বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা- ওযু
ওযু কি? ওযু সম্পর্কে ইসলামের বিধান ?
ওযু কি – আসসালামু আলাইকুম ,অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। নামাজ ছাড়াও আমাদের বিভিন্ন কার্যক্ষেত্রে ওযু করে নিতে হয়।এখন আমরা ওযুর ফরজ, সুন্নত, ওয়াজীব ও মুস্তাহাব সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিব।
মহান আল্লাহতায়ালা বলেন ,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
অর্থ : হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
( সূরা মায়েদা আয়াত: ৬)
মহান আল্লাহতায়ালা আরও অন্য আয়াতে বলেন ,
“وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ هُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡهُنَّ حَتّٰی یَطۡهُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَهَّرۡنَ فَاۡتُوۡهُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ
অর্থ : আর তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।”
( সূরা বাকারা আয়াত:২২২ )
স্থান বা কার্যভেদে ওযুর ধরন –
স্থান বা কার্যভেদে ওযু ইসলামে চার ধরনের হয় –
১. ফরজ অযু
২. ওয়াজিব অযু
৩. সুন্নত অযু
৪. মুস্তাহাব অযু
যে অবস্থায় অযু ফরজ –
১. প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রে অযু ফরজ, সে নামায ফরয হোক বা ওয়াজিবই হোক, সুন্নাত বা নফলই হোক ।
২. যানাযার নামাযে অযু করা ফরজ ।
৩. তিলাওয়াতের সিজদায়ে অযু করা ফরজ।
যে অবস্থায় ওযু ওয়াজিব –
১. কাবা শরীফ তাওয়াফের ক্ষেত্রে।
২. কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে। (সূরা ওয়াকিয়া আয়াত-৭৯, মোয়াত্তা মালেক হাদিস -৪৫৬)
সূচিপত্র ( নামাজ শিক্ষা বই )……………
যে অবস্থায় অজু সুন্নত –
১. ঘুমানোর পূর্বে অযু করা সুন্নাত।
২. গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নাত ।
যে অবস্থায় অজু মুস্তাহাব –
১. আযান ও তাকবীর অজু মুস্তাহাব।
২. খুতবা পাঠের সময়-জুমার খুত্বা হোক বা বিবাহের খুত্ব হোক ।
৩. দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার সময়কালে।
৪. যিকরে ইলাহীর সময়ে।
৫. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে।
৬. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পরে।
৭. রাসূল (সা)-এর রওযা মুবারক যিয়ারতকালে।
৮. আরফার মাঠে অবস্থানের সময়কালে।
৯. সাফা ও মারওয়া দৌড়ানোর সময়কালে।
১০. জানাবাত অবস্থায় খাবার পূর্বে।
১১. হায়িয-নিফাসের সময় প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে।
১১. সর্বদা অযু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব বলে গণ্য।
ওযু এক – তিন বার ধোয়ার বর্ণনা :
আবু আব্দুল্লাহ বুখারী (র) থেকে বর্ণিত :
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেছেন :ওযুর ফরয হল এক বার করে অঙ্গ গুলো ধোয়া।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু-দুবার করে এবং তিন-তিনবার করেও উযু করেছেন, কিন্তু তিনবারের বেশি ধৌত করেনি। পানির অপচয় করা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমলের সীমা অতিক্রম করাকে উলামায়ে কিরাম মাকরূহ বলেছেন।
( সহীহ বুখারী, পরিচ্ছেদ- ৯৬, ১৮৫,১৮৬,১৯২,১৯৯ ইস:ফা:, মুসলিম সহীহ হাদিস নং – ২৩৫ ই ফা বা )
ওজুর পদ্ধতি :
ওজু করার দুটো পদ্ধতি রয়েছে-
ক. ফরয পদ্ধতি।
খ. সুন্নাত পদ্ধতি।
ক. ফরয পদ্ধতি। সেটা হচ্ছে-
১। সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা। এর মধ্যে- গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়াও অন্তর্ভুক্ত হবে।
২। কনুই পর্যন্ত হাত একবার ধৌত করা।
৩। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা। এর মধ্যে কানদ্বয় মাসেহ করাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
৪। দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা।
পূর্বোক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘একবার’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কোন অংশ যেন ধোয়া থেকে বাদ না পড়ে।
( সূরা মায়েদা আয়াত: ৬)
খ. সুন্নাত পদ্ধতি: যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে; ওযুর বিস্তারিত পদ্ধতি নিম্নরূপ:
হাদিসের বাণী ………..
