Skip to content

নামাজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত সমূহ I Farz wajib sunnah

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

নামাজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত সমূহ ?

নামাজের ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাত-

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

নামাযের ফরজ সমুহ –

সালাত বা নামাজের ফরজ বা রুকন ১৬টি। যার মধ্যে ৯টি ফরজ নামাজের বাইরে এবং ৭টি ফরজ নামাজের ভেতরে। এগুলি নামাজের অপরিহার্য বিষয়। যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়।

নামাজের বাইরে ৯টি ফরজ কয়টি –

নামাজের বাইরে ৯টি ফরজ, যেগুলিকে বলা হয় নামাজের আহকাম বা শর্ত। যা হলো-

(১) মুসলিম হওয়া (আলে ইমরান ৩/৮৫; তাওবা ৯/১৭)

(২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৩২৮৭)

(৩) বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া ও সেজন্য সাত বছর বয়স থেকেই নামাজ আদায় শুরু করা (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭২)

(৪) দেহ, কাপড় ও স্থান পাক হওয়া (মায়েদা ৫/৬, আরাফ ৭/৩১, মুদ্দাসসির ৭৪/৪; মুসলিম মিশকাত হা/২৭৬০ ক্রয় বিক্রয়’ অধ্যায়, ১ অনুচ্ছেদ; আবু দাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৭৩৭, ৭৩৯, অনুচ্ছেদ-৭)

(৫) সতর ঢাকা। ছালাতের সময় পুরুষের জন্য দুই কাঁধ ও নাভি হতে হাটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর হিসেবে ঢাকা। (মিশকাত হা/৭৫৫, সূরা নূর ২৪/৩১)

(৬) ওয়াক্ত হওয়া (নিসা ৪/১০৩)

(৭) ওযু-গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা (মায়েদা ৬)

(৮) কিবলামুখী হওয়া (বাক্বারাহ ২/১৪৪)

(৯) সালাতের নিয়ত বা সংকল্প করা (বুখারী ও মিশকাতের প্রথম হাদীস)

নামাজের ভিতরে ৭টি ফরজ –

নামাজের ভেতরে ৭টি ফরজ, যেগুলিকে বলা হয় নামাজের আরকান বা স্তম্ভ। যা হলো-

(১) কিয়াম বা দাঁড়ানো

আল্লাহ বলেন, আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ চিত্তে দাঁড়িয়ে যাও। (বাক্বারা ২/২৩৮)

(২) তাকবীরে তাহরীমা

অর্থাৎ আল্লাহু আকবর বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও। (মুদ্দাসসির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, সালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে।

(আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২)

(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না।

(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)

(৪) রুকু করা

আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর ও সিজদা কর।

(হজ্জ ২২/৭৭)

(৫) সিজদা করা

আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর ও সিজদা কর।

(হজ্জ ২২/৭৭)

(৬) তাদীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে নামাজ আদায় করা

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে লোকটি তিনবার সালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি সালাত আদায় করতে জানিনা। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন! (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)।

(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০, ‘সালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০)

(৭) কাদায়ে আখিরাহ বা শেষ বৈঠক

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ জামাতে ফরজ নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূল (ছাঃ) ও পুরুষ মুসল্লিগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়াতেন তখন তারাও দাঁড়াতেন।

(বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ তাশাহুদে দোয়া অনুচ্ছেদ-১৭)

এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানােটাই ছিল রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত। প্রকাশ থাকে যে, কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হলে বসে বা শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করবে। (বুখারী; মিশকাত হা/১২৪৮)। কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় নামাজ মাফ নেই।

 নামাজের ওয়াজিব ১৪টি –

১. প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহা পূর্ণ পড়া।

(বুখারি ১/১০৪, হাদিস : ৭৫৬)

২.  প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ মেলানো।

(বুখারি ১/১০৫, হাদিস : ৭৭৬, মুসলিম ১/১৮৫,   হাদিস : ৪৫১)

৩. ফরজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা।

(বুখারি ১/১০৫, হাদিস : ৭৭৬, মুসলিম ১/১৮৫,  হাদিস : ৪৫১)

৪. সুরা ফাতিহা অন্য সুরার আগে পড়া।

(বুখারি ১/১০২, ১০৩, হাদিস : ৭৪৩, মুসলিম ১/১৯৪, হাদিস : ৪৯৮, তিরমিজি, হাদিস : ১/৫৭, হাদিস : ২৪৬ সহিহ)

৫. নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা (অর্থাৎ রুকু, সিজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ দেরি করা)।

