Skip to content

হজ্জ পালনের ধারাবাহিক নিয়ম | Hajj

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত চলবে হজের কার্যক্রম ও আনুষ্ঠানিকতা। হজের ৫ দিনের করণীয় গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলোঃ

হজ্জ কি ?

হজ্জ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলোঃ ইচ্ছে করা, ঘোরাফেরা করা, সংকল্প করা, পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাবা ঘর এবং নির্দিষ্ট স্থান সমূহে তাওয়াফ ও জিয়ারত করাকে হজ্জ বলে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো হজ্জ।এটি এমন ইবাদত যেখানে আর্থিক ও শারীরিক উভয়েই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

হজ্জ পালন করা ফরজঃ

মহান আল্লহতায়ালা বলেনঃ​

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ


অর্থঃ এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইব্রাহীম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।

(সূরা আল-ইমরান আয়াতঃ ৯৭)
মহান আল্লাহ্তায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেনঃ
আর হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ কর। অতঃপর যদি তোমরা আটকে পড় তবে যে পশু সহজ হবে (তা যবেহ কর)। আর তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদাকা অথবা পশু যবেহ এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি উমরার পর হজ সম্পাদনপূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু সহজ হবে, তা যবেহ করবে। কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাত দিন সিয়াম পালন করবে। এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের অধিবাসী নয়। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাবদানে কঠোর।
হাদিসের বর্ণনায়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হাজ্জ (হজ্জ) কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা কি প্রতি বছর? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা অবধারিত হয়ে যাবে (প্রতি বছরের জন্য) অথচ তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমরা আমাকে ততইকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের পুর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের সাথে বিরোধীতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই- তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ কর।

(মুসলিম সহীহ হাদিসঃ ৩১২৭ ইফাবা)
হজ্জ

যে ব্যক্তি সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্বেই আরাফায় আসতে সক্ষম হবে সে হজ পেলঃ

আদুর রহমান ইবনে ইয়ামুর আদ-দীলী বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, হজ হচ্ছে আরাফাত। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তারপর বললেন, যে ব্যক্তি সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্বেই আরাফায় আসতে সক্ষম হবে সে হজ পেল। আর মিনা হচ্ছে তিন দিন। সুতরাং যদি কেউ দুইদিনে তাড়াতাড়ি করলো তার কোন পাপ নেই এবং যে ব্যক্তি বিলম্ব করলো তারও কোনো পাপ নেই।
( আবু-দাউদ সহীহ হাদিসঃ ১৯৪৯ তাহকীককৃত, তিরমিজী সহীহ হাদিসঃ ৮৮৯ তাহকীককৃত, ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিসঃ ৩০১৫ )

হজের ধারাবাহিক কাজ গুলো আগে পিছে করার বৈধতাঃ

আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) … ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।
(বুখারী সহীহ হাদিসঃ ১৬২৬ ইফাবা, ১৭৩৫ আন্তঃ)
হজ্জের ফরজ ৩টিঃ

১। ইহরাম বাধা

২। উকুফে আরাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান)

৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত

হজ্জের ওয়াজিব ৬টিঃ

১ । সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।

২ । অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।

৩ । মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিক্ষেপ করা।

৪ । হজ্জে তামাত্তু ও কি্রান কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা(হাদি {পশু} জবাই)।

৫ । এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।

৬ । মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদায় অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।

এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত

৮ জিলহজ্জ তারিখের ধারাবাহিক কাজঃ
হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা ( ৮ জিলহজ ) ?

মক্কার হারাম শরিফ বা বাসা-হোটেল বা ইহরামের নির্দিষ্ট স্থান থেকে থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং জোহরের সলাতের পূর্বেই মিনায় পৌঁছা। এখন অবশ্য ৭ তারিখে রাত থেকেই হাজিদের মিনায় নেওয়ার কাজ শুরু হয়।

ক । নিজ বাসস্থান থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করে সূর্যোদয়ের পর মিনায় রওয়ানা হবেন।

খ । সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করবেন।

মিনায় অবস্থান ৮ জিলহজঃ

মিনায় ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নত।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ’আবদুল ’আযীয ইবনু রুফাইয়’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তাঁর কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখ যুহর ও আসরের সলাত তিনি কোথায় আদায় করতেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা থেকে ফিরার দিন ’আসরের সলাত তিনি কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মুহাসসাবে। এরপর আনাস (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর।

( বুখারী সহীহ হাদিসঃ ১৫৫০ ইফাবা, ১৬৫৩ আন্তঃ )
হজ্জ

Leave a Reply