ হাদিস – ৫০৪ ইফা বা )

৪। ঠাণ্ডার মধ্যে যোহরের নামায তাড়াতাড়ি পড়া-

উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … খালিদ ইবনু দ্বীনার খালদাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরমের সময় (যোহরের সালাত) বিলম্বে এবং ঠাণ্ডার সময় তাড়াতাড়ি আদায় করতেন।

( আন-নাসায়ী সহীহ হাদিস -৫০০ ই ফা বা, বুখারী সহীহ হাদিস – ৮৬০ ই ফা বা /৯০৬ আন্তঃ )

৫।  যোহরের নামাযের শেষ সময়-

আবূ আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আযরামী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গ্রীষ্মকালে যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন কোন ব্যাক্তির ছায়া তিন হতে পাঁচ কদমের মধ্যে হতো এবং শীতকালে ছায়া যখন পাঁচ হতে সাত কদমের মধ্যে হতো।

( আন-নাসায়ী সহীহ হাদিস -৫০৪ ই ফা বা )

আসরের সালাতের ওয়াক্তের সময় –

কুতাইবা (রহঃ) …. আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন যে, সূর্যেরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েনি।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫১৮ ইফা বা / ৫৪৫ আন্তঃ)

আসরের সালাতের  শেষ সময়-

আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। শু’বা (রহঃ) বলেন, কাতাদা (রাঃ) এই হাদিস কখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু’ রূপে বর্ণনা করেন, কখনও এরূপ বর্ণনা করেন না। তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)] বলেনঃ যোহরের শেষ সময় যতক্ষণ পর্যন্ত আসর উপস্থিত না হয়, আর আসরের সময় যতক্ষণ পর্যন্ত সুর্য হলুদ বর্ণ না হয় এবং মাগরিবের শেষ সময় যতক্ষণ পর্যন্ত শাফাক অদৃশ্য না হয়। ইশার শেষ সময় অর্ধ রাত্রের পূর্ব পর্যন্ত এবং ফজরের শেষ সময় সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

( আন-নাসায়ী সহীহ হাদিস -৫২৩ ই ফা বা )

আসরের নামায বিলম্বে আদায়ের ব্যাপারে সাবধান বানী –

আলী ইবনু হুজর (রহঃ) … আ’লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যোহরের সালাত আদায় করার পর আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর বসরায় অবস্থিত বাসস্থানে গেলেন। তাঁর বাড়ি মসজিদের পার্শ্বেই ছিল। আ’লা (রহঃ) বলেন, যখন আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আসরের সালাত আদায় করেছ? আমরা বললাম, না। আমরা তো এইমাত্র যোহরের সালাত আদায় করলাম। তিনি বললেন, এখন আসরের সালাত আদায় কর।

আ’লা বলেন, আমরা তত্ক্ষনাত সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এটা মুনাফিকের সালাত যে, বসে সালাতের অপেক্ষারত থাকে, তারপর সুর্য যখন শয়তানের দুই শিং-এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে (সূর্যাস্তের সময় নিকটবর্তী হয়ে যায়) তখন (তাড়াহুড়া করে মোরগের মত) চারটি ঠোকর মারে এবং তাতে আল্লাহ তা’আলার স্মরণ সামান্যই করে।

( আন -নাসায়ী  সহীহ হাদিস – ৫১২ ই ফা বা )

মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত –

মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত। আতা রহঃ বলেন, রুগ্ন ব্যাক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতে পারে।

মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) …. মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) বলেন, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ) (মদিনায়) এলে আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন)। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) প্রচন্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর আসরের সালাত সূর্য উজ্জল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সবাই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫৩৩ ইফা বা / ৫৬০ আন্তঃ)

মাগরিবের নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা-

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ বিশর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাসসান ইবনু বিলাল (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরদের মধ্য থেকে আসলাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। তারপর মদিনার প্রান্তরে নিজ নিজ পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতেন। এমতবস্থায় তারা তীর নিক্ষেপ করতেন এবং তারা তীর পতনের স্থান দেখতে পেতেন। (অর্থাত রাত্র অন্ধকার হওয়ার পূর্বেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন )।

( আন-নাসায়ী সহীহ হাদিস -৫২১ ই ফা বা )

মাগরিবের সালাতের শেষ সময়-

আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। শু’বা (রহঃ) বলেন, কাতাদা (রাঃ) এই হাদিস কখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু’ রূপে বর্ণনা করেন, কখনও এরূপ বর্ণনা করেন না। তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)] বলেনঃ যোহরের শেষ সময় যতক্ষণ পর্যন্ত আসর উপস্থিত না হয়, আর আসরের সময় যতক্ষণ পর্যন্ত সুর্য হলুদ বর্ণ না হয় এবং মাগরিবের শেষ সময় যতক্ষণ পর্যন্ত শাফাক অদৃশ্য না হয়। ইশার শেষ সময় অর্ধ রাত্রের পূর্ব পর্যন্ত এবং ফজরের শেষ সময় সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

( আন-নাসায়ী সহীহ হাদিস -৫২৩ ই ফা বা )

মাগরিবের নামাযের পর ঘুমানো মাকরূহ এবং ইশার সালাতের পর কথা বলা মাকরূহ 

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … সাইয়ার ইবনু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযাহ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমার পিতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ফরজ সালাত আদায় করতেন, এ সমন্ধে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ সুর্য ঢলে পড়লে যোহরের সালাত আদায় করতেন যাকে তোমরা প্রথম সালাত বল। তিনি এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, সালাত আদায় করে কেউ মদিনার এক প্রান্তে নিজ অবস্থানে আসতে পারত এবং তখনও সুর্য করোজ্জ্বল থাকত।

