ওমরা হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম বাংলা ২০২৩?
হজ্জ ?
হজ্জ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো – ইচ্ছে করা, ঘোরাফেরা করা, সংকল্প করা, পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাবা শরিফ এবং নির্দিষ্ট স্থান সমূহে তাওয়াফ ও জিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো হজ্জ। এটি এমন ইবাদত যেখানে আর্থিক ও শারীরিক উভয়েই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানদের [“একবার হজ্জ পালন করা ফরজ “।
(সহীহ মুসলিম : অধ্যায়ঃ হজ্ব হাদিস নং -৩১২৭)]
হজ্জ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নির্দেশ……………..
فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
অর্থ ……..
এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইব্রাহীম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্ র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।
(সূরা আল ইমরান আয়াত-৯৭)
ওমরা হজ্জ কি?
ইসলামি পরিভাষায় উমরা অর্থ ইহরাম অবস্থায় কাবার চারপাশে তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যখানে সায়ি করাকে বোঝায়। হজ্জের সাথে এদিক থেকে উমরার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে হজ্জের গুরুত্ব উমরার চেয়ে বেশি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।
ওমরাহ সুন্নত , ফরজ না –
হাদিসের আলোকে এর দলিল হচ্ছে, মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল আ’লা আস সানআনি (র.)…. জাবির (রা:) থেকে বর্ণিত আছে যে , রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, এটা কি ওয়াজিব? তিনি বললেন না, তবে ওমরা করবে। এটা হল আফযাল।
ইমাম আবু ঈসা (র.)বলেন এই হাদীসটি হাসান সহীহ।এ হলো কোন কোন আলেমের অভিমত।তারা বলেন ওমরা ওয়াজিব নয় এবং এ কথাও বলা হতো যে হজ্জ্ব হলো দুটি। ইয়াওমুন নাহরে হল হজ্জে আকবার (বড় হজ্জ্ব ) আর হজ্জে আসগার হলো ওমরা (ছোট হজ্ব ). ঈমাম শাফিঈ(র.) বলেন ওমরা হলো সুন্নাত (অর্থাৎ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত অবশ্যই পালন করনীয় ইবাদত )এটি পরিত্যাগের কেউ অবকাশ রেখেছেন কিনা আমরা জানিনা। এটি নফল বলে কোন প্রতিষ্ঠিত প্রমান নেই। তিনি আরও বলেন নবী (সা:) থেকে নফল বলে যে রিওয়ায়াত আছে তা যঈফ। এই ধরনের রিওয়ায়াত দলিল হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয়। আমরা এটাও জেনেছি যে ইব্নে আব্বাস (রা:)এটিকে ওয়াজিব মনে করতেন।
(তিরমিযী হজ্ব অধ্যায়- হাদিস নং ৯৩৩)
রমজান মাসে ওমরাহ হজ্জ করার ফজিলত ?
মুসাদ্দাদ (র.)…ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নবী (সা:) এক আনসারী মহিলাকে বললেন : আমাদের সংঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের ? ইবনে আব্বাস (রা:) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে ) আরোহন করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী (সা:) বললেন : আচ্ছা , রমজান এলে তখন উমরা করে নিও। কেননা , রমজানের একটি উমরা একটি হজ্জের সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৬৬৭, ১৭৪১)
হজ্জ ও ওমরার মধ্যে পার্থক্য ?
এই পার্থক্যটা শুধু গুরুত্ব এবং পদ্ধতির মধ্যে-
যেমন–
১. হজ্জ ফরয- প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনকালে এটি পালন করা বাধ্যতামূলক যদি তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে এটি করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ওমরাহ হজ পালন করা সুন্নত।
২. হজ এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয় কিন্তু ওমরাহ বৎসরে যে কোন সময়ই করা যায়। তবে ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ।
৩. ওমরাহর মধ্যে আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান, দু’নামায এক সাথে আদায় করা ও খুতবার বিধান নেই। তাওয়াফে কুদূম এবং তাওয়াফে বিদা’ও নেই কিন্তু এই সব কাজ হজের মধ্যে রয়েছে।
৪.হজের মধ্যে জামরাতুল আক্বাবাহ’তে রামী (কংকর নিক্ষেপ) করার সময় তালবিয়াহ পড়া মওকূফ করা হয়। ওমরাহর মধ্যে তাওয়াফ আরম্ভ করার সময় তালবিয়াহ পড়া মওকুফ করা হয়।
৫. ওমরাহ নষ্ট হলে বা জানাবত (ওই নাপাকী যা দ্বারা গোসল ফরয হয়।) অবস্থায় তাওয়াফ করলে (দম হিসেবে) একটা ছাগল বা মেষ জবেহ করা যথেষ্ট, কিন্তু হজ পালনের সময় ইহা যথেষ্ট নয় বরং পরবর্তী বছর পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়।
যে ব্যক্তি হজ্জের আগে ওমরা আদায় করল ?
