Skip to content

ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম I Umrah

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Table of Contents

ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম বাংলা ?

নোট : এই বিষয়বস্তুটিতে  যে হাদিস গ্রন্থের ( যেমনঃ বোখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ  ইত্যাদি ), হাদিস গুলোর  উদাহরণ দেওয়া হয়েছে , এই হাদিস গ্রন্থ্য গুলো অনুবাদ এবং সংকলন করা হয়েছে, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক ।

যারা এই হাদিস নাম্বার গুলো মিলাতে যাবেন অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, অনুবাদ এবং সংকলন যেন , ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক  হয়। তাহলে হাদিস গুলোর নাম্বার মিলবে।

হজ্জ ?

হজ্জ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো – ইচ্ছে করা, ঘোরাফেরা করা, সংকল্প করা, পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাবা শরিফ এবং নির্দিষ্ট স্থান সমূহে তাওয়াফ ও জিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো হজ্জ। এটি এমন ইবাদত যেখানে আর্থিক ও শারীরিক উভয়েই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানদের [“একবার হজ্জ পালন করা ফরজ “।

( সহীহ মুসলিম হাদিস  – ৩১২৭ )

ওমরা হজ্জ

ওমরা হজ্জ

হজ্জ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নির্দেশ……………..

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

অর্থ ……..

এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইব্রাহীম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্ র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।

(সূরা আল ইমরান আয়াত-৯৭)

ইহরাম বাধার স্থান বা মিকাত। …………………..

ধর্মীয় সম্পর্কে আরও কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন। ……………

ওমরা হজ্জ কি?

ইসলামি পরিভাষায় উমরা অর্থ ইহরাম অবস্থায় কাবার চারপাশে তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যখানে সায়ি করাকে বোঝায়। হজ্জের সাথে এদিক থেকে উমরার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে হজ্জের গুরুত্ব উমরার চেয়ে বেশি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।

ওমরাহ ওয়াজিব এবং এর ফযীলত?

উমরা ওয়াজিব হওয়া এবং তার ফযীলত। ইব্ন উমর (রা) বলেন , প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হজ্জ ও উমরা অবশ্য পালনীয়। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন , কুরআনুল কারীমে হজ্জের সাথেই উমরার উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহর বাণী: “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণভাবে আদায় কর।”

( সূরা আল-বাকারা, আয়াত- ১৯৬ )

হাদিসের বর্ণনায় ……………
আব্দুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র) ….. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে , রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : এক উমরার পর আর এক উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান।

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর কাছে এসে বললেন আমার পিতা খুব বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ-উমরা করতে অপারগ, এমনকী সফরও করতে পারেন না। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, ‘তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা পালন করো।

( বোখারী সহীহ  হাদিস নং – ১৬৫৮, পরিচ্ছেদ -১১১২। তিরমিজি সহীহ  হাদিস নং – ৯৩০ )

রমজান মাসে ওমরাহ হজ্জ করার ফজিলত  ?

মুসাদ্দাদ (র.)…ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নবী (সা:) এক আনসারী মহিলাকে বললেন : আমাদের সংঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের ? ইবনে আব্বাস (রা:) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি।  মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল।  কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে ) আরোহন করে চলে গেছেন।  আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি।  নবী (সা:) বললেন : আচ্ছা , রমজান এলে তখন উমরা করে নিও। কেননা , রমজানের একটি উমরা একটি হজ্জের সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।

 ( বোখারী সহীহ  হাদিস নং ১৬৬৭, ১৭৪১ )

 হজ্জ ও ওমরার মধ্যে পার্থক্য ?

এই পার্থক্যটা শুধু গুরুত্ব এবং পদ্ধতির মধ্যে-

যেমন

১. হজ্জ ফরয- প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনকালে এটি পালন করা বাধ্যতামূলক যদি তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে এটি করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ওমরাহ হজ পালন করা সুন্নত।

২. হজ এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয় কিন্তু ওমরাহ বৎসরে যে কোন সময়ই করা যায়। তবে ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ।

৩. ওমরাহর মধ্যে আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান, দু’নামায এক সাথে আদায় করা ও খুতবার বিধান নেই। তাওয়াফে কুদূম এবং তাওয়াফে বিদা’ও নেই কিন্তু এই সব কাজ হজের মধ্যে রয়েছে।

