Skip to content

বিতর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি I Bitar namaz

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন    اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ  – পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

Table of Contents

বিতর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ?

বিতর সলাত –

আসসালামু আলাইকুম,বিতর শব্দের অর্থ- বিজোড়। ইশার নামাজের পর এক থেকে সাত রাকআত পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যক রাকআত বিতর নামাজ আদায় করা। বিতর নামাজ বা বিতর সলাত হল বিজোড় সংখ্যক রাকআত বিশিষ্ট নামাজ যেটি মুসলিমরা রাতে ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় বিতর নামাজ পড়া যায়।

 

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন –

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

অর্থ – তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।

( সূরা আন-কাবুত আয়াত- ৪৫)

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন –

فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

অর্থ – অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।

( সূরা আন-নিসা আয়াত- ১০৩ )

 

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন –

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

অর্থ – অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

( সূরা আল-আহযাব আয়াত- ২১ )

হাদিসের বর্ননায় ,

আলী (রা) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : হে কুরআনের অনুসারী গণ ! তোমরা বিতর সলাত আদায় করো। কেননা আল্লাহ তায়ালা বেজোড় (একক) সেই জন্য তিনি বেজোড় (বিতর) কে ভালোবাসেন।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস  -১৪১৬, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজা )

 

বিতর নামায আল্লাহতায়ালার পক্ষ্য থেকে নির্ধারণ –

নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এসে বলেন , আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য লাল বর্ণের ঘোড়ার চেয়েও উত্তম একটি নামায নির্ধারিত করেছেন ,তা হল বিতর নামায ।

( আবু দাঊদ হাদিস যঈফ– ১৪১৮, তিরমিজী সহীহ ” লাল বর্ণের ঘোড়ার চেয়েও উত্তম, এই কথাটি বাদে ” -৪৫২,  )

 নোট : উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল্লাহ বিন রাশিদ আয-যাওকী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি অপরিচিত।

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

বিতর সলাত ফরয বা ওয়াজিব নয় , সুন্নাত সলাত –

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ্ হচ্ছেন বিতর বা বেজোড়, তিনি বেজোর হওয়াকে পছন্দ করেছেন। সুতরাং হে কুরআনপন্থীগণ! তোমরা বিতর আদায় কর।

(তিরমিজী  হাদিস সহীহ -৪৫৩, ৪৫৪,  আবু দাঊদ হাদিস সহীহ – ১৪২০, ইবনে মাজাহ হাদিস সহীহ – ১১৬৯)

বিতর সলাত ওয়াজিব –

মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: বিতরের সালাত ফরয সালাতের ন্যায় অত্যাবশ্যকায় নয়। বরং তা ওয়াজিব, যা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াজিব করে দিয়েছেন।

(আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস -১৬৭৯, ১৭১৩, ১৭১৪, আবু দাউদ সহীহ হাদিস -১৪২০ ই ফা বা )

১. খারিজা ইব্ন হুযাফা (রা:) থেকে বর্ণিত যে , রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন।  আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য একটি সলাত বর্ধিত করে দিয়েছেন, তাহল বিতরের সলাত। তোমরা উক্ত সলাত ঈশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করবে। ইমাম আবু হানাফী (র)- এর মশহুর মতানুযায়ী বিতরের সলাত হল ওয়াজিব।

বিতর সলাতের ওয়াক্ত :

১। মুহামাদ ইবন আহমাদ (রহঃ) ….. আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আবু বাকর (রাঃ)-কে বলেনঃ আপনি বিতিরের নামায কোন সময় আদায় করেন? তিনি বলেন, রাত্রির পথম অংশে। অতঃপর তিনি উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কোন সময়ে বিতিরের নামায় আদায় করেন? তিনি বলেন, রাত্রির শেষ অংশে। তিনি আবু বাকর (রাঃ)-কে বলেনঃ সতর্কতা হেতু আপনি এর উপর আমল করতে থাকুন। তিনি উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী আমল করুন।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস  – ১৪৩৪, ১৪৩৫, ১৪৩৬ )

 

২। আয়েশা (রা:)বলেন : রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতর সলাত রাতের প্রথম ভাগ , মধ্যে ভাগ এবং শেষ ভাগে আদায় করতেন …… ।

