ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামও দলীলের ভিত্তিতে মানুষকে আহবান জানিয়েছেন।
১। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন,
لَايَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَّأْخُذَ بِقَوْلِنَا مَا لَمْ يَعْلَمْ مِنْ أَيْنَ أَخَذْنَاهُ.
‘ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না আমরা উহা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি’।
সূত্র – ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুআক্কেঈন আন রাবিবল আলামীন (বৈরুতঃ দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, ১৯৯৯৩/১৪১৪), ২য় খন্ড, পৃঃ ৩০৯; ইবনু আবেদীন, হাশিয়া বাহরুর রায়েক্ব ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৯৩; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ) মিনাত তাকবীরি ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১/১৪১১), পৃঃ ৪৬।
২। ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪হিঃ) বলেন,
إِذَا رَأَيْتَ كَلاَمِيْ يُخَالِفُ الْحَدِيْثَ فَاعْمَلُوْا بِالْحَدِيْثِ وَاضْرِبُوْا بِكَلاَمِيْ الْحَائِطَ.
‘যখন তুমি আমার কোন কথা হাদীছের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুড়ে মারবে’।
সূত্র – আল-খুলাছা ফী আসবাবিল ইখতিলাফ, পৃঃ ১০৮; শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ (কায়রো: আল-মাতবাআতুস সালাফিয়াহ, ১৩৪৫হিঃ), পৃঃ ২৭।
৩। ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯হিঃ), ইমাম আহমাদ (১৬৪-২৪১হিঃ) সহ অন্যান্য ইমামদের বক্তব্যও একই।
সূত্র – শারহু মুখতাছার খলীল লিল কারখী ২১/২১৩ পৃঃ; ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ, পৃঃ ২৮।
৪। জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সকল প্রকার আমল নিঃসঙ্কোচে নিঃশর্তভাবে বর্জন করতে হবে। কারণ জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা কোন শারঈ বিধান প্রমাণিত হয় না। জাল হাদীছের উপর আমল করা পরিষ্কার হারাম।
সূত্র – সূরা আন‘আম ১৪৪; আ‘রাফ ৩৩; হুজুরাত ৬; ছহীহ বুখারী হা/৫১৪৩ ও ৬০৬৪, ২/৮৯; ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, ছহীহ মুসলিম (দেওবন্দ: আছাহহুল মাতাবে‘ ১৯৮৬), হা/৬৫৩৬, ২/৩১৬; মিশকাত হা/৫০২৮, পৃঃ ৪২৭।
৫ । সে কারণে ছাহাবায়ে কেরাম যঈফ ও জাল হাদীছের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। আস্থাহীন, ত্রুটিপূর্ণ, অভিযুক্ত, পাপাচারী, ফাসিক শ্রেণীর লোকের বর্ণনা তারা গ্রহণ করতেন না।
প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও এর বিরুদ্ধে ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর চূড়ান্ত মূলনীতি ছিল যঈফ হাদীছ ছেড়ে কেবল ছহীহ হাদীছকে অাঁকড়ে ধরা। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি ঘোষণা করেন, إِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ ‘যখন হাদীছ ছহীহ হবে সেটাই আমার মাযহাব’।
সূত্র – আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রাণী, মীযানুল কুবরা (দিল্লীঃ ১২৮৬ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩০।
৬। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন,
إِنَّ الْعَالِمَ إِذَا لَمْ يَعْرِفِ الصَّحِيْحَ وَالسَّقِيْمَ وَالنَّاسِخَ والْمَنْسُوْخَ مِنَ الْحَدِيْثِ لاَيُسَمَّى عَالِمًا.
‘নিশ্চয়ই যে আলেম হাদীছের ছহীহ-যঈফ ও নাসিখ-মানসূখ বুঝেন না তাকে আলেম বলা যাবে না’, ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাওয়াহাও একই কথা বলেছেন।
সূত্র – আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (রিয়ায: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ২০০০/১৪২১), ১/৩৯, ভূমিকা দ্রঃ; আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম, মা‘রেফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৬০।
৭ । ইমাম মালেক, শাফেঈ (রহঃ)-এর বক্তব্যও অনুরূপ।
সূত্র – ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ দ্রঃ, ১/১২ পৃঃ, ‘যা শুনবে তাই প্রচার করা নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৩; প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আল-খত্বীব, আস-সুন্নাহ ক্বাবলাত তাদবীন (রৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৮০/১৪০০), পৃঃ ২৩৭।
৮ । মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন,
مَنْ عَمِلَ بِخَبْرٍ صَحَّ أَنَّهُ كِذْبٌ فَهُوَ مِنْ خَدَمِ الشَّيْطَانِ.
‘হাদীছ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে শয়তানের খাদেম’।
সূত্র – মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত (বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫/১৪১৫), পৃঃ ৭; ড. ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ (দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৩।
৯ । অতএব ইমাম হোন আর ফক্বীহ হোন বা অন্য যেই হোন শরী‘আত সম্পর্কে কোন বক্তব্য পেশ করলে তা অবশ্যই ছহীহ দলীলভিত্তিক হ’তে হবে। (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মুযাফফর বিন মহসিন-এর লেখা ‘যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জনের মূলনীতি’ শীর্ষক বইটি পড়ুন)
Share this:
- Click to print (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Reddit (Opens in new window)
- Click to share on Pinterest (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to email a link to a friend (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Click to share on Tumblr (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)