৪.হজের মধ্যে জামরাতুল আক্বাবাহ’তে রামী (কংকর নিক্ষেপ) করার সময় তালবিয়াহ পড়া মওকূফ করা হয়। ওমরাহর মধ্যে তাওয়াফ আরম্ভ করার সময় তালবিয়াহ পড়া মওকুফ করা হয়।

৫. ওমরাহ নষ্ট হলে বা জানাবত (ওই নাপাকী যা দ্বারা গোসল ফরয হয়।) অবস্থায় তাওয়াফ করলে (দম হিসেবে) একটা ছাগল বা মেষ জবেহ করা যথেষ্ট, কিন্তু হজ পালনের সময় ইহা যথেষ্ট নয় বরং পরবর্তী বছর পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়।

 যে ব্যক্তি হজ্জের আগে ওমরা আদায় করল ?

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ (র.)… ইকরিমা ইবনে খালিদ (র.) থেকে বর্ণিত , তিনি ইবন উমর (রা:) হজ্জের আগে , উমরা আদায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন।  তিনি বললেন এতে কোন দোষ নেই। ইকরিমা (র.) বলেন , ইবনে উমর (রা:) বলেছেন , নবী (সা:) হজ্জের আগে ওমরা আদায় করেছেন। ইব্রাহিম ইবনে সা’দ (র) ইবনে ইসহাক (র) থেকে বর্ণনা কেন যে , ইকরিমা ইবন খালিদ (র)বলেছেন , আমি ইবন উমর (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম।  পরবর্তী অংশটুক উক্ত হাদিসের অনুরুপ।

(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৬৫৯)

হজের ধারাবাহিক কাজ গুলো  আগে পিছে করার বৈধতা-

’আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) … ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।

(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৬২৬)

ধর্মীয় সম্পর্কে আরও কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন। ……………

ওমরাহর ফরজ এবং ওয়াজিব সমূহ-

ওমরাহর ফরজ –

দুইটি ফরজ:

      (১) ইহরাম বাধা ।

      (২) তাওয়াফ ।

ওমরাহর ওয়াজিব –

দুইটি ওয়াজিব:

       (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা ।

       (২) মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা ।

ওমরা হজের কাজ গুলোর ধারাবাহিক নিয়ম ?

ওমরা হজের  কাজ গুলো ধারাবাহিক নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো –

 (১) ইহরাম বাধা –

ইহরামের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?

৩টি যথা :

  • মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
  • সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা।
  • নিয়ত করার পর তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব।
ইহরাম বাধা ওমরা হজ্জ

ইহরাম বাধা ওমরা হজ্জ

ইহরাম বাধার পূর্বে করণীয়?

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হওয়া –

  • নখ কাটা।
  • গোফ খাট করা।
  • বোগল ও নাভির নীচের চুল কামানো ও তা পরিষ্কার করা।
  • তবে ইহরামের পূর্বে পুরুষ ও মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিষয়ে কোন বিধান পাওয়া যায় না।
  • উল্লেখ্য দাড়ি কোন অবস্থায়ই কাটা যাবে না।
  • গোসল করাও মুস্তাহাব।

ইহরাম বাধার স্থান বা মিকাত। …………………..

ধর্মীয় সম্পর্কে আরও কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন। ……………

সুগন্ধি মাখা ( মুস্তাহাব ) ?

ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে সুগন্ধি মাখা মুস্তাহাব। কিন্তু এ সুগন্ধি কোথায় মাখতে হবে-

  • মাথায়।
  • দাড়িতে।
  • সারা শরীরে মাখা যায়।
  • মনে রাখতে হবে, মেয়েরা সুগন্ধি লাগাবে না।

নোট : ইহরাম পরিধানের পর যদি এর সুগন্ধ শরীরে থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই।

(বোখারী, মুসলিম অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৪৭, ২৬৯৫, ২৬৯৬)

পুরুষের ইহরামের কাপড় কেমন পড়বে ?

চাদরের মত দু’টুকরা কাপড় একটি নীচে পরবে, দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে।

  • কাপড়গুলো সেলাইবিহীন হতে হবে।
  • পরিচ্ছন্ন ও সাদা রং হওয়া মুস্তাহাব।
  • মুহরিম ব্যক্তির কাপড় না থাকলে পায়জামা পড়তে পারবে  (মুসলিম-  হাদিস নং – ২৬৬৫)
  • লুঙ্গি পড়তে পারবে এবং গায়ে চাদর পড়তে পারবে কিন্তু শরীর এর চামড়া রঞ্চিত হয়ে যায় এরকম জাফরানি রঙের কাপড় পড়তে নিষেদ করেছেন।  (বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫২)
  • আংটি পড়তে পারবে। কোমরে থলে বানতে পারবে। (বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, পরিচ্ছেদ : ৯৭৮) 

ইহরাম বাঁধা ( ফরজ ) ?