 ( তিরমিজি সহীহ হাদিস  – ৪৫৬, নাসাঈ সহীহ হাদিস  -১৬৮৪, বুখারী সহীহ হাদিস – ৯৪২/৯৯৬, মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬১০ ই ফা বা)

৩। সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্বেই বিতর আদায় করা-

আহমদ ইবনু মানী’ (রহঃ) ….. ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সুবহে সা’দিকের আগে আগেই তোমরা বিতর পড়ে নিবে।

( তিরমিজি সহীহ হাদিস -৪৬৭ ই ফা বা , ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস – ১১৮৯ )

মাগরিবের ন্যায় বিতরের নামাজ না পড়া –

আল-হাসান ইবনে সুফিয়ান আমাদেরকে বলেছেন, তিনি বলেছেন: আমাদেরকে হারমালা বলেছেন, আমাদেরকে ইবনে ওয়াহব বলেছেন, সুলায়মান ইবনে বিলাল আমাকে বলেছেন,

সালেহ বিন কায়সান, আবদুল্লাহ বিন আল-ফাদলের কর্তৃত্বে, আবু সালামা বিন আব্দুল রহমান এবং আব্দুল রহমান আল-আরাজের কর্তৃত্বে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ (তিনটি জিনিস দিয়ে বিতরের নামায পড়বেন না, বরং পাঁচটি জিনিস দিয়ে বিতরের সালাত আদায় করবেন।

সাতটি সহ, এবং মাগরিবের সালাতের অনুকরণ করবেন না।) এর সংক্রমণের চেইনটি মুসলিমের শর্ত অনুসারে খাঁটি।

( ইবনু হিব্বান সহীহ হাদিস – ২৪২৯,  দারে কুতনী- ১৬৫০, পৃষ্ঠা ২/৩৪৪ )

বিতর সলাত কত রাকাআত ?

হাদিসের বর্ননায় , আলী (রা) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : হে কুরআনের অনুসারী গণ ! তোমরা বিতর সলাত আদায় করো। কেননা আল্লাহ তায়ালা বেজোড় (একক) সেই জন্য তিনি বেজোড় (বিতর) কে ভালোবাসেন।

(আবু দাঊদ হাদিস সহীহ -১৪১৬)

 

এক রাকাআত –

ক।  আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেউ বিতর (বেজোড়) সলাত এক রাক’আত আদায় করতে চাইলে সে এক রাকআত আদায় করতে পারবে…………….।

( আবু দাঊদ হাদিস সহীহ– ১৪২২, তিরমিজি হাদিস সহীহ – ৪৩৭, ৪৬১)

এক রাকাতের পক্ষে আরও হাদিস বা দলিল -(মিশকাত হাদিস সহীহ– ১২৭৭, ১২৮৫,  বুখারী হাদিস সহীহ – ৯৯০/৯৩৭, ৯৯৩ /৯৩৯, ৩৪৯২,  আবু দাঊদ হাদিস সহীহ– ১৪২১, মুসলিম হাদিস সহীহ– ১৫৯০, ১৫৯১, ১৬০০, ১৬২১, ১৬২৪, ১৬৩০, ১৬৩৩, ১৬৩৪, নাসাঈ হাদিস সহীহ– ১৬৯২, ১৬৯৪, ১৬৯৫ , ১৬৯৬, ১৬৯৭, ১৭১৩, ১৭১৪, ১৭১৫, ইবনু মাজাহ হাদিস সহীহ– ১১৭৪, ১১৭৫, ১১৭৭, ১১৯৬,১৩২০,১৩৫৮ )

খ।  কুতায়বা (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। আর বিতরের সালাত হল (রাতে আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত।

( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস -১৬৯৬ ই ফা বা )

তিন রাকাআত বিতর পড়ার পদ্ধতি: –

ক। আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেউ বিতর (বেজোড়) সলাত তিন রাক’আত আদায় করতে চাইলে সে তিন রাকআত আদায় করতে পারবে…….।

( আবু দাঊদ হাদিস সহীহ-১৪২২, ১৪২৩, তিরমিজি হাদিস সহীহ – ৪৬২, ৪৬৩, ইবনে মাজাহ হাদিস সহীহ – ১১৭৩, বুখারী হাদিস সহীহ– ৯৩৯ ই ফা বা/ ৯৯৩ আন্তঃ, নাসাঈ হাদিস সহীহ– ১৭০০,১৭০৩, )

