Skip to content

তায়াম্মুম কি, তায়াম্মুম করার সঠিক নিয়ম ?

তায়াম্মুম কি, তায়াম্মুম করার সঠিক নিয়ম ?

তায়াম্মুম কি ?

তায়াম্মুম শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা ,সংকল্প করা। পরিভাষায়-পানি পাওয়া না গেলে বা কোন কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে পবিত্র মাটি দ্বারা শরীয়তসম্মত পন্থায় পবিত্রতা অর্জন করাকে তায়াম্মুম বলে। পবিত্র মাটি অথবা মাটি জাতীয় বস্তু যেমন-বালু ,পাথর ,সুরকি ,মাটির পাত্র ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয।

আল্লাহর বাণী………………..

فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

 অর্থ –

অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল।

(সূরা আল মায়দা, আয়াত-৬)

তায়াম্মুম ফরজ, মুস্তাহাব  –

পানির অনুপস্থিতে অথবা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে যেসব বিষয়ের জন্য পবিত্রতা ফরজ সে সবের জন্য তায়াম্মুম করা ফরজ। আর যেসবের জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব সে সবের জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব।

 যেমন- কুরআন তিলাওয়াত করা

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

 

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণগুলো হলো-

– যে সকল কারণে ওযু নষ্ট হয়, সে সকল কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়।

– যে সকল কারণে গোসল ওয়াযিব হয় ,সে সকল কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়।

– পানি না পাওয়ার কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তবে পানি পাওয়া মাত্রই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।

– কোন ওমর বা রোগের কারণে তায়াম্মুম করলে ,পানি ব্যবহারের ক্ষমতা ফিরে আসা মাত্রই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।

– সালাতরত অবস্থায় যদি পানি পাওয়ার সংবাদ আসে এবং নতুন করে অজু করে সালাত আদায় করার সময় বাকি থাকে ,তবে তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে ।কিন্তু ঈদ ও জানাযার সালাত শুরু করলে পানি পাওয়া গেলেও তায়াম্মুম নষ্ট হবে না।

 

তায়াম্মুম শরীয়তভুক্ত হওয়ার দলিল-

১. আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ

অর্থ –

অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।

( সূরা আল মায়েদা: ৬)

২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি: একমাস হেঁটে আসার দূরত্ব পর্যন্ত আমার ভীতি বিস্তৃত করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আর সমস্ত জমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তির যখন নামাজের সময় হবে তখন সে যেন তা পড়ে নেয়।’

(বুখারী হাদিস নং- ৩২৮)

৩ – যেসব অবস্থায় পানি ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তা দূর করা, যেমন অসুস্থ হয়ে পড়া, মৃত্যু  হওয়ার আশঙ্কা, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকা ইত্যাদি।

(সহীহ মিশকাত ১ম খন্ড হাদিস নং – ৪৮৮)

৬. যে পানি ও মাটি কোনোটাই পাবে না সে পবিত্রতা ব্যতীতই সময়মতো নামাজ আদায় করে নেবে। এবং তা আর পুনরায় আদায় করতে হবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন……….

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ ۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থ –

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।

(সূরা- আত-তাগাবুন: ১৬)

তায়াম্মুম করা কখন বৈধ?

 – পানির অনুপস্থিতি

আল্লাহ তাআলা বলেন-

  فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ

অর্থ –

অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল।

( সূরা মায়েদা, আয়াত-৬)

– প্রচন্ড ঠান্ডায় যদি পানি গরম করার মতো কিছু না থাকে এবং পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে এ ধারণার পাল্লা ভারি থাকে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক, প্রচন্ড ঠান্ডা থাকার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজের ইমামতি করার পর, আমর বিন আস রাযি. এর কাজকে নাকচ করে না দেয়া এ ক্ষেত্রে প্রমাণ।

(বর্ণনায় আবু দাউদ)

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

– হাসান বসরী (র) বলেন , যে রোগীর কাছে পানি আছে , কিন্তু তার কাছে পৌঁছানোর কোন লোক থাকে না, তবে সে তায়ামুম করবে। (বুখারী পরিচ্ছেদ ২৩৫)

– গোসল ফরজ হলে , আশে পাশে কোথাও যদি পানি না পায় যার ধরুন নামাজ ছুটে যেতে পারে।  (সহীহ মুসলিম , বোখারী ১ম খন্ড, হাদিস নং- ৭০৫, ৩৩১,৩৪১ )