নির্ধারিত মিকাত থেকে (সম্ভব হলে) গোসল করে অথবা অজু করে ইহরামের পোশাক পরিধান করা । পুরুষরা সেলাইবিহীন ২টি কাপড় পরবে। আর নারীরা পর্দাসহ  শালীন পোশাক পরবে। অতঃপর ২ রাকাআত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করে নেবে-

اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ العُمْرَةَ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي

উচ্চারণ : ‘আল্লহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরতা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকব্বালহু মিন্নি’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরার ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’

অতঃপর তালবিয়া পড়বে – নিয়তের পর অধিক হারে তালবিয়া পড়তে থাকুন-

 لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ : ‘লাব্বাইকা আল্ল-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’

অর্থ : আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।

 

তালবিয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়বে-

اَللَّهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَ الْجَنَّةَ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিধ-কা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউ’জুবিকা মিন গধবিকা ওয়ান্নার’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসুন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’

ইহরাম বাধার স্থান বা মিকাত। …………………..

 মুহরিম ব্যক্তি  যে সকল কাপড় পড়বে না ?

  • পায়জামা ।
  •  জামা ।
  • টুপি ।
  • পাগড়ী ।
  • মোজা ।
  • জাফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার খুশবু )রঞ্চিত কাপড় পড়বেনা।
  • চুল আঁচড়াবে না ।
  • শরীর চুলকাবে না ।
  • নারীরা মুখে নেকাব পড়বেনা ।
  • নারীরা হাত মুজা পড়বেনা ।

(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫০, ১৭১৯)

মেয়েদের ইহরামের কাপড় কী ধরনের হওয়া চাই?

 মেয়েরা কি ধরনের পোশাক পড়ে এহরাম বাধবে –

মেয়েদের ইহরামের জন্য বিশেষ কোন পোষাক নেই। মেয়েরা সাধারণত : যে কাপড় পরে থাকে সেটাই তাদের ইহরাম। তারা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ঢিলেঢালা ও শালীন পোষাক পরবে। তবে যেন পুরুষের পোষাকের মত না হয়।

আয়িশা (রা:) ইহরাম অবস্থায় কুসুমি রঙের রঙিন কাপড় পড়েন । এবং তিনি বলেন নারী গণ ঠোঁট ও মুখমন্ডল আবৃত করবেনা।  ওয়ারস ও জাফরান রঙের রঙিন কাপড় পড়বে না।  আয়িশা (রা:) নারীদের জন্য অলংকার, কালো ও গোলাপি রঙের কাপড় ও মোজা পড়া দূষণীয় মনে করেন নি। ইব্রাহিম (নাখয়ি ) (র) বলেন ,  ইহরাম অবস্থায় কাপড় পরিবর্তন করার দোষ নেই।

(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, পরিচ্ছেদ : ৯৮৩)

ইহরাম অবস্থায় পায়ে কী পরবে?

পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা পরা যাবে না। কাপড়ের মোজাও পরবে না।

কারো জুতা না থাকলে টাকনুর নিচ থেকে মুজা কেটে সেন্ডেল জুতার ন্যায় পড়তে হবে।তবে সেন্ডেল পরতে পারে।

(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫০)

অজু করার নিয়ম। …………

ইহরাম পড়ার পর কি কি করা যাবে না ?

  • – স্ত্রী সহবাস করা যাবে না এবং কোন অন্যায় আচরণ করা যাবে না। (বোখারী হাদিস -১৭০২)
  • – কোনো ধরনের সুগন্ধি কাপড়ে  ব্যবহার করা যাবে না। (মুসলিম হাদিস নং ২৬৭০, ২৬৭১)
  • – কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না । (মহান আল্লাহর বাণী – সূরা মায়েদা  আয়াত –  ৯৫-৯৬)
  • – জংলী গাদা হাদিয়া দিলে তা নেওয়া যাবেনা। (বোখারী হাদিস নং – ১৭০৮)
  • – কোন  ঝগড়া-ঝাটি করা যাবেনা। ( মহান আল্লাহর বাণী – সূরা বাকারা আয়াত -১৯৭)
  • – ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা যাবে। (বোখারী হাদিস নং – ১৭১৮)
  • – সিঙ্গা লাগানো যাবে।  (বোখারী হাদিস নং – ১৭১৭)
  • – ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই  গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না। (মুসলিম  হাদিস নং – ৩১৭২)
  • অশ্লীল আচরণ ও দুষ্কর্ম করা যাবে না। (মুসলিম ৩য় খন্ড,  হাদিস নং – ৩১৬১)
  • – নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না।
  • – ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে। ক্ষতি করে না, এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।

মসজিদে হারামে প্রবেশ ?

