Skip to content

অজু কি অজু করার নিয়ম?

অজু কি অজু করার নিয়ম?

অযু-

অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। নামাজ ছাড়াও আমাদের বিভিন্ন কার্যক্ষেত্রে ওযু করে নিতে হয়।এখন আমরা ওযুর ফরজ, সুন্নত, ওয়াজীব ও মুস্তাহাব সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিব। কুরআনে আছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত:২২২)।

স্থান বা  কার্যভেদে ওযুর ধরন

স্থান বা  কার্যভেদে ওযুর চার ধরনের ওযু ইসলামে চার ধরনের হয় –

১. ফরজ অযু

২. ওয়াজিব অযু

৩. সুন্নত অযু

৪. মুস্তাহাব অযু

যে যে অবস্থায় অযু ফরজ

১. প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রে অযু ফরয, সে নামায ফরয হোক বা ওয়াজিবই হোক, সুন্নাত বা নফলই হোক ।

২. যানাযার নামাযে অযু করা ফরয ।

৩. তিলাওয়াতের সিজদায়ে অযু করা ফরজ।

 

যেসব অবস্থায় ওযু ওয়াজিব

১. কাবা শরীফ তাওয়াফের ক্ষেত্রে।

২. কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে।

যেসব অবস্থায় অজু সুন্নত

১. ঘুমানোর পূর্বে অযু করা সুন্নাত।

২. গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নাত

যে যে অবস্থায় অজু মুস্তাহাব

১. আযান ও তাকবীর অজু মুস্তাহাব।

২. খুতবা পাঠের সময়-জুমার খুত্বা হোক বা বিবাহের খুত্ব হোক ।

৩. দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার সময়কালে।

৪. যিকরে ইলাহীর সময়ে।

৫. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে।

৬. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পরে।

৭. রাসূল (সা)-এর রওযা মুবারক যিয়ারতকালে।

৮. আরফার মাঠে অবস্থানের সময়কালে।

৯. সাফা ও মারওয়া দৌড়ানোর সময়কালে।

১০. জানাবাত অবস্থায় খাবার পূর্বে।

১১. হায়িয-নিফাসের সময় প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে।

১১. সর্বদা অযু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব বলে গণ্য।

ওজুর পদ্ধতি:

ওজু করার দুটো পদ্ধতি রয়েছে-

ক. ফরয পদ্ধতি।

খ. সুন্নাত পদ্ধতি।

ক. ফরয পদ্ধতি। সেটা হচ্ছে-

১। সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা। এর মধ্যে- গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়াও অন্তর্ভুক্ত হবে।

২। কনুই পর্যন্ত হাত একবার ধৌত করা।

৩। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা। এর মধ্যে কানদ্বয় মাসেহ করাও অন্তর্ভুক্ত হবে।

৪। দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা।

পূর্বোক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘একবার’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কোন অংশ যেন ধোয়া থেকে বাদ না পড়ে।

এ কাজগুলো ওজুর ফরয হওয়ার পক্ষে দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী:

“হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও; এবং যদি তোমরা জুনুবী অবস্থায় থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে, বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে: তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]

ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম। ………

খ. সুন্নাত পদ্ধতি:

যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে; ওযুর বিস্তারিত পদ্ধতি নিম্নরূপ:

১। ব্যক্তি নিজে পবিত্রতা অর্জন ও হাদাস (ওজু না থাকার অবস্থা) দূর করার নিয়ত করবে। তবে নিয়ত উচ্চারণ করবে না। কেননা নিয়তের স্থান হচ্ছে- অন্তর। সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেই নিয়তের স্থান অন্তর।

২। বিসমিল্লাহ বলবে।

৩। হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করবে।

৪। এরপর তিনবার গড়গড়া কুলি করবে (গড়গড়া কুলি: মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো)। বাম হাত দিয়ে তিনবার নাকে পানি দিবে ও তিনবার নাক থেকে পানি ঝেড়ে ফেলে দিবে। ‘ইস্তিনশাক’ শব্দের অর্থ- নাকের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করানো। আর ‘ইস্তিনসার’ শব্দের অর্থ- নাক থেকে পানি বের করে ফেলা।

