Skip to content

জানাজার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি I Janaza namaz

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Table of Contents

জানাজার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ?

জানাজার নামাজ –

কোনো মুসলিম মারা গেলে মাগফিরাতের জন্য মরদেহ সামনে নিয়ে বিশেষ নিয়মে যে দোয়া করা হয়, তার নাম জানাজার নামাজ। ‘জানাজা’ শব্দের অর্থ মরদেহ। জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কেফায়া। ফরজে কেফায়া হলো দু-একজন আদায় করলে মহল্লার সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। আর কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হয়।

জানাজার নামাজ শুধু পুরুষদের জন্য আবশ্যক। নারীদের জন্য এতে অংশগ্রহণ করার বিধান নেই। পবিত্রতা ছাড়া জানাজার নামাজ পড়া যায় না।

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

জানাজার নামাজ পড়ার পদ্ধতি –

সংক্ষেপে জানাজার নামাজের নিয়ম হলো মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সবাই একত্র হয়ে সোজা কাতার করে দাঁড়াবেন। চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির বলবেন। মনে মনে এ নিয়ত করবেন, ‘আমি জানাজার ফরজে কেফায়া নামাজ চার তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আদায়ের নিয়ত করছি।’

১ম  তাকবির – ১ম  তাকবির বলে কাদ বরাবর হাত উঠানো এবং সানা পড়া।

উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’

অর্থ: হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।

২য়  তাকবির-  ২য়  তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়া।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা–আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা–আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।’

(নাসাঈ ১২৯১)

৩য়  তাকবির – ৩য় তাকবিরের পর দোয়া পড়া । তখন হাত ওঠাবেন না।

মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ পুরুষ বা নারী হয়, তবে এই দোয়া পড়া—

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়া আলা তুদিল্লানা বা-দাহু।’

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন, তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন, তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।

(আবু দাউদ ৩২০১, তিরমিজি ১০২৪)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

মৃত যদি ছেলেশিশু হয়, তবে এই দোয়া পড়া—

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।

অর্থ: হে আল্লাহ! এই বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ, তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

আর মেয়েশিশু হলে এই দোয়া পড়া—

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।

অর্থ: হে আল্লাহ! এই বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

শিশুদের জন্য দোয়া-

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আইজহু মিন আজাবিল কবরি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি এই ছেলেটিকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করো।’

(মিশকাত ১৬৮৯)

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজআলহু লানা সালাফান ওয়া ফারাতান ওয়া জুখরান ওয়া আজরান’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই ছেলেটিকে (কিয়ামতের দিন) আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক, রক্ষিত ভান্ডার ও সওয়াবের কারণ বানাও)।’

(মিশকাত ১৬৯০)

দোয়া দুটি কারও জানা না থাকলে—

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুমিন নারী-পুরুষ উভয়কে ক্ষমা করে দিন।

৪র্থ তাকবির- তাকবিরের পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। প্রথম তাকবির ছাড়া হাত না ওঠানো। নামাজিদের কাতার তিন, পাঁচ, সাত এভাবে বিজোড় হওয়া।

(সুনানে হাদিস: ৭২৩৮)

 স্বামীর জন্য স্ত্রী লোকের শোক প্রকাশ এবং স্বামী ব্যতীত অন্যের জন্য স্ত্রী লোকের শোক প্রকাশ-

ইসমায়ীল (রহঃ) … যায়নাব বিন্‌ত আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রাঃ) এর ভাইয়ের মৃত্যু হলে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি কিছু সুগন্ধি আনিয়ে তা ব্যবহার করলেন। এরপর বললেন, সুগন্ধি ব্যবহারে আমার কোন প্রয়োজন নেই, তবু যেহেতু আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহ্ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এমন কোন স্ত্রী লোকের পক্ষে কোন মৃত ব্যাক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়িয নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (পালন করবে)।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২০৫,১২০৬,১২০৭  ই ফা বা / ১২৭৯,১২৮০,১২৮১-৮২ আন্তঃ)

 যারা জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে তারা আমাদের তরীকাভুক্ত নয়-

আবূ নু’আইম (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যাক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে এবং জাহিলীয়াত যুগের মত চীৎকার দেয়, তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২১৭,১২১৯  ই ফা বা / ১২৯৪,১২৯৭ আন্তঃ)

বিপদকালে হায়, ধ্বংস বলাও জাহিলীয়াত যুগের মত চিৎকার করা নিষেধ –

উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যারা (শোকে) গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয় তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২২০ ই ফা বা / ১২৯৮ আন্তঃ)