–   অপবিত্র অবস্থায় (প্রস্রাব পায়খানার সময়) সালাম বিনিময়, আশেপাশে পানি না থাকলে।  (সহীহ বোখারী, আবু দাউদ, মুসলিম  ১ম খন্ড, হাদিস নং- ৩৩০, ৩৩১, ৭০৮,৭০৯)

– পানি ব্যবহার করার ফলে শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যু  হওয়ার আশঙ্কা থাকলে । (সহীহ মিশকাত ১ম খন্ড হাদিস নং – ৪৮৮)

– যখন একটি বৈধ ভয় যে একটি শত্রু বা একটি বিপজ্জনক প্রাণী জল কাছাকাছি আছে ।

– কোনো ব্যক্তি যদি পানি থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করে এবং তার সাথে পান করার মতো সামান্য পানি থাকে আর অন্য পানি হাজির করতে অপরাগ হয়।

– যখন কূপ থেকে পানি বের করার কোন উপায় নেই (জল তোলার জন্য কোন দড়ি বা বালতি নেই)।

– যখন আপনার কাছে পানি কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা থাকে না যা বিক্রি করা হচ্ছে।

– যখন পানির কোন চিহ্ন থাকে না এবং পানি কোথায় পাওয়া যায় তা জিজ্ঞাসা করার মতো কোন লোক নেই।

তায়াম্মুমের ফরজ পদ্ধতি

  • বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলা।
  • নিয়ত করা।
  • চেহারা মাসেহ করা।
  • দু’হাত মাসেহ করা।
  • ইমামদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি বিষয় ফরজ বলে গণ্য করেছেন, আর তা হলো :ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা ও পরে দু’হাত মাসেহ করা, মুয়ালাত তথা অবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা, অর্থাৎ চেহারা মাসেহ করার পর বিলম্ব না করে হাত মাসেহ করা।
তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম সুন্নাত পদ্ধতি

উল্লেখিত পদ্ধতিতে তায়াম্মুম করার দলিল হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তায়াম্মুম হলো জমিনে দু’বার হাত মারা। একবার চেহারার জন্য, অন্যবার কনুই পর্যন্ত দু’হাতের জন্য’।

বর্ণনায় – বুখারী ও মুসলিম)

 

  • মাটিতে একবার উভয় হাত মারবে
  • এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে।
  • এরপর দু’হাত দিয়ে চেহারা মাসেহ করবে।
  • এরপর আবার মাটিতে দু’হাত মারবে।
  • এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে।
  • এরপর বাম হাত ডান হাতের উপরের অংশে কনুই র্পযন্ত বুলাবে।এবং কনুই থেকে নিচের অংশে কব্জি র্পযন্ত বুলাবে। অতঃপর একই কায়দায় ডান হাত দিয়ে বাম হাত বুলাবে।

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ –

  • পানি বর্তমান থাকা।
  • অজু ভঙ্গকারী কোনো কিছু সংঘটিত হওয়া, যেমন- রক্ত, বমি, পুঁজ, বায়ু ইত্যাদি বের হওয়া।
  • গোসল ফরজ হয় এমন বিষয় সংঘটিত হওয়া, যেমন- স্ত্রী সহবাস, কোনো কারণে বীর্য বের হওয়া ইত্যাদি ।
  • যেসব ওজরের কারণে তায়াম্মুম করা শরীয়ত সিদ্ধ সেসব কারণ দূর হয়ে যাওয়া। যেমন – অসুস্থতা, পানি নিকটে থাকা ইত্যাদি।

যেসব বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে-

  • পবিত্র মাটি।
  • কংকর।
  • বালু।
  • চুনা।
  • মাটির তৈরি কাঁচা অথবা পাকা ইট।
  • পাথর।
  • ইটের তৈরি দেয়াল, লাকড়ি অথবা অন্য কোনো পবিত্র বস্তুতে ধুলা লেগে থাকলে এসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে।
তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

যেসব বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না –

  • মেটাল বা লোহা
  • স্টিল
  • গ্লাস
  • কাঠ
  • খাদ্য
  • টাইলস

        

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

     

বিজ্ঞান যা বলে-

জমিনের মাটি তার পরমাণুগুলোতে পবিত্রতাকারী পদার্থ বহন করে। এ পদার্থ সকল প্রকার জার্ম ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। যেকোনো মাইক্রোব অথবা ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

Share your valuable words..............

Your email address will not be published. Required fields are marked *