৫। মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করবে। মুখমণ্ডলের সীমানা হচ্ছে- দৈর্ঘ্যে মাথার স্বাভাবিক চুল গজাবার স্থান থেকে দুই চোয়ালের মিলনস্থল ও থুতনি পর্যন্ত। প্রস্থে ডান কান থেকে বাম কান পর্যন্ত। ব্যক্তি তার দাঁড়ি ধৌত করবে। যদি দাঁড়ি পাতলা হয় তাহলে দাঁড়ির ওপর ও অভ্যন্তর উভয়টা ধৌত করবে। আর যদি দাঁড়ি এত ঘন হয় যে চামড়া দেখা যায় না তাহলে দাঁড়ির ওপরের অংশ ধৌত করবে, আর দাঁড়ি খিলাল করবে।

৬। এরপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। হাতের সীমানা হচ্ছে- হাতের নখসহ আঙ্গুলের ডগা থেকে বাহুর প্রথমাংশ পর্যন্ত। ওজু করার আগে হাতের মধ্যে আঠা, মাটি, রঙ বা এ জাতীয় এমন কিছু লেগে থাকলে যেগুলো চামড়াতে পানি পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেগুলো দূর করতে হবে।

৭। অতঃপর নতুন পানি দিয়ে মাথা ও কানদ্বয় একবার মাসেহ করবে; হাত ধোয়ার পর হাতের তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয়। মাসেহ করার পদ্ধতি হচ্ছে- পানিতে ভেজা হাতদ্বয় মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে নিবে; এরপর পুনরায় যেখান থেকে শুরু করেছে সেখানে ফিরিয়ে আনবে। এরপর দুই হাতের তর্জনী আঙ্গুল কানের ছিদ্রতে প্রবেশ করাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের পিঠদ্বয় মাসেহ করবে। আর মহিলার মাথার চুল ছেড়ে দেয়া থাকুক কিংবা বাঁধা থাকুক; মাথার সামনের অংশ থেকে ঘাড়ের ওপর যেখানে চুল গজায় সেখান পর্যন্ত মাসেহ করবে। মাথার লম্বা চুল যদি পিঠের ওপর পড়ে থাকে সে চুল মাসেহ করতে হবে না।

৮। এরপর দুই পায়ের কা’ব বা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করবে। কা’ব বলা হয় পায়ের গোছার নিম্নাংশের উঁচু হয়ে থাকা হাড্ডিদ্বয়কে। দলিল হচ্ছে ইতিপূর্বে উল্লেখিত উসমান (রাঃ) এর ক্রীতদাস হুমরান এর বর্ণনা যে, একবার উসমান বিন আফফান (রাঃ) ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), উসমান (রাঃ) হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধুইলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুইলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। অতঃপর অনুরূপভাবে বাম পা ধুইলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওযুর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”

[সহিহ মুসলিম, ত্বহারাত ৩৩১]

ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম। ………

ওজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত

পানির ধরন-

অনুমোদিত পানির ধরন

  • ঝর্ণা, সাগর ও নদীর জল।
  • বরফ গলা জল।
  • বড় পুকুর বা ট্যাঙ্কের জল।
  • বৃষ্টির জল।
  • কূয়ার জল।
  • প্রবহমান জল।

অননুমোদিত পানির ধরন

  • অপরিচ্ছন্ন বা অপরিষ্কার পানি।
  • গাছ বা ফল নিঃসৃত পানি।
  • কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গাঢ়ত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
  • অল্প পরিমাণ পানি যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ।
  • অযু বা গোসলের ব্যবহৃত পানি।
  • অপবিত্র (হারাম) প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির আবশিষ্ট।

 

ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম। ………

Share with friends ………..

Share your valuable words..............

Your email address will not be published. Required fields are marked *