Skip to content

কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাতের নামাজ I Night namaz/salat

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Table of Contents

কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাতের নামাজ ?

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন – اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী –

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন –

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

অর্থ – তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।

( সূরা আন-কাবুত আয়াত- ৪৫)

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন –

فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

অর্থ – অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।

( সূরা আন-নিসা আয়াত- ১০৩ )

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন –

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

অর্থ – অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

কিয়ামতের দিন বান্দার সর্ব প্রথম হিসাব হবে সালাতের –

আলী ইবনু নাসর ইবনু আলী আল-জাহযামী (রহঃ)-হুরায়স ইবনু কাবীসা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ আমি একবার মদীনায় এলাম। দু’আ করলামঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য একজন নেক সঙ্গী লাভ সহজ করে দাও। পরে আমি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকটে গিয়ে বসলাম। বললামঃ একজন নেক সঙ্গী জুটিয়ে দিতে আমি আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিলাম। মেহেরবানী করে আপনি আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস শুনেছেন তা আমাকে শুনান। হয়ত আল্লাহ তা’আলা এর মাধ্যমে আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্ব প্রথম হিসাব নেওয়া হবে সালাতের। যদি তা সঠিক বলে গণ্য হয়, তবে সে হবে কল্যাণপ্রাপ্ত ও সফলকাম। আর যদি তা সঠিক বলে গণ্য না হয়, তবে সে হবে অসফল ও ক্ষতিগ্রস্ত। ফরযের মধ্যে যদি কোন ক্রটি দেখা যায়, তবে মহান প্রভু বলবেনঃ লক্ষ্য কর, আমার বান্দার কোন নফল আমল আছে কি? তা দিয়ে তার ফরযের যতটুকু ক্রটি আছে তা পূরণ করে দাও। পরে এতদনুসারেই হবে অন্যান্য সব আমলের অবস্থা।

( তিরমিজী সহীহ হাদিস -৪১৩ ই ফা বা/ তাহকীককৃত, ইবনু মাজাহ সহীহ হাদিস – ১৪২৫, ১৪২৬, নাসায়ী সহীহ হাদিস-৪৬৭ ই ফা বা , আবূ দাঊদ সহীহ হাদিস- ৮৬৪ ই ফা বা )

তাহাজ্জুদ , রাত্রিকালীন, কিয়ামুল লাইল এবং তারাবী  সলাত –

আসসালামু আলাইকুম, রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রমযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রমযান ও অন্যান্য সময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছুকে এক কথায় ‘ছালাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা হয়।

তারাবীহ : মূল শব্দ رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ (রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ : প্রশান্তির বৈঠকসমূহ (আল-মুনজিদ)

তাহাজ্জুদ : মূল শব্দ هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা। সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা বা রাত্রি জেগে ছালাত আদায় করা (আল-মুনজিদ)।

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

তাহাজ্জুদ এর সলাত ( নামাজ) –

তাহাজ্জুদ: তাহাজ্জুদ (تهجد) শব্দটি  আরবি। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পর বিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্যে একটি ঐচ্ছিক ইবাদত।

কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামাজ পড়া। এ কারণেই শরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়।  সাধারণত এর অর্থ এভাবে নেয়া হয় যে, কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের, রাত্রিকালীন বা কিয়ামুল লাইল নামাজ। তাহাজ্জুদ এর নামাজ প্রথম যুগে ফরজ ছিল তারপর মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের এই তাহাজ্জুদ এর নামাজকে ফরজ থেকে শিথিল বা ক্ষমা করে দেন বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

কুরআনের বাণী –

“তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।”

(সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৭-১৮)।

বলা হয়েছে “আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।”

( সূরা আল ফুরকান-আয়াত- ৬৪ )

“তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী”।

(সূরা আল ইমরান : আয়াত – ১৭)

“আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আল-বায়ান “

 

তাফসীর আল-বায়ান – কেউ কেউ বলেন, تهجد শব্দটি সেই শ্রেণীভুক্ত শব্দ, যাতে বিপরীতমুখী দু’ রকম অর্থ পাওয়া যায়। এর অর্থ ঘুমানোও হয়, আবার ঘুম থেকে জাগাও হয়। এখানে দ্বিতীয় অর্থেই ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, রাতে ঘুম থেকে ওঠো এবং নফল নামায পড়। কেউ বলেন, هجود এর প্রকৃত অর্থই হল, রাতে ঘুমানো। কিন্তু باب تفعُّل এর ছাঁচে পড়ে তাতে تجنب (বেঁচে থাকা) এর অর্থ সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন, إثم মানে পাপ, কিন্তু ঐ ছাঁচে পড়ে تَأَثُّم এর অর্থ হয়, পাপ থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। অনুরূপ تهجد এর অর্থ হবে, ঘুম থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। আর مُتَهَجِّدٌ হবে সে, যে রাতে না ঘুমিয়ে কিয়াম করে। মোট কথা তাহাজ্জুদের অর্থ হল, রাতের শেষ প্রহরে উঠে নফল নামায পড়া। সারা রাত قيام الليل (নামায) পড়া সুন্নতের বিপরীত। নবী (সাঃ) রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। আর এটাই হল সুন্নতী তরীকা।