ইব্রাহিম ইবনে মুনযির (র)…. ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  (সা) সানিয়া উলয়া (হরমের উত্তর পূর্ব দিকে  কাদা নামক স্থান দিয়ে )  মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং সানিয়্যা সুফলা(হরমের দক্ষিণ পচ্ছিম দিকে  কুদা নামক স্থান) দিয়ে বের হতেন।

 (বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৮০)

ওমরা উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ وَ الصّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِأ  عُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ  وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ  مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ  اَللهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحَمَتِكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতনিহিল ক্বদিমি মিনাশশায়ত্বানির রজিম। আল্লহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা।

কাবা শরীফে প্রবেশ

কাবা শরীফে প্রবেশ

কাবা ঘর দেখে এ দোয়া পড়া ?

اَللَّهُمَّ أَنْتَ السّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ حَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ  اَللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيْفاً  وَ تَعْظِيْماً وَ تَكْرِيْماً وَ مَهَاَبَةً وَ زِدْ مَنْ شَرّفَهُ وَ كَرّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَاعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ بِرُّا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতাস সালামু ওয়া মিনংকাস সালামু হাইয়্যিনা রব্বানা বিস্‌সালাম। আল্লাহুম্মা যিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তা’জিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মাহাআবতাও ; ওয়া জিদ মান শার্‌রফাহু ওয়া কার্‌রমাহু মিম্মান হাজ্জাহু ওয়া’তামারহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তা’জিমান ওয়া বির্‌র।

কাবা শরীফ দেখে দোয়া পড়া

কাবা শরীফ দেখে দোয়া পড়া

(২)  তাওয়াফ করা ( ফরজ ) ?

ওমরার দ্বিতীয় ফরজ কাজ হলো কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, ইসতেলাম (স্পর্শ) বা হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোনায় দাঁড়িয়ে কাবার দিকে ফিরে দুই হাত দিয়ে ইশারা করে পুরুষরা ইজতিবা ও রমলসহ আর নারীরা সাধারণভাবে তাওয়াফ শুরু করবে আর এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَر – اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و بصديقًا بِكِتَابِكَ وَرَفَعًا بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লহু আকবার; আল্লহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া বাচঁদিক্বম্মা বিকিতাবিকা ওয়া রাফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা।’

কাবা শরীফ তাওয়াফ করা

কাবা শরীফ তাওয়াফ করা

তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাম দিকে রেখে রোকনে শামি ও রোকনে ইরাকি অতিক্রম করে রোকনে ইয়ামেনিতে আসবে। এ স্থানে তালবিয়া, তাকবির তাসবিহ ইত্যাদি পড়বে।

অতঃপর (সম্ভব হলে) রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করবে। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবে এবং কুরআনে শেখানো এ দোয়া পড়বে-

رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’

হাজরে আসওয়াদ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এক চক্কর সম্পন্ন হবে। এভাবে সাত চক্কর দেয়ার মাধ্যমে পুরো এক (ফরজ) তাওয়াফ সম্পন্ন হবে।

ইজতিবা ও রমল ?

ফরজ তাওয়াফের জন্য পুরুষরা ইজতিবা ও রমল করবে। এটি নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

ইজতিবা

পুরুষরা গায়ের চাদরটিকে মুঠিবদ্ধ করে বাম কাধের ওপর দিয়ে পিঠ ঘুরিয়ে ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বুকের ওপর থেকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে ফেলা। এভাবে বাহাদুরি সুলভ আচরণ প্রকাশে গায়ের চাদর পরাই হলো ইজতেবা। আর এটা করা সুন্নাত।

রমল

ফরজ তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রমল করাও সুন্নাত। দুই হাত শরীর ও কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে দ্রুত গতিতে প্রথম ৩ চক্কর সম্পন্ন করা। এভাবে তাওয়াফ করাকে রমল বলে।

