Skip to content

তায়াম্মুম কি, তায়াম্মুম করার সঠিক নিয়ম I Tayammum

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

পবিত্রতা – তায়াম্মুম

তায়াম্মুম কি, তায়াম্মুম করার সঠিক নিয়ম ?

তায়াম্মুম কি ?

আসসালামু আলাইকুম , তায়াম্মুম শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা ,সংকল্প করা। পরিভাষায়-পানি পাওয়া না গেলে বা কোন কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে পবিত্র মাটি দ্বারা শরীয়তসম্মত পন্থায় পবিত্রতা অর্জন করাকে তায়াম্মুম বলে। পবিত্র মাটি অথবা মাটি জাতীয় বস্তু যেমন-বালু ,পাথর ,সুরকি ,মাটির পাত্র ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয।

তায়াম্মুম শুরু বা এর আয়াত নাযিল সম্পর্কে –

আবদুল্লাহ্ ইবনু মুহাম্মাদ …. হিশাম ইবনু উরওয়া থেকে তাঁর পিতার সূত্রে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসায়েদ ইবনু হুদায়েরের সাথে আরো কয়েকজনকে আয়িশা (রাঃ) এর হারানো হার অনুসন্ধানের জন্য পাঠান। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হওয়ায় তারা বিনা উযূ (ওজু/অজু/অযু)তে নামায আদায় করেন। অতঃপর তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাযির হয়ে এ বিষয়ে তাকে অবহিত করেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। এ সময় উসায়েদ (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন, তার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ তা’আলা আপনার এবং গোটা মুসলিম মিল্লাতের জন্য পথ সুপ্রশস্ত করে দিয়েছেন।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ৩১৭ )

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

 فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ – অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল।

( সূরা আল মায়দা, আয়াত-৬ )

সূচিপত্র (নামাজ শিক্ষা বই)……………

 

মহান আল্লাহ তায়ালা অন্য আরেক আয়াতে বলেন –

হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও*। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ কর, তবে যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম কর** । সুতরাং তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।

( সূরা নিসা  আয়াত – ৪৩ )

তায়াম্মুম ফরজ , মুস্তাহাব  –

পানির অনুপস্থিতে অথবা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে যেসব বিষয়ের জন্য পবিত্রতা ফরজ সে সবের জন্য তায়াম্মুম করা ফরজ। আর যেসবের জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব সে সবের জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব। যেমন- কুরআন তিলাওয়াত করা

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমের ফরজ –

তায়াম্মুমের ফরজ ২ টি ।যথা-

তায়াম্মুম

১। উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করা ।

২। উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা।

 ( সূরা আন-নিসা আয়াত – ৪৩,  সূরা মায়েদা আয়াত – ৬ )

তায়াম্মুম শরীয়তভুক্ত হওয়ার দলিল-

১. আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ

অর্থ -অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।

সূরা আল মায়েদা: ৬

২. মুহাম্মদ ইবনু সিনান ও সা’ঈদ ইবনু নাযর (রহঃ) …. জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়; (২) সমস্ত যমীন আমার জন্য প্রবিত্র ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের উপযোগি করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মাতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায় করতে পারবে; (৩) আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি; (৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফা’আতের অধিকার দেওয়া হয়েছে; (৫) সমস্ত নবী প্রেরিত হতেন কেবল তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৩২৮ ই ফা বা /৩৩৫ আন্তঃ )

৩ যেসব অবস্থায় পানি ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, যেমন অসুস্থ হয়ে পড়া, মৃত্যু  হওয়ার আশঙ্কা, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকা ইত্যাদি।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ৩৩৪,৩৩৬ ই ফা বা, মিশকাত )

৪. যে পানি ও মাটি কোনোটাই পাবে না সে পবিত্রতা ব্যতীতই সময়মতো নামাজ আদায় করে নেবে। এবং তা আর পুনরায় আদায় করতে হবে না।

 

তায়াম্মুম করা কখন বৈধ?

১। পানির অনুপস্থিতি ।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

অর্থ -অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল।

( সূরা মায়েদা, আয়াত-৬ )

২। প্রচন্ড ঠান্ডায় যদি পানি গরম করার মতো কিছু না থাকে এবং পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে এ ধারণার পাল্লা ভারি থাকে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক, প্রচন্ড ঠান্ডা থাকার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজের ইমামতি করার পর, আমর বিন আস রাযি. এর কাজকে নাকচ করে না দেয়া এ ক্ষেত্রে প্রমাণ।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ৩৩৪ ই ফা বা )

তায়াম্মুম

৩। হাসান বসরী (র) বলেন , যে রোগীর কাছে পানি আছে , কিন্তু তার কাছে পৌঁছানোর কোন লোক থাকে না, তবে সে তায়ামুম করবে।

(বুখারী পরিচ্ছেদ ২৩৫)