( সূরা আল-ইসরা  আয়াত – ৭৯ )

 

মহান আল্লাহতায়ালা আরও বলেন –

হে চাদর আবৃত! রাতে সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া। রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছুটা কম। অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর। নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি এক অতিভারী বাণী নাযিল করছি।  নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী। নিশ্চয় তোমার জন্য দিনের বেলায় রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।

(সূরা মুজাম্মিল আয়াত – ১-৮ )

নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(সূরা মুজাম্মিল আয়াত – ২০)

 

তাফসীর –

(১) সূরার শুরুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সকল মুসলিমের উপর তাহাজ্জুদ ফরয করা হয়েছিল এবং এই সালাত অর্ধারাত্রির কিছু বেশী এবং কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দীর্ঘ হওয়াও ফরয ছিল। আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী যখন এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তাহাজ্জুদের ফরয রহিত করে সে নির্দেশ শিথিল ও সহজ করে দেয়া হলো। ( কুরতুবী )

(২) تُحْصُوه এর মূল হলো إحصاء যার অর্থ গণনা করা। যেমন, পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, (وَأَحْصَىٰ كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا) “আর তিনি (আল্লাহ) সবকিছু সংখ্যায় গণনা করে রেখেছেন।” [সূরা আল-জিন্ন: ২৮] অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তোমরা এর গণনা করতে পারবে না। তাহাজ্জুদের সালাতে আল্লাহ্ তা’আলা রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ থেকে দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে এই সালাতে মশগুল থাকা অবস্থায় রাত্র কতটুকু হয়েছে, তা জানা কঠিন ছিল। ( কুরতুবী; সা’দী )

আবার কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, إحصاء অর্থ কোন কিছু যথানিয়মে কাজে লাগানো বা সক্ষম হওয়া। সে হিসেবে এখানে (لَنْ تُحْصُوهُ) শব্দের অর্থ দীর্ঘ সময় এবং নিদ্রার সময়ে প্রত্যেকে যথারীতি সালাত পড়তে সক্ষম না হওয়া। [তাবারী] এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার এসেছে, যেমন হাদীসে আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, من أحصاها دخل الجنة অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর নামসমূহকে কর্মের ভিতর দিয়ে পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলে সে জান্নাতে দাখিল হবে।” [বুখারী: ৬৪১০, মুসলিম: ২৬৭৭]। এ অর্থের জন্য দেখুন, শারহুস সুন্নাহ লিল বাগভী: ৫/৩১; আল-আসমা ওয়াস সিফাত লিল বাইহাকী: ১/২৭; কাশফুল মুশকিল মিন হাদীসিস সাহীহাইন লি ইবনিল জাওযী: ৩/৪৩৫; তারহুত তাসরীব লিল ইরাকী: ৭/১৫৪; ফাতহুল বারী লি ইবন হাজার: ১/১০৬; সুবুলুস সালাম লিস সান আনী: ২/৫৫৬৷

(৩) تاب শব্দের আসল অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। গোনাহের তাওবাকেও এ কারণে তাওবা বলা হয় যে, মানুষ এতে পূর্বের গোনাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করে। কেউ কেউ বলেন, এখানে কেবল প্রত্যাহার বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা ফরয তাহাজ্জুদের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। [কুরতুবী]

(৪) প্ৰসিদ্ধ এই যে, যাকাত হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে ফরয হয়েছে এই আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ কারণে কোন কোন তাফসীরবিদ বিশেষভাবে এই আয়াতটিকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন। কিন্তু সঠিক মত হলো, যাকাত মক্কায় ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ফরয হয়েছিল, কিন্তু তার নেসাব ও পরিমাণের বিস্তারিত বিবরণ মদীনায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বৰ্ণিত হয়েছে, এমতাবস্থায় আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হলেও ফরয যাকাত বোঝানো যেতে পারে। [দেখুন: ইবন কাসীর]

(৫) মূলত এখানে ফরয ও নফল দান-খয়রাত ও কার্যাদি বোঝানো হয়েছে। [সা’দী] আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে এমনভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যেন ব্যয়কারী আল্লাহকে ঋণ দিচ্ছে। কেউ কেউ এর অর্থ এই নিয়েছেন যে, যাকাত ছাড়াও অনেক আর্থিক ওয়াজিব পাওনা মানুষের উপর বর্তে; যেমন: স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতির ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। [কুরতুবী]