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ (র.)… ইকরিমা ইবনে খালিদ (র.) থেকে বর্ণিত , তিনি ইবন উমর (রা:) হজ্জের আগে , উমরা আদায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বললেন এতে কোন দোষ নেই। ইকরিমা (র.) বলেন , ইবনে উমর (রা:) বলেছেন , নবী (সা:) হজ্জের আগে ওমরা আদায় করেছেন। ইব্রাহিম ইবনে সা’দ (র) ইবনে ইসহাক (র) থেকে বর্ণনা কেন যে , ইকরিমা ইবন খালিদ (র)বলেছেন , আমি ইবন উমর (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম। পরবর্তী অংশটুক উক্ত হাদিসের অনুরুপ।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৬৫৯)
হজের ধারাবাহিক কাজ গুলো আগে পিছে করার বৈধতা-
’আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) … ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৬২৬)
ওমরাহর ফরজ এবং ওয়াজিব সমূহ-
ওমরাহর ফরজ –
দুইটি ফরজ:
(১) ইহরাম বাধা ।
(২) তাওয়াফ ।
ওমরাহর ওয়াজিব –
দুইটি ওয়াজিব:
(১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা ।
(২) মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা ।
ওমরা হজের কাজ গুলোর ধারাবাহিক নিয়ম ?
ওমরা হজের কাজ গুলো ধারাবাহিক নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো –
(১) ইহরাম বাধা –
ইহরামের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?
৩টি যথা :
- মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
- সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা।
- নিয়ত করার পর তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব।
ইহরাম বাধার পূর্বে করণীয়
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হওয়া –
- নখ কাটা।
- গোফ খাট করা।
- বোগল ও নাভির নীচের চুল কামানো ও তা পরিষ্কার করা।
- তবে ইহরামের পূর্বে পুরুষ ও মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিষয়ে কোন বিধান পাওয়া যায় না।
- উল্লেখ্য দাড়ি কোন অবস্থায়ই কাটা যাবে না।
- গোসল করাও মুস্তাহাব।
সুগন্ধি মাখা ( মুস্তাহাব ) ?
ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে সুগন্ধি মাখা মুস্তাহাব। কিন্তু এ সুগন্ধি কোথায় মাখতে হবে-
- মাথায়।
- দাড়িতে।
- সারা শরীরে মাখা যায়।
- মনে রাখতে হবে, মেয়েরা সুগন্ধি লাগাবে না।
নোট : ইহরাম পরিধানের পর যদি এর সুগন্ধ শরীরে থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই।
(বোখারী, মুসলিম অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৪৭, ২৬৯৫, ২৬৯৬)
পুরুষের ইহরামের কাপড় কেমন পড়বে ?
চাদরের মত দু’টুকরা কাপড় একটি নীচে পরবে, দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে।
- কাপড়গুলো সেলাইবিহীন হতে হবে।
- পরিচ্ছন্ন ও সাদা রং হওয়া মুস্তাহাব।
- মুহরিম ব্যক্তির কাপড় না থাকলে পায়জামা পড়তে পারবে (মুসলিম- হাদিস নং – ২৬৬৫)
- লুঙ্গি পড়তে পারবে এবং গায়ে চাদর পড়তে পারবে কিন্তু শরীর এর চামড়া রঞ্চিত হয়ে যায় এরকম জাফরানি রঙের কাপড় পড়তে নিষেদ করেছেন। (বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫২)
- আংটি পড়তে পারবে। কোমরে থলে বানতে পারবে। (বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, পরিচ্ছেদ : ৯৭৮)
ইহরাম বাঁধা ( ফরজ ) ?
