বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
চোখের দৃষ্টি -
আসসালামু আলাইকুম, নামাজের আদব হলো দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা, যাতে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টি না যায়। এটি সুন্নত তবে কোনোভাবে দৃষ্টি চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না তবে এদিক সেদিক দৃষ্টি যেন না যায় সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখা।
সলাতে দাঁড়ানোর পর চোখের দৃষ্টি –
নামাজে এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করার ব্যাপারে কঠোরতা -
ক। সুওয়ায়দ ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা বান্দার প্রতি তার সালাতে দণ্ডায়মান থাকাকালীন পর্যন্ত রহমতের দৃষ্টিপাত করতে থাকেন, যতক্ষন পর্যন্ত সে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত না করে। যখন সে অন্য দিকে দূষ্টিপাত করে তখন আল্লাহ তাআলাও তার থেকে রহমতের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।
( আন-নাসাঈ হাদিস - ১১৯৮, ১১৯৯ ই ফা বা )
খ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে।
( কিতাবুল মাবসুত- ১/২৮)
গ। সালাতে দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স.)-এর দৃষ্টি থাকত সিজদার স্থানে, আর বসার সময় তিনি ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে নজর রাখতেন ।
( সুনানে নাসাঈ সহীহ হাদিস- ১১৬০ তাহকীককৃত / ১১৬১ আন্তঃ )
ঘ। সালাত অবস্থায় বা নামাযে দু'আর সময় রাসূলুল্লাহ (স.) আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেওয়া হবে ।
( মুসলিম সহীহ হাদিস - ৮৫০ ই ফা বা / ৪২৮ আন্তঃ, বুখারী সহীহ হাদিস - ৭১৪ ই ফা বা / ৭৫০ আন্তঃ )
ঙ। দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা।
( বায়হাকী ২/২৮৩ )
উল্লেখ্য, তাছাড়াও সামনে ইমামের দিকে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে রাখাও বৈধ নয়।
সানা বা দোয়া বলা –
১। জায়নামাজে দাড়িয়ে দু'আ পাঠ করা -
ক। আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, জায়নামাজ পবিত্র করার একটা দোয়া রয়েছে। জায়নামাযের দু'আ বলতে শরীয়তে কোন দু'আ নেই , যদিও নিন্মোক্ত দোয়াটি আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত- সেই দু'আটি নিচে দেওয়া হল -
اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অর্থ - নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি ।
উপরুক্ত দু'আটির শরীয় কোন দলিল বা প্রমান নেই। যারা এই দু'আটির কথা উল্লেখ করেছেন তারা এর কোন প্রমাণ উল্লেখ করেননি।
কিন্তু এই ক.নং কোলামের দু'আটির বাকী অংশ গ. নং কোলামে আমি উল্লেখ করেছি এই দু'আটি রাসূল (সা:) তাকবিরে তাহরীমা বলে হাত বাধার পর কিরআত পড়ার পূর্বে বলতেন কিন্তু জায়নামাযে দাঁড়িয়েই জায়নামায পবিত্র করার জন্য বলতেন না।
খ। সাধারণত নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে মনে মনে ঐ ওয়াক্তের নামায বা সালাতের নিয়ত করা বা সংকল্প করা ১ , তারপর তাকবিরে তাহরীমা বলে হাত বাধা, তারপর রাসূল সাঃ শিখানো সেই দু'আটি ( সানা ) পড়া যা বিভিন্ন সহীহ হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত আছে। দু'আটি নিন্মে দলিলসহ দেওয়া হল -
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
অর্থ - হে আল্লাহ, পবিত্রতা এবং প্রশংসা আপনারই; বরকতময় আপনার নাম; অতি উচ্চ আপনার মর্যাদা, আর কোন ইলাহ নেই আপনি ছাড়া।
অতঃপর তিনি তিনবার - لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলতেন এবং اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا তিনবার বলার পর أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ এই দু'আটি বলতেন তারপর কিরাত পাঠ করতেন ।
( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস - ৭৭৫,৭৭৬ ই ফা বা , ইব্নে মাজাহ সহীহ হাদিস - ৮০৪, তিরমিজী সহীহ হাদিস -২৪২, ২৪৩ )
নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers ..............
গ। তাকবিরে তাহরীমা বলে হাত বাধার পর কিরআত পড়ার পূর্বে, রাসূল সাঃ আরো এই দু'আটিও পড়তেন যা বিভিন্ন সহীহ হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত আছে। দু'আটি নিন্মে দলিলসহ দেওয়া হল –
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيْفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا
مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاعْتَرَفْتُ
بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ جَمِيْعًا لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِيْ لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِيْ لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
অর্থ - আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত আমার ইবাদত (কুরবানী ও হজ্জ) আমার জীবন ও আমার মরণ জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরীক নেই। আর এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্গত। আল্লাহ, আপনি বাদশাহ, আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আপনি আমার প্রভু আর আমি আপনার দাস। আমি নিজের উপর জুলুম করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি- সূতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দাও।
নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত আর কেউ অপরাধ সমুহ ক্ষমা করতে পারে না এবং চালিত কর আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে। তুমি ব্যতীত অপর কেউ চালিত করতে পারে না উত্তম চরিত্রের পথে এবং দুরে রাখ আমা থেকে মন্দ আচরনকে- তুমি ব্যতীত আমা থেকে তা অপর কেউ দুরে রাখতে পারে না। আল্লাহ! হাজির আছি আমি তোমার নিকটে আর প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে, কল্যাণ সমস্তই তোমার হাতে এবং কোনও অকল্যাণই তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। তুমি মঙ্গলময়, তুমি সুমহান। আমি তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি এবং তোমার দিকে ফিরতেছি।
( আন নাসায়ী সহীহ হাদিস - ৯০০ ই ফা বা )
নোট : উপরে উল্লেখিত ক. নাম্বার জায়নামাযের দু'আর সাথে নিন্মে গ. নাম্বার দু'আর লাল অংশের সাথে এই দোয়া টুক মিল রয়েছে, আমি জানিনা যেই ব্যাক্তি জায়নামাযের এই দু'আ টুক উল্লেখ করেছেন আমার মনে সে অল্প একটুক উল্লেখ করেছেন বাকিটা হয়তবা উল্লেখ করেননি , তবে সব চেয়ে ভালো হত যদি সে হাদিসের রেফারেন্স সহ উল্লেখ করত। এই টুক দু'আ আমাদের দেশে কে বা কারা প্রচলন করেছিলো তা আমি জানিনা, তবে এই সাইটে এটি কথা হচ্ছিলো।
খ :১ . ( বুখারী সহীহ হাদিস নং - ১ ই ফা বা , আন-নাসায়ি সহীহ হাদিস - ৭৫ ই ফা বা, মুসলিম সহীহ হাদিস নং - ৪৮২১ হা একাডেমি/১৯০৭ আন্তঃ )
নবী (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কি পড়তেন ?
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলিঃ “ হে আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন” ।
( বুখারী সহীহ হাদিস - ৭০৮ ই ফা বা /৭৪৪ আন্তঃ )