(৬) এর অর্থ হলো, আখেরাতের জন্য যা কিছু তোমরা আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে তা তোমাদের ঐ সব জিনিসের চেয়ে অনেক বেশী উপকারী যা তোমরা দুনিয়াতেই রেখে দিয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করোনি। হাদীসে উল্লেখ আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের এমন কেউ আছে যার নিজের অর্থ-সম্পদ তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদের চেয়ে তার কাছে বেশী প্রিয়? জবাবে লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কেউ-ই এমন নেই যার নিজের অর্থ-সম্পদ তাঁর কাছে তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদ থেকে বেশী প্রিয় নয়। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি বলছে তা ভেবে দেখো। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের অবস্থা আসলেই এরূপ। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের নিজের অর্থ-সম্পদ তো সেইগুলো যা তোমরা আখেরাতের জন্য অগ্ৰিম পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যা তোমরা রেখে দিয়েছে সেগুলো ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের অর্থ-সম্পদ৷ [বুখারী: ৬৪৪২] [ইবন কাসীর]

(তাফসীরে জাকারিয়া)

তাহজ্জুদের নামাযে দাঁড়িয়ে রাত জাগা সম্পর্কে –

ক।  আবদুল্লাহ ইবন মাসলামা (রহঃ) …. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমায় তখন শয়তান তার মাথার পেছনের চুল তিনটি গিরা দিয়ে রাখে এবং প্রত্যেক গিরা দেওয়ার সময় সে বলেঃ তুমি ঘুমাও রাত এখনও অনেক বাকী। অতঃপর ঐ ব্যক্তি ঘুম থেকে জেগে যদি আল্লাহ তাআলার যিকির করে, তবে একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর সে যখন উযু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায় এবং সে যখন নামায আদায় করে তখন সর্বশেষ গিরাটিও খুলে যায়। অতঃপর সে ব্যক্তি (ইবাদাতের) মাধ্যমে তার দিনের শুভসূচনা করে, অথবা অলসতার মাধ্যমে খারাপভাবে তার দিনটি শুরু করে

(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

খ ।  মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহঃ) ….. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমরা তাহাজ্জুদের নামায পরিত্যাগ কর না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম একে কোন সময় পরিত্যাগ করতেন না। যখন তিনি অসুস্থ হতেন অথবা আলস্য বোধ করতেন তখন তিনি তা বসে আদায় করতেন।

( আবু দাউদ সহীহ হাদিস -১৩০৬,১৩০৭)

 

তাহজ্জুদ ( ঘুম থেকে জেগে ) সালাত আদায় করা।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “ আর আপনি রাতের এক অংশে তাহজ্জুদ আদায় করুন, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য

( সূরা আল-ইসরা  আয়াত – ৭৯ )

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন, তখন দু’আ পড়তেন- “ইয়া আল্লাহ! আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন এবং তাদের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর মালিক আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন এবং এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর নূর। আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য; আপনার সাক্ষাত সত্য; আপনার বাণী সত্য; জান্নাত সত্য; জাহান্নাম সত্য; নবীগণ সত্য; মুহাম্মাদ সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পন করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরেই তাওয়াক্কুল করালাম, আপনার দিকেই রুজূ’ করলাম; আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনই অগ্র পশ্চাতের মালিক। আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, অথবা (অপর বর্ণনায়) আপনি ব্যতীত আর কোন মা’বূদ নেই।”

সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, (অপর সূত্রে) আবদুল করীম আবূ উমাইয়্যা (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (অংশটুকু) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে থেকে বর্ণনা করেছেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১০৫৪ ই ফা বা/ ১১২০ আন্তঃ )

নামাযের মধ্যে তন্দ্রা এলে-

আহমাদ ইবন হাম্বল (রহঃ) ….. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ রাত্রিতে তাহাজ্জুদ নামায পাঠের জন্য দণ্ডায়মান হয়, তখন তন্দ্রার কারণে কুরআনের আয়াত পাঠ করছে তা বুঝতে না পারে, এমতাবস্থায় সে নিদ্রার জন্য শয়ন করবে। (মুসলিম, তিরমিযী)।

(আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৩১১)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

তাহাজ্জুদ নামাজের লাভ –

নামাযের নিয়্যাত করবার পর নিদ্রাচ্ছন্ন হলে –

ক। আল-কানবী (রহঃ) …. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রাত্রিতে নিয়মিত নামায আদায় করে থাকে সে যদি কোন রাত্রিতে নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে নামায আদায়ে ব্যর্থ হয় তবুও আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় উক্ত নামায আদায়ের অনুরূপ ছাওয়াব প্রদান করবেন এবং তার ঐ নিদ্রা সদকাস্বরূপ হবে। (নাসাঈ)।

(আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৩১৪)

খ । আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি (ঘুমাতে) তার বিছানায় এসে রাতে উঠে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার নিয়ত করলো, কিন্তু ঘুমের আধিক্যের কারণে তার ভোরে ঘুম ভাংলো, তাকে তার নিয়াত অনুযায়ী সওয়াব দেয়া হবে। তার এ ঘুম তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য।

( ইব্নে মাজাহ সহীহ হাদিস – ১৩৪৪,  নাসাঈ সহীহ হাদিস- ১৭৮৪)