(বুখারি ১/১০৯, হাদিস : ৭৯৩, মুসলিম ১/১৭০, হাদিস : ৩৯৭, আবু দাউদ ১/১২৪, ১২৪, হাদিস : ৮৫৬, ৮৫৭, ৮৫৮)

৬. প্রথম বৈঠক করা (অর্থাৎ তিন অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বসা)।

(বুখারি ১/১১৪, হাদিস : ৮২৮)

৭. উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।

(বুখারি ১/১১৫, হাদিস : ৮৩০, ৮৩১, মুসলিম ১/১৯৪, ১৭৩, হাদিস : ৪৯৮, ৪০২, ৪০৩, তিরমিজি ১/৮৯, হাদিস : ৩৯১)

৮. প্রতি রাকাতের ফরজ ও ওয়াজিবগুলোর তারতিব বা ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা।

(বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩)

৯. ফরজ ও ওয়াজিবগুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করা। (যেমন—দ্বিতীয় সিজদা প্রথম সিজদার সঙ্গে করা। প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু শেষ করে তত্ক্ষণাৎ তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

(বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩)

১০. বিতর নামাজে তৃতীয় রাকাতে কিরাতের পর কোনো দোয়া পড়া। অবশ্য দোয়া কুনুত পড়লে ওয়াজিবের সঙ্গে সুন্নতও আদায় হয়ে যাবে।

(বুখারি ১/১৩৬, হাদিস : ১০০২, তিরমিজি ১/১০৬, হাদিস : ৪৬৪১ হাসান, ইবনে মাজাহ ১/৮৩, হাদিস : ১১৮২)

১১. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা।

(আবু দাউদ ১/১৬৩, হাদিস : ১১৫৩ হাসান, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪১৬, হাদিস : ১৯৭৩৪ হাসান, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ২/১৭২, হাদিস : ৫৬৯৪ হাসান, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/২৯৩, হাদিস : ৫৬৮৬)

১২. দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় ভিন্নভাবে তাকবির বলা।

(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ১/৪৯৫, হাদিস : ৫৭০৭ সহিহ, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/২৯৩ হাদিস : ৫৬৮৬ সহিহ, তাহাবি ৪/৩৪৮, হাদিস : ১৬৭৪)

(এই তাকবিরটি অন্যান্য নামাজে সুন্নত)

১৩. ইমামের জন্য জোহর, আসর এবং দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আস্তে পড়া। আর ফজর, মাগরিব, এশা, জুমা, দুই ঈদ, তারাবি ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত শব্দ করে পড়া।

(মুসলিম ১/২৯১, হাদিস : ২৫৯, নাসায়ি ১/১১২, হাদিস : ৯৭০ সহিহ, তিরমিজি ১/১০৬)

মনে রাখতে হবে, আস্তে পড়ার অর্থ মনে মনে পড়া নয়। কেননা এতে নামাজ শুদ্ধ হয় না; বরং আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরি)।

১৪. সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।

(বুখারি ১/১১৫, হাদিস : ৮৩৭)

বি. দ্র.: উল্লিখিত ওয়াজিবগুলো থেকে কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।

নামাজের সুন্নাত সমূহ –

১। আজান ও ইকামত বলা।

২। তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত উঠানো।

৩। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক রাখা।

৪। ইমামের জন্য তাকবীর গুলি উচ্চ স্বরে বলা।

৫। সানা পড়া।

৬। আউযুবিল্লাহ পড়া।

৭। বিসমিল্লাহ পড়া।

৮। অনুচ্চস্বরে আমীন বলা।

৯। সানা,আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ,আমীন অনুচ্চস্বরে বলা।

১০। হাত বাধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।

১১। পুরুষের জন্য নাভির নিচে,আর মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা।

১২। এক রোকন থেকে অন্য রোকনে যাবার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা।

১৩। একাকী নামাজ পাঠকারির জন্য রুকু থেকে উঠার সময় “সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা” ও “রব্বানা লাকাল হামদ” বলা।

১৪। রুকুতে “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” বলা।

১৫। সেজদায় বলা “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা”।

১৬। রুকুতে উভয় হাটু আকড়ে ধরা।

১৭। রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা। আর মহিলার জন্য মিলিয়ে রাখা।

১৮। পুরুষের জন্য নামজে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখে আঙ্গুলগুলো কেব্লার দিক করে রাখা। আর মহিলার জন্য উভয় পা ডান দিকে বের করে জমিনের উপর বসা।

১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদের পর দুরুদ শরীফ পড়া।

২০। দুরুদের পর দোয়া পড়া।

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

Leave a Reply