মৃতদের গালি দেওয়া নিষিদ্ধ-

আদম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা মৃতদের গালমন্দ কর না। কেননা, তারা আপন কৃতকর্মের ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুল কুদ্দুস ও মুহাম্মাদ ইবনু আনাস (রহঃ), আমাশ (রহঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলী ইবনু জা’দ, ইবনু আর’আরা ও ইবনু আবূ আদী (রহঃ), শু’বা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আদম (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১৩১১ ই ফা বা / ১৩৯৩ আন্তঃ)

 বরই পাতার দ্বারা মৃতকে গোসল ও উযূ করানো –

ইসমায়ীল ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা [যায়নাব (রাঃ)] এর ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তোমরা তাকে তিন, পাঁচ প্রয়োজন মনে করলে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবার কর্পূর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাঁদরখানি আমাদের দিয়ে বললেনঃ এটি তাঁর গায়ের সাথে জড়িয়ে দাও।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮০ ই ফা বা , ১২৫৩ আন্তঃ)

বেজোড় সংখ্যায় গোসল দেওয়া মুস্‌তাহাব –

মুহাম্মদ (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা [যায়নাব (রাঃ)] এর ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তোমরা তাঁকে তিন, পাঁচ প্রয়োজন মনে করলে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবার কর্পূর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাঁদরখানি আমাদের দিকে দিয়ে বললেনঃ এটি তাঁর ভিতরে কাপড় হিসেবে পরাও।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮১ ই ফা বা , ১২৫৪ আন্তঃ)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

মৃত ব্যক্তির (গোসল) ডান দিক থেকে শুরু করা এবং ওযুর স্থান থেকে  –

আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে ইরশাদ করেনঃ তোমরা তাঁর ডান দিক থেকে এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু)র স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮২,১১৮৩ ই ফা বা , ১২৫৫,১২৫৬ আন্তঃ)

পুরুষের ইযার দিয়ে মহিলার কাফন দেওয়া যায় কি –

আবদুর রহমান ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যার ইন্‌তিকাল হলে তিনি আমাদের বলেনঃ তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাবে। আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর কোমর থেকে তাঁর চাঁদর (খুলে দিয়ে) বললেনঃ এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরিয়ে দাও।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮৪ ই ফা বা , ১২৫৭ আন্তঃ)

গোসলে কর্পূর ব্যবহার করবে শেষবারে-

হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যাগণের মধ্যে একজনের ইন্‌তিকাল হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেনঃ তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) ’কিছু কর্পূর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাঁদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেনঃ এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮৫ ই ফা বা , ১২৫৮-৫৯ আন্তঃ)

মহিলাদের চুলকে খুলে দেওয়া বা বেণী করা –

ইব্‌ন সীরীন (রহঃ) বলেছেন, মৃতের চুল খুলে দেওয়ায় কোন দোষ নেই। আহ্‌মদ (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যার মাথার চুল তিনটি বেণী করে দেন। তাঁরা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৮৬,১১৮৮ ই ফা বা / ১২৬০,১২৬২ আন্তঃ)

 কাফনের জন্য সাদা কাপড়-

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনখানা ইয়ামানী সাহুলী সাদা সূতী কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়। তাঁর মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৯০  ই ফা বা / ১২৬৪ আন্তঃ)

 দু’ কাপড়ে কাফন দেওয়া-

আবূ নু’মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি আরাফাতে ওয়াকূফ অবস্থায় হঠাৎ তার উট্‌নী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেছেন, তাঁর ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’ কাপড়ে তাঁকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তাল্‌বিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৯১  ই ফা বা / ১২৬৫ আন্তঃ)

মুহ্‌রিম ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন দেওয়া হবে-

আবূ নু’মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তির উট তার ঘাড় মটকে দিল। (ফলে সে মারা গেল)। আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। সে ছিল ইহ্‌রাম অবস্থায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দু’ কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা আবৃত করো না। কেননা, আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন তাকে মুলাব্বিদ অবস্থায় উঠিয়ে নিবেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৯৩,১১৯৪  ই ফা বা / ১২৬৭,১২৬৮ আন্তঃ)