রাত্রির কোন সময়টা ইবাদতের জন্য উত্তম –

আল-কানবী (রহঃ) …. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যহ আল্লাহ রব্বুল আলামীন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হয়ে বলতে থাকেনঃ তোমাদের কেউ আমার নিকট কোন কিছুর জন্য প্রার্থনা করবে, আমি তার ঐ দুআ কবুল করব, যে কেউ আমার নিকট কিছু যাচ্ঞা করবে, আমি তা তাকে প্রদান করব এবং যে আমার নিকট গোনাহ মাফের জন্য কান্না করবে, আমি তার গোনাহ মাফ করব (এতে বুঝা গেল যে, দু’আ কবুলের জন্য রাত্রির তিনভাগের শেষ ভাগ সময়টি উত্তম)। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবন মাজা)।

(আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৩১৫)

সুরা ইখলাসের ফজিলত –

ক। সুরা ইখলাসের ফজিলত অনেক। সুরা ইখলাস যিনি ভালোবাসবেন, তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে এসে আরজ করলেন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে।

( সহীহুল বুখারি ৭৭৪, মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১ )

খ। কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ: হাদিসে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সবাই একত্র হয়ে যাও, আমি তোমাদের কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ শোনাব। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা ইখলাস পাঠ করলেন।

( মুসলিম, তিরমিজি )

গ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।

( মুসলিম সহীহ হাদিস- ৮১২ )

ঘ। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।)

( সহীহুল বুখারি সহীহ হাদিস- ৪৬৫০ ই ফা বা / ৫০১৫ আন্তঃ,  নাসাঈ সহীহ হাদিস – ৯৯৪ হাদিস একাডেমি /৯৯৫ আন্তঃ,  আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৪৬১ ই ফা বা )

যে কারণে সুরাটি কোরআনের তিনভাগের একভাগ –

ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র আল্লামা আবুল আব্বাস আহমাদ ইবন ওমার ইবন সুরাইজ আশ-শাফেঈকে একবার প্রশ্ন করা হলো- সুরা ইখলাস তথা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কে , কোরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা হয় কেন?

আল্লামা আবু আব্বাস আহমাদ ইবনে ওমার ইবনে শুরাইজ আশ-শাফেঈ এর উত্তরে বলেন- কুরআনুল কারিমে মৌলিক আলোচ্য বিষয় ৩টি অংশে বিভক্ত। তাহলো-

কোরআনের একাংশের আলোচনার বিষয় : ১. আহকাম বা বিধি-বিধান। ২. অপর অংশে আলোচনার বিষয় হলো ওয়াদা ও ওয়িদ তথা জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের হুংকারের বিবরণ। ৩. আর বাকী অংশে আলোচনার বিষয় হলো মহান আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণগান।

( মাজমু,  ফাতাওয়া )

নবী () এর – রাতের সলাত বা নামাজ আদায়ের সংখ্যা –

ক।  আবূল ইয়ামন (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাতের সালাত (নামায/নামাজ)-এর (আদায়ের) পদ্ধতি কি? তিনি বললেনঃ দু’ রাকা’আত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করলে এক রাকা’আত মিলিয়ে বিতর আদায় করে নিবে।

 ( বুখারী সহীহ হাদিস – ১০৭১ ই ফা বা/ ১১৩৭ আন্তঃ )

খ। আল-কানবী ….. আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে রাতের নামাযের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ রাতের নামায হল-দুই দুই রাকাতের। অতঃপর তোমরা কেউ যখন নামায আদায়কালে ’সুবহে সাদিকের’আশংকা করবে (তখন পাঠিত দুই রাকাতের সাথে) এক রাকাত মিলিয়ে নামায শেষ করবে এবং এটা তোমার জন্য বিতির হিসাবে পরিগণিত হবে।

 ( আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৩২৬, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইবন মাজা )

গ। আবূ কুরায়ব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি রাতের সালাতকে কিরূপে বিতর করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সালাত আদায় করতে চায়, সে যেন দুই দুই (রাকআত) করে সালাত আদায় করে। যখন ভোর হয় বলে অনুভব করবে, তখন যেন এক রাক’আত আদায় করে নেয়।এটি সে যে সালাত আদায় করেছে, তাকে বিতর বানিয়ে দেবে। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রয়েছে, তিনি ইবনু উমর বলেন নি।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৩৩, ১৬৩৪, ১৬৩৬, ১৬৩৯ ই ফা বা )

” সাত “  রাকআত সলাত বা নামাজ –

আহমদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- তিনি বলেছিলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) রাত্রে নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন তিনি সাত রাকআত সালাত আদায় করতেন।

(নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১৭১২ )

” নয় “ রাকআত সলাত বা নামাজ –

উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- তিনি বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তের রাকআত সালাত আদায় করতেন (বিতরের সালাতসহ)। যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং দূর্বলতা এসে গেল তখন তিনি নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন।

( নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১৭১১)

” দশ ”  রাকআত সলাত বা নামাজ –

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছিল দশ রাক’আত এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফজরের দু’ রাকআত (সূন্নাত)ও আদায় করতেন। এই হল তের রাক’আত।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬০০ )

” এগার ”  রাকআত সলাত বা নামাজ –

আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত সলাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ ছিল তার রাত্রিকালীন সলাত। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, তার মাথা উঠাবার আগে তোমাদের কেউ ৫০ আয়াত পড়তে পারে এবং ফজরের সলাতের আগে তিনি আরো দু’রাকাত পড়তেন। ‍তারপর ডান কাত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম করতেন, সলাতের জন্য মুয়ায্‌যিনের আসা পর্যন্ত।

( বোখারী সহীহ  হাদিস – ৯৪০/৯৯৪, ১০৮১ )

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাকআত সলাত আদায় করতেন, এর মধ্যে এক রাকআত বিতর হিসেবে আদায় করতেন ………..।

(মুসলিম  সহীহ হাদিস  – ১৫৯০, ১৫৯১)

আবু সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত :-তিনি আয়শা (রা:) কে প্রশ্ন করেন – রমযান মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সলাত কিভাবে আদায় করতেন ? রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক’আত হতে বেশি করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, এরপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘ  ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর তিন রাকআত সলাত আদায় করতেন ………..।

(বোখারী সহীহ হাদিস- ২০১৩, নাসাঈ  সহীহ হাদিস – ১৭১০)

” তের “ রাক’আত সলাত বা নামাজ –

আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত দিয়ে তিনি বিতর আদায় করতেন এর শেষে ব্যতীত কখনও বসতেন না।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৫৯৩, ১৫৯৫, ১৫৯৭, ১৫৯৯, মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৮৯ হা একাডেমি / ১৬৭৪ ই ফা বা , নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১৭১১)

রমযান মাসে রাতের সালাত প্রসংগে –

আসসালামু আলাইকুম , তারাবীহ : মূল শব্দ رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ (রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ : প্রশান্তির বৈঠকসমূহ (আল-মুনজিদ)

 

বিভিন্ন সহীহ হাদিস থেকে বর্ণিত –

ক। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- তিনি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি [বুসর ইবনু সায়ীদ (রহঃ)] বলেন, মনে হয়, [যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ)] কামরাটি চাটাই’র তৈরী ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত/নামায  আদায় করেন। এবং তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সালাত /নামাজ আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননা, ফরজ সালাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম।

আফফান (রহঃ) … যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বলেছেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস নং – ৬৯৪,৬৯৫ ই ফা নাম্বার, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩০,৭৩১  আবু দাঊদ সহীহ হাদিস -১৩৩৭ ই ফা বা )

 

খ। ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না…………….।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৫৯৬, ১৫৯৯ ই ফা বা )

 

রমযান মাসের রাত্রিকালীন নামায ২০ রাকআত  –

আল-হাসান ইবন আলী (রহঃ) ….. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে রমযান মাসের (রাতে) নামায আদায়ের ব্যপারে উৎসাহিত করতেন; তবে তিনি তা আদায়ের ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব (ফরয-ওয়াজিবের ন্যায়) আরোপ করতেন না। তিনি বলতেনঃ যে ব্যক্তি রমযান মাস ঈমানের সাথে এবং মর্যাদা লাভের আশায় দণ্ডায়মান হয়ে তারাবীহ নামায আদায় করে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জীবনের পূর্ববর্তী সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরেও এই নামাযের বিধান একইরূপ থাকে। অতঃপর আবু বাকর (রাঃ) এর খিলাফতকালেও তদ্রূপ থাকে এবং উমার (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও ঐরূপ ছিল। [ অতঃপর উমর (রাঃ) রমযান মাসে জামায়াতের সাথে ২০ রাকাআত তারাবীহের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং এটাই সুন্নাত]

( আবু দাঊদ হাদিস – ১৩৭১ ই ফা বা  )

নোটঃ নিচের লাইনে যেখানে ২০ রাকাআত এর কথা উল্লেখ আছে এই লাইন টি হচ্ছে ইন ব্রাকেটের মাঝে এবং অনলাইনে অন্য কোন আবু দাউদ হাদিসে এই লাইন টি নেই। তাই আমি মনে করি এই লাইনটি নিয়ে অনেক সন্দেহ রয়েছে , কেউ যদি আরো সঠিক তথ্য খুঁজে পান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের কমেন্টস বক্সে জানানোর জন্য বিনীত অনুরুধ রইল ধন্যবাদ।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )রমজান মাসে প্রতি রাত জামাতে নামাজ আদায় করেননি –