 

খ। ইসমাঈল ইব্ন মাসঊদ (র)… সা’দ ইব্ন হিশাম (রাঃ ) থেকে বর্ণিত যে, আয়েশা (রাঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিতরের দুই রাকআতে সালাম ফিরাতেন না।

( নাসাঈ হাদিস সহীহ– ১৭০১, হাকেম- ১১৪০)

গ। তিন রাকআত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবার এক রাকআত পড়া যায়।  তিন রাকআত বিতর সালাত আদায়ের এটিও সহীহ পদ্ধতি।

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট রাতের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাতের সালাত দু’দু’(রাকা’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশংকা করে, সে যেন এক রাকা’আত মিলিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে।

নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বিতর সালাতের এক ও দু’ রাকা’আতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।

( বুখারী  সহীহ হাদিস – ৯৩৭ ই ফা বা/৯৯০-৯৯১ আন্তঃ, আবু দাউদ সহীহ হাদিস -১৪২১ ই ফা বা )

 

ঘ।   ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৫৯৬ ই ফা বা )

 

ঙ ।  বিত্‌রের সালাতের ব্যাপারে ইবন আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে হাবীব ইবন সাবিতের মতানৈক্য

আব্দুল্লাহ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু আলীর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একরাত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তিনি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে উযু এবং মিসওয়াক করে إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لأُولِي الأَلْبَابِ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন, আমি তার নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর জাগ্রত হয়ে উযু ও মিসওয়াক করলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পুনরায় শুয়ে পড়লেন। আবার জাগ্রত হয়ে উযু ও মিসওয়াক করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করে তিন রাকাআত বিতর আদায় করলেন।

( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস -১৭০৮  ই ফা বা )

 

পাঁচ রাকাআত –

আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেউ বিতর (বেজোড়) সলাত পাঁচ রাক’আত আদায় করতে চাইলে সে পাঁচ রাকআত আদায় করতে পারবে………………।

(আবু দাঊদ হাদিস সহীহ– ১৪২২)

পাঁচ রাকআত বিতর পড়ার পদ্ধতি –

ক।  ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- তিনি বলেন , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পাঁচ রাকআত দ্বারাও (সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে দিতেন এবং কেবলমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন।

( নাসাঈ সহীহ হাদিস- ১৭২০, ১৭১৮ ই ফা বা )

 

খ। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ….. আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সলাত (নামায/নামাজ) ছিল তের রাকআত। এর মধ্যে পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন। এই পাঁচ রাকআতের শেষ রাকআত ছাড়া আর কোথাও বসতেন না …….. ।

( তিরমিজী  হাদিস সহীহ – ৪৫৯, মুসলিম হাদিস সহীহ – ১৫৯৩ ই ফা বা )

 

বিতর সলাত সাত, পাঁচ, তিন এবং এক রাকআত –

আবূ আইয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, বিতরের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যার ইচ্ছা হয় সে সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করবে, যার ইচ্ছা হয় সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে নিবে আর যার ইচ্ছা হবে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে নিবে  এবং যার  ইচ্ছা হবে  সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে নিবে ।

( নাসাঈ হাদিস সহীহ– ১৭১৩)

বিতর সলাত না পড়ে ঘুমালে বা স্মরণ না থাকলে –

ক। আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেন ,যে ব্যক্তি ঘুম বা স্মরণ না থাকার কারণে বিতর সলাত আদায় করতে ভুলে যায় , সে যেন মনে হওয়া মাত্রই আদায় করে নেয়।

( আবু দাঊদ হাদিস সহীহ– ১৪৩১, তিরমিজি হাদিস সহীহ– ৪৬৫, ইব্নে মাজাহ হাদিস সহীহ – ১১৮৮,নাসাঈ হাদিস সহীহ -১৬৮৮ )

খ। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ শেষরাতে জাগতে পারবে না বলে আশংকা করলে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর পড়ে নেয়, অতঃপর ঘুমায় ………… ।

( ইবনে মাজাহ হাদিস সহীহ – ১১৮৭, তিরমিজি হাদিস সহীহ– ৪৫৫ )