নির্ধারিত মিকাত থেকে (সম্ভব হলে) গোসল করে অথবা অজু করে ইহরামের পোশাক পরিধান করা । পুরুষরা সেলাইবিহীন ২টি কাপড় পরবে। আর নারীরা পর্দাসহ শালীন পোশাক পরবে। অতঃপর ২ রাকাআত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করে নেবে-
اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ العُمْرَةَ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরতা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরার ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’
অতঃপর তালবিয়া পড়বে – নিয়তের পর অধিক হারে তালবিয়া পড়তে থাকুন-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ : ‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাক।’
অর্থ : আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।
(বুখারী, ১৫৪৯)
তালবিয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়বে-
اَللَّهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَ الْجَنَّةَ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউ’জুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান্নার’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসুন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’
মুহরিম ব্যক্তি যে সকল কাপড় পড়বে না ?
- পায়জামা ।
- জামা ।
- টুপি ।
- পাগড়ী ।
- মোজা ।
- জাফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার খুশবু )রঞ্চিত কাপড় পড়বেনা।
- চুল আঁচড়াবে না ।
- শরীর চুলকাবে না ।
- নারীরা মুখে নেকাব পড়বেনা ।
- নারীরা হাত মুজা পড়বেনা ।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫০, ১৭১৯)
মেয়েদের ইহরামের কাপড় কী ধরনের হওয়া চাই?
মেয়েরা কি ধরনের পোশাক পড়ে এহরাম বাধবে –
মেয়েদের ইহরামের জন্য বিশেষ কোন পোষাক নেই। মেয়েরা সাধারণত : যে কাপড় পরে থাকে সেটাই তাদের ইহরাম। তারা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ঢিলেঢালা ও শালীন পোষাক পরবে। তবে যেন পুরুষের পোষাকের মত না হয়।
আয়িশা (রা:) ইহরাম অবস্থায় কুসুমি রঙের রঙিন কাপড় পড়েন । এবং তিনি বলেন নারী গণ ঠোঁট ও মুখমন্ডল আবৃত করবেনা। ওয়ারস ও জাফরান রঙের রঙিন কাপড় পড়বে না। আয়িশা (রা:) নারীদের জন্য অলংকার, কালো ও গোলাপি রঙের কাপড় ও মোজা পড়া দূষণীয় মনে করেন নি। ইব্রাহিম (নাখয়ি ) (র) বলেন , ইহরাম অবস্থায় কাপড় পরিবর্তন করার দোষ নেই।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, পরিচ্ছেদ : ৯৮৩)
ইহরাম অবস্থায় পায়ে কী পরবে?
পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা পরা যাবে না। কাপড়ের মোজাও পরবে না।
কারো জুতা না থাকলে টাকনুর নিচ থেকে মুজা কেটে সেন্ডেল জুতার ন্যায় পড়তে হবে।তবে সেন্ডেল পরতে পারে।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৫০)
ইহরাম পড়ার পর কি কি করা যাবে না ?
– স্ত্রী সহবাস করা যাবে না এবং কোন অন্যায় আচরণ করা যাবে না। (বোখারী হাদিস -১৭০২)
– কোনো ধরনের সুগন্ধি কাপড়ে ব্যবহার করা যাবে না। (মুসলিম হাদিস নং ২৬৭০, ২৬৭১)
– কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না । (মহান আল্লাহর বাণী – সূরা মায়েদা আয়াত – ৯৫-৯৬)
– জংলী গাদা হাদিয়া দিলে তা নেওয়া যাবেনা। (বোখারী হাদিস নং – ১৭০৮)
– কোন ঝগড়া-ঝাটি করা যাবেনা। ( মহান আল্লাহর বাণী – সূরা বাকারা আয়াত -১৯৭)
– ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা যাবে। (বোখারী হাদিস নং – ১৭১৮)
– সিঙ্গা লাগানো যাবে। (বোখারী হাদিস নং – ১৭১৭)
– ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না। (মুসলিম হাদিস নং – ৩১৭২)
– অশ্লীল আচরণ ও দুষ্কর্ম করা যাবে না। (মুসলিম ৩য় খন্ড, হাদিস নং – ৩১৬১)
– নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না।
– ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে। ক্ষতি করে না, এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
মসজিদে হারামে প্রবেশ ?