মুসাদ্দাদ (রহঃ) ….. আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রমযান মাসে রোযাব্রত পালন করেছি। তিনি রমযান মাসের প্রথম দিকে (তারাবীহ নামায) আমাদের সাথে আদায় করেন নাই। অতঃপর উক্ত মাসের মাত্র সাতটি রাত অবশিষ্ট থাকতে তিনি আমাদের নিয়ে নামায (তারাবীহ) আদায় করেন; এভাবে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি ষষ্ঠ রাতে (অর্থাৎ পরের রাত) আমাদের সাথে (তারাবীহ) নামায আদায় করেন নাই। পরে পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের সাথে নামায আদায় করাকালে রাতের অর্ধাংশ অতিবাহিত করেন।

রাবী বলেনঃ ঐ সময় আমি তাঁকে বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! অদ্য রজনীতে আপনি যদি আমাদের সাথে সারা রাত নামায আদায় করতেন, তবে কত উত্তম হত। তখন তিনি বলেনঃ কেউ জামাআতের সাথে (ইশার নামায) আদায় করে ঘরে প্রত্যাবর্তন করলে তাকে সারা রাতের জন্য নামাযী হিসাবে গণ্য করা হয়। রাবী বলেনঃ তিনি চতুর্থ রাতে (২৭শে রমযান) মসজিদে আসেন নাই (তারাবীর নামায আদায়ের জন্য)।

অতঃপর তৃতীয় রাতে তিনি তাঁর স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনদেরকে এবং অন্যান্য লোকদেরকে একত্রিত করে জামাআতের সাথে (তারাবীর) নামায আদায় করেন (এবং তার সময় এত দীর্ঘ হয় যে,) আমাদের আশংকা হচ্ছিল যে, হয়ত আমারা “ফালাহ্”-র সুযোগ হারিয়ে ফেলব। রাবী বলেন, আমি তখন জিজ্ঞাসা করিঃ ’ফালাহ’ কি? তিনি বলেনঃ সেহরী খাওয়া। অতঃপর তিনি উক্ত মাসের বাকী দিনগুলিতে (২৯ ও ৩০) আমাদের সাথে জামাআতে আর তারাবীহ আদায় করেন নাই ।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ১৩৭৫ ই ফা বা , তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজা )

কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহ সম্পর্কে উৎসাহ দান –

হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য রাতে বেরিয়ে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন একদল লোক তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল এবং সকালে লোকেরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করল। ফলে তাদের চাইতে অনেক বেশী লোক সমবেত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাতে বের হলেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল। এদিন সকালেও লোকেরা বিষয়টি আলোচনা করতে থাকল। এতে রাতে মসজিদের লোক সংখ্যা আরো বেশী হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল।

চতুর্থ রাতে মসজিদ লোকদের স্থান সংকুলানে অক্ষম হল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে বের হলেন না। তখন তাদের মাঝে কিছু লোক বলতে লাগল, সালাত! সালাত! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও তাদের কাছে বের হলেন না। অবশেষে ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন। ফজরের সালাত আদায় করার পরে লোকদের দিকে মুখ করলেন এবং তাশাহহুদ পাঠের পরে বললেন, আজ রাতে তোমাদের অবস্থা আমার কাছে গোপন থাকে নি। তবে আমার আশংকা হয়েছিল যে, রাতের (তারাবীহ) সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায়; আর তোমরা তা পাননে অক্ষম হও।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৫৭ ই ফা বা )

রমযানের সিয়াম পালন এবং লায়লাতুল কাদর এর ফজিলত –

ক। লায়লাতুল কাদর এর ফজিলত –

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি লায়লাতুল কাদরে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রাত জাগরণ (ইবাদত) করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৫২, ১৬৫৩, ১৬৫৪, ১৬৫৫ ই ফা বা , আবু দাঊদ সহীহ হাদিস -১৩৭২ ই ফা বা , বুখারী, নাসাঈ, ইবন মাজা )

 

খ । লাইলাতুল কদর ( মহিমান্বিত রাত ) এর বর্ণনা –

সুলায়মান ইব্ন হারব (রহঃ) ….. যির ইবন হুবায়েশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি উবাই ইবন কাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করি, হে আবুল মুনযির! লায়লাতুল কদর সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। কেননা এ সম্পর্কে আমাদের সংগী (আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সারা বছর রাতে ইবাদাত করবে, সে তা প্রাপ্ত হবে। তিনি (কাব) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আবু আব্দুর রহমানের উপর রহম করুন! তিনি এটা অবগত আছেন যে, ’শবে কদর’ রমযান মাসের মধ্যে নিহীত।

রাবী মুসাদ্দাদ তাঁর বর্ণনায় আরও বলেনঃ তিনি (ইবন মাসুউদ) এটা প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন। অতঃপর উভয় রাবী (সুলায়মান ও মুসাদ্দাদ) ঐক্যমতে পৌঁছে বলেনঃ আল্লাহ্ শপথ! এটা হল রমযানের ২৭ তারিখের রাত। উল্লেখ্য যে, তাঁরা তাঁদের এই শপথবাণী উচ্চারণের সময় ইনশা আল্লাহ ব্যবহার করেন নাই। রাবী বলেন, তখন আমি বলি, হে আবুল মুনযির! আপনি তা কিরূপে অবগত হতে পারলেন? তিনি বলেনঃ ঐ সমস্ত নিদর্শনাবলীর সাহায্যে আমরা জানতে পেরেছি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলে গিয়েছেন। রাবী আসেম তখন যির ইবন হুবায়েশ (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেনঃ ঐ নিদর্শনাবলী কি? তিনি বলেনঃ সে রাতের প্রভাতের সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত তা নিষ্প্রভ থাকবে।