মুহাম্মদ ইবনুস সাব্বাহ (র) ….. আব্দুল্লাহ ইব্ন যায়দ ইব্ন আসিম আনসারী (রা) যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। রাবী বলেন, তাকে বলা হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর ওযুর মত ওযু করে আমাদের দেখিয়ে দিন।
তখন তিনি পানির পাত্র আনালেন-
১। ব্যক্তি নিজে পবিত্রতা অর্জন ও হাদাস (ওজু না থাকার অবস্থা) দূর করার নিয়ত করবে। তবে নিয়ত উচ্চারণ করবে না। কেননা নিয়তের স্থান হচ্ছে- অন্তর। সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেই নিয়তের স্থান অন্তর।
( সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং -৭৫ ইস:ফা: )
২। ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।
(আবু দাঊদ সহীহ হাদিস নং-১০১, তিরমিযী-২৫, নাসাঈ সহীহ হাদিস নং -৭৮ ইস:ফা:, ইব্নে মাজাহ হাসান হাদিস – ৩৯৭,৩৯৮ , তিরমিজী হাসান হাদিস – ২৫ ই ফা বা , মিশকাত সহীহ হাদিস – ৪০২ ই ফা বা )
৩। হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করবে।
– আংগুল গুলো খিলাল করা।
( সুনান আন নাসাঈ সহীহ হাদিস নং – ১১৪ ইস:ফা: )
৪। এরপর তিনবার গড়গড়া কুলি করবে ।
– (গড়গড়া কুলি: মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো)।
( বুখারী সহীহ হাদিস – ১৮৫/১৯১ ই ফা বা /১৯২ আন্তঃ , মিশকাত সহীহ হাদিস – ৩৯৪ ই ফা বা ,মুসলিম সহীহ হাদিস নং – ৪৪৮ ই ফা বা/২৩৫ আন্তঃ)
৫। বাম হাত দিয়ে তিনবার নাকে পানি দিবে ও তিনবার নাক থেকে পানি ঝেড়ে ফেলে দিবে।
– ‘ইস্তিনশাক’ শব্দের অর্থ- নাকের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করানো। আর ‘ইস্তিনসার’ শব্দের অর্থ- নাক থেকে পানি বের করে ফেলা।
৬। মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করবে।
– মুখমণ্ডলের সীমানা হচ্ছে- দৈর্ঘ্যে মাথার স্বাভাবিক চুল গজাবার স্থান থেকে দুই চোয়ালের মিলনস্থল ও থুতনি পর্যন্ত। প্রস্থে ডান কান থেকে বাম কান পর্যন্ত। ব্যক্তি তার দাঁড়ি ধৌত করবে। যদি দাঁড়ি পাতলা হয় তাহলে দাঁড়ির ওপর ও অভ্যন্তর উভয়টা ধৌত করবে।
– আর যদি দাঁড়ি এত ঘন হয় যে চামড়া দেখা যায় না তাহলে দাঁড়ির ওপরের অংশ ধৌত করবে, আর দাঁড়ি খিলাল করবে।
( সুনান ইবনে মাজাহ – ৪২৯-৪৩৩ ইস:ফা:)
৭। এরপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।
– হাতের সীমানা হচ্ছে- হাতের নখসহ আঙ্গুলের ডগা থেকে বাহুর প্রথমাংশ পর্যন্ত। ওজু করার আগে হাতের মধ্যে আঠা, মাটি, রঙ বা এ জাতীয় এমন কিছু লেগে থাকলে যেগুলো চামড়াতে পানি পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেগুলো দূর করতে হবে।
( সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং – ১১৬ ইস:ফা: )
৮। অতঃপর নতুন পানি দিয়ে মাথা ও কানদ্বয় একবার মাসেহ করবে; হাত ধোয়ার পর হাতের তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয়।
– উভয়ই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত।
( সুনান ইবনে মাজাহ – ৪৪৩-৪৪৫ ইস:ফা: )
– মাসেহ করার পদ্ধতি হচ্ছে- পানিতে ভেজা হাতদ্বয় মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে নিবে; এরপর পুনরায় যেখান থেকে শুরু করেছে সেখানে ফিরিয়ে আনবে। এরপর দুই হাতের তর্জনী আঙ্গুল কানের ছিদ্রতে প্রবেশ করাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের পিঠদ্বয় মাসেহ করবে।
( ইবনে মাজাহ হাসান হাদিস – ৪৩৯ ই ফা বা , তিরমিজী হাসান হাদিস – ৩৬ ই ফা বা, আবূ দাঊদ হাসান হাদিস – ১৩৭ ই ফা বা )
– আর মহিলার মাথার চুল ছেড়ে দেয়া থাকুক কিংবা বাঁধা থাকুক; মাথার সামনের অংশ থেকে ঘাড়ের ওপর যেখানে চুল গজায় সেখান পর্যন্ত মাসেহ করবে। মাথার লম্বা চুল যদি পিঠের ওপর পড়ে থাকে সে চুল মাসেহ করতে হবে না।
( সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং – ১০০ ইস:ফা: )
৯ । এরপর দুই পায়ের কা’ব বা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করবে।