রমল করে তাওয়াফ করা

রমল করে তাওয়াফ করা

তাওয়াফে রমল ও ইজতিবা পুরুষের জন্য পালন করা সুন্নাত। এটা নারীদের জন্য নয়।

হাদিসের বর্ণনায় –
মুহাম্মদ ইবনু ’উবাইদ (ইবনু মায়মূন) (রহঃ) … ইবনু ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ-ই-কুদূমের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন ও পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা’য়ীর সময় বাতনে মসীলে দ্রুত চলতেন। আমি (’উবাইদুল্লাহ) নাফি’ কে বললাম, ’আবদুল্লাহ (রাঃ) কি রুকন ইয়ামানীতে পৌছে হেঁটে চলতেন? তিনি বললেন, না। তবে হাজরে আসওয়াদের নিকট ভীড় হলে (একটুখানি মন্থর গতিতে চলতেন), কারন তিনি তা চুম্বন না করে সরে যেতেন না।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ১৫৪২ ই ফা বা / ১৬৪৪ আন্তঃ )

মাকামে ইব্রাহিমের নামাজ ?

তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহিমে কিংবা মাকামে ইবরাহিমের ওই দিকটায় ২ রাকাআত নামাজ আদায় করা। নারীদের নামাজের জন্য ওই দিকটায় নির্ধারিত স্থানও রয়েছে।

ঝমঝমের পানি পান ?

মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করে ঝমঝমের পানি পান করে নেয়া। মাতআফের চর্তুদিকে ঝমঝমের পানির ঝার/ড্রাম রয়েছে। যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ঝমঝমের গরম পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।

ঝমঝম কূপের পানি পান করা

ঝমঝম কূপের পানি পান করা

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে, ‘জমজমের এ পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নাত। বরকত ও উপকার পাওয়ার আশায় জমজমের পানি পান করার সময় এ দোয়া করাও উত্তম-

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ

উচ্চারণ : ‘আল্লহুম্মা ইন্নি আস’আলুকা ইলমান নাফি’আ, ওয়ারিজকন ওয়াসিয়া, ওয়াশিফা’আন মিন কুল্লি দায়িন।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্থ রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’

(দারা কুতনী, আব্দুর রাজ্জাক ও হাকেম)

ওমরাহর ওয়াজিব ?

১ সাফা মারওয়া পাহাড় সাঈ করা ?

‘সাঈ’ শব্দের অর্থ হলো দৌড়ানো। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাত বার দৌড়ানোকে সাঈ বলে। ‘সাঈ’ বাইতুল্লায় হজ পালন ও ওমরা জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি।

‘সাঈ’ পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করতে হয়। হেঁটে সাঈ করতে অপারগ হলে বাহনের সাহায্যেও আদায় করা যায়। তবে বিনা ওজরে বাহন ব্যবহার করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব হয়।

সাফা মারওয়া পাহাড় সাঈ করা

সাফা মারওয়া পাহাড় সাঈ করা

সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোই হলো সাঈ-এর রোকন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ব্যতীত এদিক-ওদিক অথবা অন্য কোথাও দৌড়ালে ‘সাঈ’ আদায় হবে না।

সাঈ হলো হজের রোকন। হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারিত নিয়মে সাঈ করতে হয়। এটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহে হজ এবং ওমরা সম্পন্ন করে; তার জন্য এ (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোনো পাপ নেই।’

(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)

ইহরাম বাধার স্থান বা মিকাত। …………………..

সাফা মারওয়া দৌড়ানোর ইতিহাস –

ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, ইবরাহিম (আ) আল্লাহর আদেশে তার স্ত্রী হাজেরা (আ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ) কে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ সাফা ও মারওয়ার কাছে মরুভূমিতে রেখে আসেন। তাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাজেরা পানির জন্য এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাওয়া আসা করেন। এসময় তিনি ইসমাইল (আ) কে রেখে যান।