 সেলাইকৃত বা সেলাইবিহীন কামীস দিয়ে কাফন দেওয়া এবং কামীস ব্যাতীত কাফন দেওয়া-

মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ‌ ইবনু উবাই (মুনাফিক সর্দার) এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি তা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইছা করি। আর আপনি তার জানাযা পড়াবেন এবং তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ আমাকে সংবাদ দিও, আমি তার জানাযা আদায় করব। তিনি তাঁকে সংবাদ দিলেন।

যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা আদায়ের ইচ্ছা করলেন, তখন উমর (রাঃ) তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা আদায় করতে নিষেধ করেন নি? তিনি বললেনঃ আমাকে তো দু’টির মধ্যে কোন একটি করার ইখ্‌তিয়ার দেওয়া হয়েছে। (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) আপনি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য মাগফিরাত কামনা করুন বা মাগফিরাত কামনা না-ই করুন (একই কথা) আপনি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন; কখনো আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। কাজেই তিনি তার জানাযা পড়লেন, তারপর নাযিল হলঃ “তাদের কেউ মারা গেলে কখনও আপনি তাদের জানাযা আদায় করবেন না।”

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৯৫,১১৯৬  ই ফা বা / ১২৬৯,১২৭০ আন্তঃ)

তিন খানা সুতি সাদা কাপড়ে কাফন, কামীস ব্যাতীত –

আবূ নু’আইম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিন খানি সুতী সাদা সাহুলী (ইয়ামীন) কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১১৯৭, ১১৯৮, ১১৯৯  ই ফা বা / ১২৭১, ১২৭২, ১২৭৩ আন্তঃ)

মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া –

আতা, যুহরী, আমর ইব্‌ন দীনার এবং কাতাদা (রহঃ) একথা বলেছেন। আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) আরও বলেছেন, সুগন্ধিও সমস্ত সম্পদ থেকে দিতে হবে। ইব্‌রাহীম (রহঃ) বলেছেন (সম্পদ থেকে) প্রথমে কাফন তারপর ঋণ পরিশোধ, তারপর ওয়াসিয়াত পূরণ করতে হবে। সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, কবর ও গোসল দেওয়ার খরচ কাওনের অন্তর্ভুক্ত ।

আহমদ ইবনু মুহাম্মদ মাক্কী (রহঃ) … সা’দ (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,……………… ।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২০০  ই ফা বা / ১২৭৪ আন্তঃ)

একখানা কাপড় ব্যতীত আর কোন কাপড় পাওয়া না গেলে-

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) কে খাদ্য পরিবেশন করা হল, তখন তিনি সিয়াম পালন করছিলেন। তিনি বললেন, মুস’আব ইবনু উমাইর (রাঃ) শহীদ হন। তিনি ছিলেন, আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। (অথচ) তাঁকে এমন একখানা চাঁদরদিয়ে কাফন দেয়া হল যে, তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর দু’পা বাইরে থাকে আর দু’পা ঢাকলে মাথা বাইরে থাকে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে পড়ে, তিনি আরও বলেছিলেন, হামযা (রাঃ) শহীদ হন। তিনিও ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। তারপর আমাদের জন্য পৃথিবীতে অত্যধিক প্রাচুর্য দেওয়া হয়েছে। আশংকা হয় যে, আমাদের নেক আমল গুলো (এর বিনিময়) আমাদের আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমন কি খাদ্যও পরিহার করলেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২০১  ই ফা বা / ১২৭৫ আন্তঃ)

মাথা বা পা আবৃত করা যায় এতটুকু ব্যতীত অন্য কোন কাফন না পাওয়াগেলে, তা দিয়ে কেবল মাথা ঢাকা হবে-

আমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনা হিজরত করেছিলাম, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়েছিলাম। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর নিকটে নির্ধারিত হয়ে আছে। তারপর আমাদের মধ্যে অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তারা তাদের বিনিময়ের কিছুই ভোগ করে যাননি। তাঁদেরই একজন মুস’আব ইবনু উমাইর (রাঃ) আর আমাদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছেন যাদের অবদানের ফল পরিপক্ক হয়েছে। আর তাঁরা তা ভোগ করছেন।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২০২  ই ফা বা / ১২৭৬ আন্তঃ)

যারা জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে তারা আমাদের তরীকাভুক্ত নয়-

আবূ নু’আইম (রহঃ) … আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যাক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে এবং জাহিলীয়াত যুগের মত চীৎকার দেয়, তারা আমাদের তরীকাভূক্ত নয়।

(বুখারী সহীহ হাদিস – ১২১৭  ই ফা বা / ১২৯৪ আন্তঃ)

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র / Table of Contents of Prayers …………..

Leave a Reply