 

 বিতর সলাতের কিরাআত –

উবাই ইবনু কাব (রা:) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সুরাহ -সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা, কূল ইয়া-আইয়ুহাল কাফিরুন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করতেন।

( আবু দাঊদ হাদিস সহীহ -১৪২৩, ১৪২৪, তিরমিজি সহীহ হাদিস -৪৬২ ই ফা বা, ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস -১১৭২, আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস -১৭০২ ই ফা বা )

 

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

বিতর সলাতে কিরআত শব্দ করে এবং নি:শব্দে পড়তেন-

আব্দুল্লাহ ইবনু কায়িস(রহঃ)একদিন আয়েশা(রা:) কে জিজ্ঞাসা করে, তিনি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতর সলাতে কিরআত শব্দ করে পড়তেন নাকি নি:শব্দে পড়তেন।তিনি বলেন উভয় প্রকারেই কিরআত পড়তেন।

(আবু দাঊদ সহীহ হাদিস -১৪৩৭)

 একই রাত্রিতে বিতর সলাত দুই বার না পড়া –

তালক ইব্ন আলী (রা:) বলেন : আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি – “একই রাত্রে বিতর সলাত দুইবার আদায় করা যায়না “।

(আবু দাঊদ হাদিস সহীহ-১৪৩৯, তিরমিজি হাদিস সহীহ– ৪৭০, নাসাঈ হাদিস সহীহ -১৬৮২)

রাতের শেষ সালাত বিতর –

ক। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) খেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত /নামায  করবে।

( বুখারী হাদিস সহীহ– ৯৪৪, ৯৩৮ ই ফা /৯৯৮ আ, আবু দাউদ সহীহ হাদিস -১৪৩৮  ই ফা বা, বুখারী, মুসলিম )

খ। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ……. ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রাতের শেষ সালাত বিতরকে বানিও।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৬২৮, ১৬২৭, ১৬২৯, ১৬৩২ ই ফা বা )

 

ফজরের আযানের পর বিত্‌রের সালাত আদায় করা-

ইবরাহীমের পিতা মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি আমর ইবনু শুরাহবীল (রহঃ) এর মসজিদে ছিলেন।  ইকামত এর পর  মুসল্লীরা তার অপেক্ষা করছিল। তিনি এসে বললেন, আমি বিতরের সালাত আদায় করছিলাম। আর তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ফজরের আযানের পরে কি বিতরের সালাত আদায় করা যায়? তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ; ইকামতের পরেও আদায় করা যায় এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করলেন………..।

( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস  -১৬৮৮)

বিতর সলাতে দোয়া কুনুত –

ক।  হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতরের দু’আ কুনূত পাঠ করার জন্য আমাকে কিছু ক্বালিমাহ্ শিক্ষা দিয়েছেন। সে ক্বালিমাগুলো হলো-

” আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ’আ-ফিনী ফীমান ’আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ’ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ’আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাকতা রব্বানা- ওয়াতা’আ-লায়তা। “

এই অনুচ্ছেদে  আলী (রা:) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান। আবূল হাওরা আস্-সা’দী (রহঃ)-এর সূত্র ছাড়া আর কোনভাবে আমরা এই হাদীসটি সম্পর্কে জানি না। আবূ হাওরা আস-সা’দী এর নাম হল রাবীআ ইবনু শায়বান। দু’আ কুনুতের বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর চেয়ে উত্তম কিছু বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিতরে কুনূত পাঠ সম্পর্কে আলিমদের মতবিরোধ রয়েছে ………..।

(  তিরমিজি সহীহ হাদিস  – ৪৬৪, মিশকাত সহীহ হাদিস – ১২৭৩ )

 

খ।  মূসা ইবন ইসমাঈল (রহঃ) …… আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের নামাযের শেষ রাকাতে এরূপ দুআ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বি-রিদাকা মিন সাখাতিকা ওয়া বি-মুআফাতিকা মিন উকূবাতিকা ওয়া আউযু বিকা মিনকা লা উহসী ছানা আলায়কা আন্তা কামা আছনায়তা আলা নাফসিকা।”

উবাই ইবন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের (শেষ রাকাত) রুকুতে যাবার পূর্বে দুআ কুনূত পাঠ করতেন।