৪। গোসল ফরজ হলে , আশে পাশে কোথাও যদি পানি না পায় যার ধরুন নামাজ ছুটে যেতে পারে।

(সহীহ মুসলিম , বোখারী ১ম খন্ড, হাদিস নং- ৭০৫, ৩৩১,৩৪১ )

৫। অপবিত্র অবস্থায় (প্রস্রাব পায়খানার সময়) সালাম বিনিময়, আশেপাশে পানি না থাকলে।

(সহীহ বোখারী, আবু দাউদ, মুসলিম  ১ম খন্ড, হাদিস নং- ৩৩০, ৩৩১, ৭০৮,৭০৯)

৬। পানি ব্যবহার করার ফলে শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যু  হওয়ার আশঙ্কা থাকলে । (সহীহ মিশকাত ১ম খন্ড হাদিস নং – ৪৮৮)

৭। যখন একটি বৈধ ভয় যে একটি শত্রু বা একটি বিপজ্জনক প্রাণী জল কাছাকাছি আছে ।

৮। কোনো ব্যক্তি যদি পানি থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করে এবং তার সাথে পান করার মতো সামান্য পানি থাকে আর অন্য পানি হাজির করতে অপরাগ হয়।

৯। যখন কূপ থেকে পানি বের করার কোন উপায় নেই (জল তোলার জন্য কোন দড়ি বা বালতি নেই)।

১০। যখন আপনার কাছে পানি কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা থাকে না যা বিক্রি করা হচ্ছে।

১১। যখন পানির কোন চিহ্ন থাকে না এবং পানি কোথায় পাওয়া যায় তা জিজ্ঞাসা করার মতো কোন লোক নেই।

 

তায়াম্মুম সুন্নাত পদ্ধতি –

উল্লেখিত পদ্ধতিতে তায়াম্মুম করার দলিল হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তায়াম্মুম হলো জমিনে দু’বার হাত মারা। একবার চেহারার জন্য, অন্যবার কনুই পর্যন্ত দু’হাতের জন্য’।

  • বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলা। (আবু দাঊদ সহীহ হাদিস নং-১০১, তিরমিযী-২৫, নাসাঈ সহীহ হাদিস নং -৭৮ ইস:ফা:,  ইব্নে মাজাহ হাসান হাদিস – ৩৯৭,৩৯৮ , তিরমিজী হাসান হাদিস – ২৫ ই ফা বা , মিশকাত সহীহ হাদিস – ৪০২ ই ফা বা ,মুসনাদে আহমাদ: ১৪/৩২৯, জমউল জাওয়ামে : ১/১৫৭৮৭)
  • নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ১/২৩২)
  • মাটিতে একবার উভয় হাত মারবে
  • এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে।
  • এরপর দু’হাত দিয়ে চেহারা মাসেহ করবে।
  • এরপর আবার মাটিতে দু’হাত মারবে।
  • এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে।
  • এরপর বাম হাত ডান হাতের উপরের অংশে কনুই র্পযন্ত বুলাবে।এবং কনুই থেকে নিচের অংশে কব্জি র্পযন্ত বুলাবে। অতঃপর একই কায়দায় ডান হাত দিয়ে বাম হাত বুলাবে।

( বর্ণনায় – আবু দাঊদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিজী )

 তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ –

  • পানি বর্তমান থাকা।
  • অজু ভঙ্গকারী কোনো কিছু সংঘটিত হওয়া, যেমন- রক্ত, বমি, পুঁজ, বায়ু ইত্যাদি বের হওয়া।
  • গোসল ফরজ হয় এমন বিষয় সংঘটিত হওয়া, যেমন- স্ত্রী সহবাস, কোনো কারণে বীর্য বের হওয়া ইত্যাদি ।
  • যেসব ওজরের কারণে তায়াম্মুম করা শরীয়ত সিদ্ধ সেসব কারণ দূর হয়ে যাওয়া। যেমন – অসুস্থতা, পানি নিকটে থাকা ইত্যাদি।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ৩৩২ তাহ্কীকৃত  )

 যেসব বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে-

  • পবিত্র মাটি।
  • কংকর।
  • বালু।
  • চুনা।
  • মাটির তৈরি কাঁচা অথবা পাকা ইট।
  • পাথর।
  • ইটের তৈরি দেয়াল, লাকড়ি অথবা অন্য কোনো পবিত্র বস্তুতে ধুলা লেগে থাকলে এসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে।

তায়াম্মুম

যেসব বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না –

  • মেটাল বা লোহা
  • স্টিল
  • গ্লাস
  • কাঠ
  • খাদ্য
  • টাইলস

তায়াম্মুম

সূচিপত্র (নামাজ শিক্ষা বই)……………

বিজ্ঞান যা বলে-

জমিনের মাটি তার পরমাণুগুলোতে পবিত্রতাকারী পদার্থ বহন করে। এ পদার্থ সকল প্রকার জার্ম ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। যেকোনো মাইক্রোব অথবা ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

অনুগ্রহ করে বেশি বেশি শেয়ার করুন ……………….

Leave a Reply