প্রথমে তিনি আশেপাশের এলাকা দেখার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠেন। তিনি কোনো কাফেলার সন্ধান পাওয়ার আশায় ছিলেন যাতে তাদের কাছ থেকে সামান্য পানি চেয়ে পিপাসা মেটানো যায়। কিছু না দেখার পর তিনি পার্শ্ববর্তী মারওয়া পাহাড়ে উঠেন। মূলত, মরুভুমিতে মরিচিকা দেখে পানির আশায় তিনি দৌড়ে যান। বারবার তার দৃষ্টিভ্রম হয় এবং সামান্য পানি পাওয়ার আশায় এভাবে সাতবার চলাচলের পর ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে ক্রন্দনরত শিশু ইসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বের হচ্ছে। মূলত, ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ) এর আঘাতে এই পানির ধারাটি সৃষ্টি হয়। বিবি হাজেরা এই ঝর্ণা পাথর দিয়ে বেধে দেন। এরপর থেকে এটি জমজম কুয়া নামে পরিচিত হয়।

বিস্তারিত জানতে – ( বুখারী সহীহ হাদিস – ৩১২৫, ১৫৪১ ই ফা বা/৩৩৬৪, ১৬৪৩ আন্তঃ, মুসলিম সহীহ হাদিস – ২৮৬৯ ই ফা বা )

সাঈতে করণীয় ?

কাবা শরিফ তাওয়াফের পর মাকাকে ইবরাহিমে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে মসজিদে হারামের বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ে আরোহন করা। সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে এ আয়াত পাঠ করা-

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

উচ্চারণ : ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামার ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাও ওয়াআ খইরং ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলিম।’

(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)

 

এ আয়াতটি সাফা পাহাড়ের ওপরে গম্বুজের মধ্যে লেখা রয়েছে। চাইলে যে কেউ তা দেখে দেখেও পড়ে নিতে পারবেন।

– সাফা পাহাড় থেকে কাবা শরিফ দেখা যায়। কাবার দিকে ফিরে আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আকবার (اَلْحَمْدُ لِلَّهِ اَللهُ اَكْبَر) বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

– অতঃপর এ দোয়াটি ৩ বার পড়ে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়ার দিকে চলা শুরু করা-

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – لَهُ المُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَ يُمِيْتُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيئ قَدِيْرلَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ – وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াল্লহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযাামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।’

 

সবুজ চিহ্নিত স্থান ?

সাফা পাহাড় থেকে চলা শুরু করতেই পড়বে ‘সবুজ চিহ্নিত স্থান’। এ স্থানটিকে লাইট দিয়ে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। পুরুষরা এ স্থানটি দৌড়ে অতিক্রম করবে আর নারীরা স্বাভাবিকভাবে হেটে হেটে অতিক্রম করবে।

সবুজ চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া পড়া-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ

উচ্চারণ : ‘রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরম।’

সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক গতিতে হাটবে। আর তাসবিহ পড়বে-

اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُاَللَّهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَ كَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লহু আকবার, আল্লহু আকবার, আল্লহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। আল্লহুম্মা হাব্বিব ইলাইনাল ইমানা ওয়া কাররিহ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসুক্বা ওয়াল ইসয়ানা ওয়াঝআলনা মিন ইবাদিকাস সলিহিন।’

মারওয়া পাহাড়ে আরোহন ?

সাফা থেকে গিয়ে মারওয়া পাহাড়ে ওঠা। সেখানে গিয়ে আবার সাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। সেখানে এ দোয়া পড়া-

اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ – لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ صَدَقَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُوَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَفِرُوْنَ – رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُإِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

উচ্চারণ : আল্লহু আকবার, আল্লহু আকবার, আল্লহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহু সদাক্বা ওয়াদাহু ওয়া নাসর আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু; লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়া লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসিনা লাহুদদ্বীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরুন। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরম। ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।’

সাফা পাহাড়ে আসার সময়ও সবুজ চিহ্নিত স্থানে আগের নিয়মে পুরুষরা দ্রুত আর নারীরা স্বাভাবিকভাবে হেটে হেটে আসবে পূর্বোল্লিখিত দোয়া পড়া-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরম।’

এভাবে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৭ বার চলাচলের মাধ্যমে সাঈ সম্পন্ন হবে। সাঈ শেষ হলে এ দোয়া পড়া-

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الَعَلِيْمُ – وَ تُبْ عَلَيْنَا اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحَيْمُوَ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى خَيْرِ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَّاَلِهِ وَ اَصْحَابِهِ اَجْمَعِيْنَ وَارْحَمْنَا مَعَهُمْ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা তাক্বব্বাল মিন্না ইন্নাকা আংতাছ্ ছামিউল আলিম। ওয়অতুব্ আলাইনা ইন্নাকা আংতাত্ তাওয়্যাবুর্ রহিম। ওয়া সল্লাল্লাহু তাআলা আলা খাইরি খলক্বিহি মুহাম্মাদিউ ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন ওয়ারহামনা মাআহুম বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমিন।’

 (২) মাথার চুল মুণ্ডন বা চুল কাটা ?