( আবু দাঊদ হাসান হাদিস – ১৩৭৮ ই ফা বা /তাহকিককৃত , মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ )

 

গ। লায়লাতুল কদরের ফযীলত, শেষ ১০ বা ৭ দিন অনুসন্ধানের প্রতি উৎসাহ দান –

মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … উকবা ইবনু হুরায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশদিনে কদরের রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দূর্বল অথবা অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষ সাত রাতে অলসতা না করে।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ২৬৩৬ ই ফা বা )

রমজানে কোন রাতে ” শবে কদর “ হবে সেই সম্পর্কে –

ক। লাইলাতুল কদর প্রতিটি রাতের মধ্যে নিহিত আছে –

হুমায়েদ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শবে কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার সময় আমি তা শ্রবণ করি। তিনি বলেনঃ সেটা তো (শবে কদর) রমযানের প্রতিটি রাতের মধ্যে নিহিত আছে (অর্থাৎ এর কোন এক রাতে তা নিহিত আছে)।

( আবু দাঊদ যঈফ হাদিস – ১৩৮৭ ই ফা বা /তাহকিককৃত, বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা যঈফ হাদিস-৩০৭ )

 

খ। লাইলাতুল কদর ( কদরের রাত্রি – ২৭ এ রাত ) –

যির (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! এই যে সাতাশের রাত লাইলাতুল কাদর আপনি সেটা কিকরে জানতে পারলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এই রাত্রের পরবর্তী সকালে সূর্য উদিত হয় ক্ষীণ আলো নিয়ে দীপ্তিহীন অবস্থায়। আমরা সেটাকে গুনে এবং স্মরণ করে রেখেছি। আল্লাহ তা’আলার শপথ! ইবনু মাসউদ (রাঃ)-ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রামাযানের রাত্র এবং সাতাশেরই রাত্র। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক।

( তিরমিজী সহীহ হাদিস -৭৯৩ ই ফা বা )

আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

 

গ। লাইলাতুল কদর (কাদরের রাত্রি – ২১ এ রাত ) –

আল-কানবী (রহঃ) ……….. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সাধারণত রমযানের মধ্যম দশ দিনে ইতিকাফ করতেন। এরূপ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বছর ইতিকাফ করবার সময় রমযানের ২১শে রাতে, অর্থাৎ আমার সাথে ইতিকাফে শরীক হয়েছে সে যেন রমযানের শেষ দশ দিন ও ইতিকাফ করে এবং আমি লায়লাতুল-কদর দেখেছি, কিন্তু তা আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেকে শবে কদরের সকালে কাদামাটির মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। তোমরা তা (শবে কদর) রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে অন্বেশন করবে।

রাবী আবু সাঈদ (রহঃ) বলেনঃ উক্ত একুশের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল এবং তখন মসজিদের ছাদ খেজুর পাতার থাকায় তাতে পানি পড়েছিল। রাবী আবু সাঈদ (রাঃ) আরো বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মোবারকে, নাকে ও চোখে ২১ তারিখের সকালে কাঁদামাটির চিহ্ন দেখতে পাই ।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ১৩৮২ ই ফা বা /তাহকিককৃত, বুখারী সহীহ হাদিস – ১৮৯১ ই ফা বা,তাওহীদ/২০১৮ আন্তঃ মুসলিম সহীহ হাদিস -২৬৫৯ হাদিস একাডেমি/ ১১৬৭ আন্তঃ , তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজা )

 

প্রতি রাত্রিতে আল্লাহ্ তা’আলা প্রথম আকাশে নেমে আসেন –

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –  রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হলে প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেনঃ আমিই রাজধিরাক, যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাককে কবূল করি, যে আমার কাছে যাঞ্ছা করে আমি তাকে দেই, যে আমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। ফজরের আলো উদ্ভাসিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।

( ইবনু মাজাহ সহীহ হাদিস- ১৩৬৬, বুখারি সহীহ হাদিস ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪ আন্তঃ / ১০৭৯, ৫৮৮২, ৬৯৮৬ ইস ফা বা , আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ১৩১৫,৪৭৩৩, মিশকাত সহীহ হাদিস -১২২৩, তিরমিজী সহীহ হাদিস নং – ৪৪৬, মুসলিম সহীহ হাদিস -১৬৪৩,১৬৪৪,১৬৪৫, ১৬৪৬, ১৬৪৭, ১৬৪৮,১৬৪৯,১৬৫০ ই ফা বা )