– কা’ব বলা হয় পায়ের গোছার নিম্নাংশের উঁচু হয়ে থাকা হাড্ডিদ্বয়কে ।
– আংগুল গুলো খিলাল করা।
( সুনান আন-নাসাঈ হাদিস নং: ১১৪ ইস:ফা:, সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ৪৪৮, ৪৫০ ইস:ফা:/ ২৩৫ আন্তঃ)
ওযু শেষে দোয়া ( মুস্তাহাব ) –
নবী করিম (সা:) বলেছেন – তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ন রূপে ওযু করে এই দোয়া টি পাঠ করবে “আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহ”। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
( সহীহ মুসলিম, সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং- ৪৪৬, ১৪৮ ইস:ফা:)
কাপড়ের মোযা ও চপ্পল বা জুতার উপর মাসহে করা –
হান্নাদ ও মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ….. মুগীরা ইবনু শু’বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার সময় কাপড়ের মোযা ও চপ্পলের উপর মাসেহ করছেন।
( তিরমিজী সহীহ হাদিস : ৯৯ ই ফা বা , ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস: ৫৫৯, আন-নাসায়ী সহিহ হাদিস :১২৫, আবূ দাঊদ সহীহ হাদিস : ১৫৯, মিশকাত ৫২৩ )
চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করা –
হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) পেশাব করার পর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং তার চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ(মাসেহ) করলেন। তাকে বলা হল, আপনিও কি এরূপ করেন? তিনি বলেন, আমাকে কোন্ জিনিস তাতে বাধা দিবে? অথচ আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ করতে দেখেছি। ইব্রাহীম (রহঃ) বলেন, জারীর -এর হাদীস শুনে লোকেরা বিস্মিত হতো। কারণ তিনি সূরাহ আল-মায়িদাহ নাযিল হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
( ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস – ৫৪৩ )
মোজার উপরে মাসেহ করা-
আদম (রহঃ) ….. হাম্মাম ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও এরূপ করতে দেখেছি।
ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর (রাঃ) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
( বুখারী সহীহ হাদিস – ৩৮০ ই ফা বা /৩৮৭ আন্তঃ, মুসলিম সহীহ হাদিস -৫১৫ ই ফা বা / ২৭২ আন্তঃ, তিরমিজী সহীহ হাদিস – ৯৩,৯৪ ই ফা বা, আন-নাসাঈ হাদিস- ১১৮, আবূ দাঊদ হাসান হাদিস – ১৫৪ ই ফা বা )
পাগড়ীর উপর মাসাহ করা-
হুসায়ন ইবনু মনসূর (রহঃ) … বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মোজা ও পাগড়ির উপর মসেহ করতে দেখেছি।
( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১০৪, ১১৮ ই ফা বা )
ওযুর ফযীলত-
১। পবিত্রতা ঈমানের অংশ।
( সহীহ মুসলিম হাদিস নং – ৪২৭ ইস:ফা: )
২। ওযুর পানির সাথে সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম হাদিস নং – ৪৭০ ইস:ফা: )
সূচিপত্র ( নামাজ শিক্ষা বই )……………
ওজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত-
পানির ধরন –
অনুমোদিত পানির ধরন
- সাগর পানি। (সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং – ৫৯ ইস:ফা: )
- বরফ, বরফ গলা পানি। (সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং-৬০,৬১ ইস:ফা: )
- শিলা বৃষ্টির পানি। (সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং – ৬২ ইস:ফা: )
- বদ্ধ পানি। (সুনান আন নাসাঈ, হাদিস নং – ৫৭ ইস:ফা:)
- বৃষ্টির পানি। আল-কুরআনের বাণী, আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি -(২৫:৪৮)
- কূয়ার পানি। (সুনান ইবনে মাজাহ – ৫১৭)
- কোন জিনিস বা বস্তু পানিকে অপবিত্র করেনা, যখন পানির স্বাদ, গন্ধ, রং পরিবর্তন হয়, তখন পানি অপবিত্র হয় । (সুনান ইবনে মাজাহ – ৫২১)
- প্রবহমান পানি, নদীর পানি, ঝর্ণার পানি।
- বড় পুকুর বা ট্যাঙ্কের পানি,পানি দুই মটকার বেশি হলে অপবিত্র হয় না ।