উবাই ইবন কাব (রাঃ) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে পূর্ববর্তী হাদীছের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাফস ইবন গিয়াস সূত্রে … উবাই ইবন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের নামাযে রুকূর পূর্বে দুআ কুনূত পাঠ করতেন। ফ(তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজা)।

ইমাম আবু দাউদ বলেন, এরূপ বর্ণিত আছে যে, উবাই (রাঃ) রমযানের শেষ পনের দিন দুআ কুনূত পাঠ করতেন।

( আবু দাউদ সহীহ হাদিস -১৪২৭ ই ফা বা, নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১৭০২ ইবনে মাজাহ, তিরমিজি )

 

গ।  দাউদ ইবন উমায়্যা (রহঃ) …… আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নামায পাঠের অনুরূপ নামায আদায় করব। রাবী বলেন, তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) যোহর, ইশা এবং ফজরের শেষ রাকাতে কুনূতে নাযেলাহ্ পাঠ করেন। তিনি এই নামাযের মধ্যে মুমিনদের জন্য দু’আ করেন এবং কাফিরদের অভিসম্পাত দেন।

( আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ১৪৪০ ই ফা বা, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ )

 

সলাতে রুকুর পরে কুনুত পাঠ করা –

ক। মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ফজরের সালাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি কি রুকূর আগে কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, কিছুদিন রুকূর পরে পড়েছেন।

( বোখারী সহীহ হাদিস  – ৯৪৭/১০০১, ৯৪৮/১০০২)

 

খ। মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে দুআ কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূর পরে দুআ কুনূত পড়েছেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৯৮, ১০০১, ১০০২, ৩১৭০,৪০৮৮, ৪০৯০-৪০৯২, ৪০৯৪-৪০৯৬, ৬৩৯৪ মুসলিম সহীহ হাদিস – ৬৭১,৪ নাসায়ী সহীহ হাদিস – ১০৭০, ১০৭১, ১০৭৭, ১০৭৯ আবূ দাঊদ সহীহ হাদিস – ১৪৪৪, ১৪৪৫;  ইবনু মাজাহ সহীহ হাদিস – ১১৮৪, ১২৪৩ আহমাদ- ১২২৯৪, ১২৪৩৮, ১২৭০৭, ১৩৫৩৯  দারিমী- ১৫৯৬, ১৫৯৯ মিসকাতুল মাসাবিহ- ১২৯৪)

 

গ। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে) কুনূত ফজর ও মাগরিবের সালাতে পড়া হত।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৬২ ই ফা বা /৭৯৮ আন্তঃ /৭৯৮ তাওহীদ /৭৫৪ আধুনিক প্রকাশনী,  মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৪২৮ ই ফা বা )

 

বিতর সলাতে সালাম ফিরিয়ে দুআ পাঠ করা –

উবাই ইব্ন কাব (রা:) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী রসূলূল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বিতর সলাতে সালাম ফিরিয়ে বলতেন, ” সুবহানাল মালিকিন কুদ্দুস “

(আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ১৪৩০, নাসাঈ  সহীহ হাদিস- ১৭০২)

 

যখন মুসলিমদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হয়, তখন সকল সালাতে কুনুতে নাযিলাহ পাঠ মুস্তাহাব-

ক। আবূত তহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সাব্‌হ আল মিসরী (রহঃ) ….. খুফাফ ইবনু ঈমা আল গিফারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সালাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে বদ-দু’আ করলেন “হে আল্লাহ! তুমি বানী লিহইয়ান, রি’ল যাকওয়ান ও উসাইয়্যাহ গোত্রসমূহের ওপর লা’নাত বর্ষণ করো। তারা আল্লাহ ও তার রসূলের নাফরমানী করেছে। আর গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্রকে নিরাপদ রাখুন”।

(  মুসলিম সহীহ হাদিস -১৪৪৩  হা এ / ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪২৮/ ইসলামীক সেন্টার ১৪৩৮ )

 