ইব্রাহিম ইবনে মুনযির (র)…. ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সানিয়া উলয়া (হরমের উত্তর পূর্ব দিকে কাদা নামক স্থান দিয়ে ) মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং সানিয়্যা সুফলা(হরমের দক্ষিণ পচ্ছিম দিকে কুদা নামক স্থান) দিয়ে বের হতেন।
(বোখারী অধ্যায়-হজ্জ, হাদিস নং ১৪৮০)
ওমরা উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এ দোয়া পড়া-
بِسْمِ اللهِ وَ الصّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِأ عُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ اَللهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحَمَتِكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল ক্বদিমি মিনাশশায়ত্বানির রজিম। আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা।
কাবা ঘর দেখে এ দোয়া পড়া ?
اَللَّهُمَّ أَنْتَ السّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ حَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ اَللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ تَكْرِيْماً وَ مَهَاَبَةً وَ زِدْ مَنْ شَرّفَهُ وَ كَرّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَاعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ بِرُّا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু হাইয়্যিনা রব্বানা বিস্সালাম। আল্লাহুম্মা যিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তা’জিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মুহাবাতান; ওয়া জিদ মান শার্রফাহু ওয়া কার্রমাহু মিম্মান হাজ্জাহু ওয়া’তামারহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তা’জিমান ওয়া বির্র।
(২) তাওয়াফ করা ( ফরজ ) ?
ওমরার দ্বিতীয় ফরজ কাজ হলো কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, ইসতেলাম (স্পর্শ) বা হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোনায় দাঁড়িয়ে কাবার দিকে ফিরে দুই হাত দিয়ে ইশারা করে পুরুষরা ইজতিবা ও রমলসহ আর নারীরা সাধারণভাবে তাওয়াফ শুরু করবে আর এ দোয়া পড়া-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَر – اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و بصديقًا بِكِتَابِكَ وَرَفَعًا بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার; আল্লাহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা ওয়া রাফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা।’
তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাম দিকে রেখে রোকনে শামি ও রোকনে ইরাকি অতিক্রম করে রোকনে ইয়ামেনিতে আসবে। এ স্থানে তালবিয়া, তাকবির তাসবিহ ইত্যাদি পড়বে।
অতঃপর (সম্ভব হলে) রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করবে। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবে এবং কুরআনে শেখানো এ দোয়া পড়বে-
رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’
হাজরে আসওয়াদ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এক চক্কর সম্পন্ন হবে। এভাবে সাত চক্কর দেয়ার মাধ্যমে পুরো এক (ফরজ) তাওয়াফ সম্পন্ন হবে।
ইজতিবা ও রমল ?
ফরজ তাওয়াফের জন্য পুরুষরা ইজতিবা ও রমল করবে। এটি নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
– ইজতিবা
পুরুষরা গায়ের চাদরটিকে মুঠিবদ্ধ করে বাম কাধের ওপর দিয়ে পিঠ ঘুরিয়ে ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বুকের ওপর থেকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে ফেলা। এভাবে বাহাদুরি সুলভ আচরণ প্রকাশে গায়ের চাদর পরাই হলো ইজতেবা। আর এটা করা সুন্নাত।
– রমল
ফরজ তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রমল করাও সুন্নাত। দুই হাত শরীর ও কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে দ্রুত গতিতে প্রথম ৩ চক্কর সম্পন্ন করা। এভাবে তাওয়াফ করাকে রমল বলে।
তাওয়াফে রমল ও ইজতিবা পুরুষের জন্য পালন করা সুন্নাত। এটা নারীদের জন্য নয়।
মাকামে ইব্রাহিমের নামাজ ?
তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহিমে কিংবা মাকামে ইবরাহিমের ওই দিকটায় ২ রাকাআত নামাজ আদায় করা। নারীদের নামাজের জন্য ওই দিকটায় নির্ধারিত স্থানও রয়েছে।
ঝমঝমের পানি পান ?
মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করে ঝমঝমের পানি পান করে নেয়া। মাতআফের চর্তুদিকে ঝমঝমের পানির ঝার/ড্রাম রয়েছে। যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ঝমঝমের গরম পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।
ওমরাহর ওয়াজিব ?
(১) সাফা মারওয়া পাহাড় সাঈ করা ?
‘সাঈ’ শব্দের অর্থ হলো দৌড়ানো। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাত বার দৌড়ানোকে সাঈ বলে। ‘সাঈ’ বাইতুল্লায় হজ পালন ও ওমরা জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি।
‘সাঈ’ পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করতে হয়। হেঁটে সাঈ করতে অপারগ হলে বাহনের সাহায্যেও আদায় করা যায়। তবে বিনা ওজরে বাহন ব্যবহার করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব হয়।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোই হলো সাঈ-এর রোকন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ব্যতীত এদিক-ওদিক অথবা অন্য কোথাও দৌড়ালে ‘সাঈ’ আদায় হবে না।
সাঈ হলো হজের রোকন। হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারিত নিয়মে সাঈ করতে হয়। এটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহে হজ এবং ওমরা সম্পন্ন করে; তার জন্য এ (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোনো পাপ নেই।’
(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)
ঝমঝমের পানি পান করে ধীরে ধীরে সাফা পাহাড়ে আরোহন করা। সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটি কাবা শরিফের পাশেই অবস্থিত। ‘আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি’ বলে এ পাহাড় দুটি মাঝে ৭ বার আসা-যাওয়া করাকে সাঈ বলা হয়।
সাঈতে করণীয় ?
কাবা শরিফ তাওয়াফের পর মাকাকে ইবরাহিমে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে মসজিদে হারামের বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ে আরোহন করা। সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে এ আয়াত পাঠ করা-
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ : ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামার ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাও ওয়াআ খাইরন ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলিম।’
(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)
এ আয়াতটি সাফা পাহাড়ের ওপরে গম্বুজের মধ্যে লেখা রয়েছে। চাইলে যে কেউ তা দেখে দেখেও পড়ে নিতে পারবেন।
– সাফা পাহাড় থেকে কাবা শরিফ দেখা যায়। কাবার দিকে ফিরে আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আকবার (اَلْحَمْدُ لِلَّهِ اَللهُ اَكْبَر) বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
– অতঃপর এ দোয়াটি ৩ বার পড়ে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়ার দিকে চলা শুরু করা-
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – لَهُ المُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَ يُمِيْتُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيئ قَدِيْرلَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ – وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু হাযাামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।’
সবুজ চিহ্নিত স্থান ?
সাফা পাহাড় থেকে চলা শুরু করতেই পড়বে ‘সবুজ চিহ্নিত স্থান’। এ স্থানটিকে লাইট দিয়ে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। পুরুষরা এ স্থানটি দৌড়ে অতিক্রম করবে আর নারীরা স্বাভাবিকভাবে হেটে হেটে অতিক্রম করবে।
সবুজ চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া পড়া-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম।’
সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক গতিতে হাটবে। আর তাসবিহ পড়বে-
اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُاَللَّهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَ كَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইনাল ইমানা ওয়া কাররিহ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসুক্বা ওয়াল ইসয়ানা ওয়াঝআলনা মিন ইবাদিকাস সালিহিন।’
মারওয়া পাহাড়ে আরোহন ?
সাফা থেকে গিয়ে মারওয়া পাহাড়ে ওঠা। সেখানে গিয়ে আবার সাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। সেখানে এ দোয়া পড়া-
اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ – لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ صَدَقَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُوَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَفِرُوْنَ – رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُإِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু সাদাক্বা ওয়াদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসিনা লাহুদদ্বীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরুন। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম। ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।’
সাফা পাহাড়ে আসার সময়ও সবুজ চিহ্নিত স্থানে আগের নিয়মে পুরুষরা দ্রুত আর নারীরা স্বাভাবিকভাবে হেটে হেটে আসবে পূর্বোল্লিখিত দোয়া পড়া-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম।’
এভাবে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৭ বার চলাচলের মাধ্যমে সাঈ সম্পন্ন হবে। সাঈ শেষ হলে এ দোয়া পড়া-
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الَعَلِيْمُ – وَ تُبْ عَلَيْنَا اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحَيْمُوَ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى خَيْرِ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَّاَلِهِ وَ اَصْحَابِهِ اَجْمَعِيْنَ وَارْحَمْنَا مَعَهُمْ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাছ্ ছামিউল আলিম। ওয়অতুব্ আলাইনা ইন্নাকা আংতাত্ তাওয়্যাবুর্ রাহিম। ওয়া সাল্লাল্লাহু তাআলা আলা খাইরি খালক্বিহি মুহাম্মাদিউ ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন ওয়ারহামনা মাআহুম বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
(২) মাথার চুল মুণ্ডন বা চুল কাটা ?