মাথার চুল মুণ্ডন বা চুল কাটা হজ ও ওমরাহর ওয়াজিব বিধান। কারণ, মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন ছাড়া ইহরামের নিষেধাজ্ঞা গুলো শেষ হয় না। ওমরাহতে মাথা মুন্ডন করতে হয় সায়ি করার পর মারওয়ায়, আর হজে কোরবানির পর মিনায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন ,

মুহাম্মদ ইবনে আবু বাকর (র.) … ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা:) মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন , তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ শেষ করে এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা ছেটে হালাল হয়ে যায়।

( বুখারীঃ অধ্যায় হজ্ব হাদিস নং ১৬২৩)

মাথার চুল মুন্ডল বা ছাটা

মাথার চুল মুন্ডল বা ছাটা

হজে মাথার চুল মুণ্ডনের ফজিলত ?

হজ ও ওমরায় মাথা মুণ্ডনকে ছাঁটা অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মাথা মুণ্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে তিনবার দোয়া করা হয়েছে। তাই হাজীদের জন্য মাথা মুণ্ডনই উত্তম। নবীজি (সা.) স্বয়ং মাথা মুণ্ডনকে পছন্দ করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুব (র:)…. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইয়া  আল্লাহ! মাথা মুণ্ডন কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ  বললেন, ইয়া  রাসূলুল্লাহ (সা.)! যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও? ইয়া  আল্লাহ! মাথা মুণ্ডন কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ  বললেন, ইয়া  রাসূলুল্লাহ (সা.)! যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও।  এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (র.) বলেছেন , আমাকে নাফি (র.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা মাথামুণ্ডন কারীদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার বা তিনবার বলেছেন।  রাবি বলেন উবায়দুল্লাহ (র.) নাফি (র.) থেকে বর্ণনা করেন , চতুর্থবার বলেছেন : চুল যারা ছুট করেছে তাদের প্রতিও।

(বোখারী : অধ্যায় – হজ,  হাদিস নং :১৬১৯ , মুসলিম : অধ্যায় – হজ , হাদিস নং ৩০১৫)

 মাথা ডান দিক থেকে মুণ্ডন সুন্নত ?

মাথা মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে শুধু মুণ্ডন করলেই সওয়াবের পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। এতে সুন্নত তরিকার অবলম্বন করতে হবে। ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান সুন্নত। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য উচিত ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান শুরু করা। এভাবেই নবী করিম (সা.) হজে স্বীয় মাথা মোবারক মুণ্ডন করতেন।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিনায় পৌঁছে প্রথমে জামরাতে গেলেন এবং তাতে কঙ্কর মারলেন। অতঃপর মিনায় অবস্থিত তার ডেরায় গেলেন এবং কোরবানির পশুগুলো জবেহ করলেন, তৎপর নাপিত ডাকলেন এবং তাকে আপন মাথার ডান দিক বাড়িয়ে দিলেন। সে তা মুণ্ডন করল। তিনি আবু তালহা আনসারিকে ডেকে কেশগুচ্ছ দিলেন। অতঃপর নাপিতকে মাথার বাম দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডাও; সে মুণ্ডাল। আর তিনি তা সেই আবু তালহাকে দিয়ে বললেন, যাও মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’

(সহীহ তিরমিযী, মুসলিম: হাদিস নং -৯১২, ৩০২২)

 স্ত্রী লোকের জন্য শুধু মাথার চুল ছাঁটান জায়েজ ?

 ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা উভয়টি জায়েজ।

নারীদের মাথার চুল ছাটা

নারীদের মাথার চুল ছাটা

কিন্তু হজ বা ওমরা পালনকারী নারীর ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল কর্তন জায়েজ, মুণ্ডন জায়েজ নেই।

নবী করিম (সা.) হজ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটান।’

 ( আবু দাউদ হাদিস : ১৯৮0 )

অজু করার নিয়ম। …………

ইহরাম বাধার স্থান বা মিকাত। …………………..

ধর্মীয় সম্পর্কে আরও কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন। ……………

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে ওমরাহ পালন  করার তওফিক দান করুন।

 

  আমিন।

শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইল। ………………………..

 

Leave a Reply