বর্ণনাকারী সাইয়ার (রাঃ) বলেনঃ মাগরিব সমন্ধে কি বলেছিলেন তা আমি ভুলে গেয়েছি। ইশার সালাত যাকে তোমরা ’আতামা’ বল, বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। ’ইশার পূর্বে ঘুমানো ও ইশার পর কথা বলাকে মকরূহ জানতেন। আর ফজরের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরতেন যে, তখন যে কেউ তার পার্শ্ববর্তী লোককে চিনতে পারত। আর এ সালাতে ষাট আয়াত থেকে একশত আয়াত পাঠ করতেন।

( আন -নাসায়ী  সহীহ হাদিস – ৫২৬ ই ফা বা )

রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত-

وَقَالَ أَبُو بَرْزَةَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَحِبُّ تَأْخِيرَهَا

আবু বারযা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত দেরীতে আদায় করা পছন্দ করতেন।

আবদুর রহীম মুহারিবী (রহঃ) …. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিলম্ব করলেন। তারপর সালাত আদায় করে তিনি বললেনঃ লোকেরা নিশ্চয়ই সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শোন! তোমরা যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষণ তোমরা সালাতেই ছিলে। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ)-এর বর্ণনায় আরও আছে, তিনি বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (হুমাইদ) আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, সে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটির উজ্জলতা আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৫৪৪ ইফা বা/ ৫৭২ আন্তঃ )

ইশার নামায তাড়াতাড়ি পড়া –

আমর ইবনু আলী ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত সময়ের শুরুতে আদায় করতেন। আসরের সালাত সুর্য উজ্জ্বল থাকতেই আদায় করে নিতেন। সূর্যাস্তের পরেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। ইশার সালাত কখনও লোক একত্র হলে তাড়াতাড়ি আদায় করতেন আবার কখনও লোক জমায়েত দেরিতে হলে বিলম্বে আদায় করতেন।

( আন -নাসায়ী  সহীহ হাদিস – ৫২৮ ই ফা বা )

ফরয সলাতে কিরআত স্বশব্দে এবং নীরবে পাঠ করা ?

ফজরের ” ফরয ” সালাতে স্বশব্দে কিরাআত পাঠ করা –

মুসা’দ্দাদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে কিরাআত পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করতে থাকতে নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। (আল্লাহ্ তা’আলার বাণী) “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ।”

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৩৬,৭৩৭,৭৩৮  ই ফা বা /৭৭২,৭৭৩,৭৭৪ আন্তঃ, মুসলিম সহীহ হাদিস – ৮৯০ ই ফা বা/ ৪৪৯ আন্তঃ )

মাগরিবের সালাতে স্বশব্দে  কিরাআত পাঠ করা –

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মুল ফাযল (রাঃ) তাঁকে  وَالْمُرْسَلاَتِ عُرْفًا সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, বেটা! তুমি এ সূরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে এ সূরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনেছিলাম।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৭২৭, ৭২৮, ৭২৯ ই ফা বা /৭৬৩, ৭৬৪, ৭৬৫ আন্তঃ, মুসলিম সহীহ হাদিস – ৯১৯ ই ফা বা এ/ ৪৬৩ আন্তঃ )

ইশার সালাতে সশব্দে কিরাআত পাঠ করা –

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … আদী (ইবনু সাবিত) (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারাআ (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম দু’রাকাআতের এক রাকাআতে সূরা والتين والزيتون পাঠ করেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৩৩ ই ফা বা / ৭৬৯ আন্তঃ, মুসলিম সহীহ হাদিস – ৯২১ ই ফা বা/ ৪৬৪ আন্তঃ)

*** সমাজে মসজিদ ও মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, যুলুম-নির্যাতন, রাহাজানি কমছে না। অথচ আল্লাহ তাআলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা হল, ‘নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে’

(সূরা আনকাবূত ৪৫)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers …………..

যুহরে ও আসরের সালাতে নিঃশব্দে কিরাআত পড়া –

আবূ মা’মার(রহঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কি করে বুঝলেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি মুবারক নড়াচড়া দেখে।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৭১০ ,৭২৪, ৭২৫,৭৪১ ই ফা বা / ৭৪৬, ৭৬০, ৭৬১, ৭৭৭ আন্তঃ)

তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন আল্লাহ্ তার সামনে থাকেন –

কুতাইবা (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে তা পরিস্কার করে ফেললেন। তারপর তিনি সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন আল্লাহ্ তার সামনে থাকেন। কাজেই সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। মূসা ইবনু ইকবা ও ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ৭১৭, ১১৪০ ই ফা বা /৭৫৩, ১২১৩ আন্তঃ)

সর্বোত্তম মুসলিম কে ?

আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ আল মিসরী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম মুসলিম কে? তিনি বললেনঃ সেই ব্যাক্তি যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে।

(মুসলিম  সহীহ হাদিস – ৬৮ ইফা বা / ৪০ আন্তঃ)

 

তাওফিক প্রার্থনা করছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকটে –

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা সৃষ্টিকারীদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইবাদতে মগ্ন হওয়ার তাওফিক দান করুন। তাদের পেতে রাখা ঈমান বিধ্বংসী আকর্ষনীয় ও লোভনীয় বহুমাত্রিক রঙিন ফাঁদে পা না দিয়ে এবং সকল বিভ্রান্তির হাত থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে যথাসময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।

আমিন

Leave a Reply