মাথার চুল মুণ্ডন বা চুল কাটা হজ ও ওমরাহর ওয়াজিব বিধান। কারণ, মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন ছাড়া ইহরামের নিষেধাজ্ঞা গুলো শেষ হয় না। ওমরাহতে মাথা মুন্ডন করতে হয় সায়ি করার পর মারওয়ায়, আর হজে কোরবানির পর মিনায়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন,
মুহাম্মদ ইবনে আবু বাকর (র.) … ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা:) মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন , তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ শেষ করে এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা ছেটে হালাল হয়ে যায়।
( বুখারীঃ অধ্যায় হজ্ব হাদিস নং ১৬২৩)
হজে মাথার চুল মুণ্ডনের ফজিলত ?
হজ ও ওমরায় মাথা মুণ্ডনকে ছাঁটা অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মাথা মুণ্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে তিনবার দোয়া করা হয়েছে। তাই হাজীদের জন্য মাথা মুণ্ডনই উত্তম। নবীজি (সা.) স্বয়ং মাথা মুণ্ডনকে পছন্দ করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুব (র:)…. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! মাথা মুণ্ডন কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও? ইয়া আল্লাহ! মাথা মুণ্ডন কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও। এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন যারা মাথার চুল ছুট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (র.) বলেছেন , আমাকে নাফি (র.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা মাথামুণ্ডন কারীদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার বা তিনবার বলেছেন। রাবি বলেন উবায়দুল্লাহ (র.) নাফি (র.) থেকে বর্ণনা করেন , চতুর্থবার বলেছেন : চুল যারা ছুট করেছে তাদের প্রতিও।
(বোখারী : অধ্যায় – হজ, হাদিস নং :১৬১৯ , মুসলিম : অধ্যায় – হজ , হাদিস নং ৩০১৫)
মাথা ডান দিক থেকে মুণ্ডন সুন্নত ?
মাথা মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে শুধু মুণ্ডন করলেই সওয়াবের পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। এতে সুন্নত তরিকার অবলম্বন করতে হবে। ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান সুন্নত। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য উচিত ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান শুরু করা। এভাবেই নবী করিম (সা.) হজে স্বীয় মাথা মোবারক মুণ্ডন করতেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিনায় পৌঁছে প্রথমে জামরাতে গেলেন এবং তাতে কঙ্কর মারলেন। অতঃপর মিনায় অবস্থিত তার ডেরায় গেলেন এবং কোরবানির পশুগুলো জবেহ করলেন, তৎপর নাপিত ডাকলেন এবং তাকে আপন মাথার ডান দিক বাড়িয়ে দিলেন। সে তা মুণ্ডন করল। তিনি আবু তালহা আনসারিকে ডেকে কেশগুচ্ছ দিলেন। অতঃপর নাপিতকে মাথার বাম দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডাও; সে মুণ্ডাল। আর তিনি তা সেই আবু তালহাকে দিয়ে বললেন, যাও মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’
(সহীহ তিরমিযী, মুসলিম: হাদিস নং -৯১২, ৩০২২)
স্ত্রী লোকের জন্য শুধু মাথার চুল ছাঁটান জায়েজ ?
ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা উভয়টি জায়েজ।
কিন্তু হজ বা ওমরা পালনকারী নারীর ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল কর্তন জায়েজ, মুণ্ডন জায়েজ নেই।
নবী করিম (সা.) হজ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটান।’
(আবু দাউদ, হাদিস : ১৯৮৬)
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে ওমরাহ পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
Share with friends ………………..