রমাজানের শেষ ১০ দিন ইত্তেকাফ সংক্রান্ত হাদিস –

কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমাযানের) মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। অতঃপর ২০তম দিন অতিবাহিত হবার পর এবং ২১তম দিনের সূচনাতে তিনি নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন এবং তার সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেন, তারাও নিজ নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর একবার রমাযান মাসের মাঝের দশকে তিনি ইতিকাফ করলেন- যে রাতে তার ইতিকাফ হতে ফিরে আসার কথা, সে রাতে (পুনরায়) ইতিকাফ আরম্ভ করলেন ও লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি সাধারণত এ (মধ্যম) দশকে ইতিকাফ করতাম। এরপর শেষ দশকেও ইতিকাফ করা আমার কাছে সমীচীন মনে হল। অতএব যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায়, যেন নিজ ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। আমি এ (কদরের) রাত স্বপ্নে দেখেছিলাম, কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তা অনুসন্ধান কর। আমি স্বপ্লে নিজেকে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি।

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) বলেন, ২১ তম রাতে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তিনি যখন ফজরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) থেকে ফিরলেন, তখন আমি তার মুখমণ্ডল কাদা ও পানিতে সিক্ত দেখলাম।

( মুসলিম সহীহ হাদিস -২৬৫৯ হাদিস একাডেমি/ ১১৬৭ আন্তঃ )

 

লম্বা কিরাআতের সালাত ” উত্তম সলাত ” –

আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতি উত্তম সালাত দীর্ঘ সময় দাঁড়ান (অর্থাৎ লম্বা কিরা’আতের সালাত)।

( মুসলিম সহীহ হাদিস -১৬৪১, ১৬৪২ ই ফা বা )

যে ব্যক্তি রাতে তার নিয়মিত সলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে যায়

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি (ঘুমাতে) তার বিছানায় এসে রাতে উঠে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার নিয়ত করলো, কিন্তু ঘুমের আধিক্যের কারণে তার ভোরে ঘুম ভাংলো, তাকে তার নিয়াত অনুযায়ী সওয়াব দেয়া হবে। তার এ ঘুম তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য।

( ইব্নে মাজাহ সহীহ হাদিস – ১৩৪৪,  নাসাঈ সহীহ হাদিস- ১৭৮৪ )

 

নফল সালাত নিজের ঘরে আদায় করার ফজিলত –

ক। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মসজিদের (ফরয) সালাত সমাধা করে, তখন সে যেন তার ঘরের জন্য তার সালাতের একটি অংশ নির্দিষ্ট করে। কেননা, তার সালাতের কারণে আল্লাহ তার ঘরে বরকত দান করবেন।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৯৫ ই ফা বা )

খ। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থান বানিও না। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।

( মুসলিম সহীহ হাদিস- ১৬৯৭  ই ফা বা )

 

ভোর বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকার কুফল –

উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন একজন লোকের কথা আলোচনা করা হল যে ভোর পর্যন্ত রাতভর ঘুমিয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ও এমন ব্যাক্তি যার দু’ কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে অথবা বললেন, তার কানে।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬৯০ ই ফা বা )

নোটঃ ভোর বেলা- ভোর বলতে বোঝায় দিনের একটি অংশবিশেষ যখন সূর্য উঠতে শুরু করে। ভোর বেলায় সূর্যের উদয়ের সময়ে পরিবেশে মৃদু সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এসময় সূর্য দিগন্তের নিচে অবস্থান করে। ভোড় এবং সূর্যোদয় এক ব্যাপার নয়। সূর্যোদয় হল যখন সূর্যের একাংশ দিগন্তের উপরে চলে আসে এবং তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ভোরবেলা সূর্য দেখা না গেলেও সূর্যের অবস্থান কোনদিকে – তা বোঝা যায়।

 

রাতে ঘুমানোর সময়  শয়তান প্রত্যেকের মাথায় তিনটি গিট দেয় –

আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথার তিনটি গিট দেয়- যখন সে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতি গিটে এই বলে ফুঁ দেয় যে, তোমার সামনে দীর্ঘ রাত…… সেযখন জেগে উঠে আল্লাহর নাম নেয় তখন একটি গিঁট খুলে যায় যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তখন দু’টি গিট খুলে যায়। আর যখন সালাত আদায় করে তখন সবকটি গিটই খুলে যায়। ফলে সে উৎফূল্ল ও আনন্দিত মনে ভোর করে। অন্যথায় সে ভোর করে বিমর্ষ মনে ও আলসে অবস্থায়।

( মুসলিম সহীহ হাদিস- ১৬৯২ ই ফা বা )

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

 

আলহামদুলিল্লাহ

নোটঃ  যদি কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকে, সবাই অনুগ্রহ করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং সঠিক উত্তরটি কমেন্টস বক্সে জানালে আমরা পরবর্তীতে এটি সংশোধন করে নিব ইনশাআল্লাহ।

সকলকে অনেক ধন্যবাদ 

Leave a Reply