খ। মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রায়ী (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় একমাস যাবৎ ফজরের সালাতে দ্বিতীয় রাকাআতে রুকূ’ থেকে ওঠার পরে কুনুত পড়েছেন। এতে তিনি যখন রুকূ’ থেকে উঠে “সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলতেন তখন কুনত পড়তে গিয়ে বলতেনঃ “ হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ! সালামাহ ইবনু হিশামকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ! আয়িশাহ ইবনু আবূ রাবী’আহকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ! দুর্বল অসহায় মুমিনদেরকেও মুক্তি দাও। হে আল্লাহ! তুমি মুবার গোত্রকে তোমার কঠোরতা দ্বারা পিষে মারো। হে আল্লাহ! তুমি তাদের ওপর ইউসুফ (আঃ)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দান করো”।

اللَّهُمَّ أَنْجِ الْوَلِيدَ بْنَ الْوَلِيدِ اللَّهُمَّ نَجِّ سَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ اللَّهُمَّ نَجِّ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ اللَّهُمَّ نَجِّ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেছেন, পরে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ দু’আ পরিত্যাগ করতে দেখেছি। এতে আমি বিস্মিত হয়ে বললামঃ আমি দেখছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখন তাদের জন্য দু’আ করা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ আমাকে তখন বলা হলো তুমি কি দেখছ না যে, তারা সবাই মুক্ত হয়ে চলে এসেছেন?

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ১৪২৮ হাদিস একাডেমি / ১৪১৩ ই ফা বা  / ১৪২৩ ইসলামী সেন্টার  / ৬৭৫ আন্তঃ )

 

এক মাস ব্যাপি দোয়া  কুনূত পাঠ করা –

ক। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞারা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত অবশ্যই পড়া হত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। রুকূ’র আগে না পরে? তিনি বললেন, রূকূর আগে। আসিম (রহঃ) বললেন, অমুক ব্যাক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রূকুর পরে। তখন আনাস (রাঃ) বলেন, সে ভুল বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূর পরে এক মাস ব্যাপি কুনূত পাঠ করেছেন। আমার জানামতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের ‍কুররা (অভিজ্ঞ কারীগণ) বলা হতো মুশরিকদের কোন এক কওমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কওম নয়, যাদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ দুআ করেছিলেন। বরং তিনি এক মাস ব্যাপি কুনূতে সে সব কাফিরদের জন্য বদ দুআ করেছিলেন যাদের সাথে তার চুক্তি ছিল এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে কারীগণকে হত্যা করেছিল।

( বুখারী সহীহ হাদিস -৯৪৮ ই ফা বা/১০০২ আন্তঃ )

 

খ।  আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপী রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতে দু’আ পাঠ করেছিলেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৯৪৯/১০০৩ আন্তঃ )

 

দোয়ার পর মুখমন্ডল মাসেহ করা –

কুতায়বা ইবন সাঈদ (রহঃ)… আস-সাইব ইবন য়াযীদ (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা: তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম দু’আর সময় তাঁর উভয় হাত উত্তোলন করতেন এবং তাঁর দ্বারা মুখমণ্ডল মাসেহ করতেন।

( আবু দাউদ হাদিস যঈফ – ১৪৮৫, ১৪৯২ ইফাবা )

 সওয়ারী বা যানবাহনের উপর বিতর সলাত আদায় করা –

কুতায়বা (রহঃ) ….. সাঈদ ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত :তিনি বলেনঃ আমি একবার ইবনু উমর (রা:) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একবার আমি তাঁর পিছনে পড়ে গেলাম। পরে তিনি আমাকে বললেন, কোথায় ছিলে? আমি বললামঃ সালাতুল বিতর আদায় করে নিলাম। তিনি বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে কি তোমার জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত নেই? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বাহনের উপর সালাতুল বিতর আদায় করতে দেখেছি।

( বোখারী  সহীহ হাদিস – ৯৪৫/৯৯৯,  তিরমিজি সহীহ হাদিস – ৪৭২, নাসাঈ সহীহ হাদিস – ১৬৯০ )

সফর অবস্থায় বিতর সলাত –

মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ফরজ সালাত/নামায ব্যতীত তার সাওয়ারীতে থেকেই ইশারায় রাতের সালাত আদায় করতেন। সাওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করতেন।

(বোখারী সহীহ হাদিস – ৯৪৬/১০০০, তিরমিজি সহীহ হাদিস -৪৭২ ই ফা বা )

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

Leave a Reply