অননুমোদিত পানির ধরন:
- নেশাকারক পানি। (সহীহ বুখারী হাদিস নং- ২৪১)
- গাছ বা ফল নিঃসৃত পানি।
- কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গাঢ়ত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
- অল্প পরিমাণ পানি যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ।
- অপবিত্র (হারাম) প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও অন্যান্য হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির আবশিষ্ট তবে পানি দুই মটকার বেশি হলে অপবিত্র হয় না । (আবু দাঊদ হাদিস নং – ৬৩)
অযু ভঙ্গের কারণ ?
অযুর চারটি ফরজ কাজ। এর যে কোন একটি বাদ গেলে অযু হয় না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার সাথে ফরজ কাজ পুনরায় করে অযু শুদ্ধ করে নিতে হয়। কোন ব্যক্তি অযু করার পর কিছু নির্দিষ্ট কাজ না করলে তার অযু বলবৎ থাকে এবং ঐ কাজগুলো করার মাধ্যমে অযু নষ্ট হয় যাকে অযু ভঙ্গের কারণ বলে।
কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে অযু ভঙ্গের কারণ:
নামাজ পড়ার পূর্বশর্ত হলো অজু করা। নামাজ যেমন জান্নাতের চাবি তেমনি অজু নামাজের চাবি। অজু ছাড়া নামাজ হয় না , অজু করার পর যদি ভেঙে যায়, তখন নতুন করে অজু করে নিতে হয় । অজুর সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।
অজু ভাঙার কারণ কয়টি ও কী কী তা জেনে রাখা ভালো। নিন্মে তা সংক্ষেপে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।
অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাক্রমে-
১। পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’
( সুরা মায়িদা আয়াত : ০৬ )
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়…।’
( সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি হাদিস : ৫৬৮)
২। রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন।
( মুয়াত্তা মালিক হাদিস : ১১০)
৩। মুখ ভরে বমি করা-
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবাসের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’
( সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস : ১২২১)
৪। থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া-
হাসান বসরি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না।
( মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)
৫। চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া-
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]
( মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)
৬। পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে-
হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে।
( মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)
৭। নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে-
ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’
( সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)
৮। উটের গোশত আহার করলে অযু করতে হবে –
আবূ কামিল ফুদায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ) … জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি বকরীর মাংস খেয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব? তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা উযূ করতেও পার আর নাও করতে পার। সে বলল, আমি কি উটের গোশত খেয়ে উযূ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উটের গোশত খেয়ে তুমি উযূ করবে। সে বলল, আমি কি বকরির ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, আমি কি উটের ঘরে সালাত আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, না।
( মুসলিম সহীহ হাদিস নং -৬৮৯ ই ফা বা/ ৩৬০ আন্তঃ )
সূচিপত্র ( নামাজ শিক্ষা বই )……………
অনুগ্রহ করে বেশি বেশি শেয়ার করুন ……………….