Skip to content

নামাজে তাকবীর বলা এবং হাত বাধা I Takbeer, hand barrier

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

তাকবীর -

আসসালামু আলাইকুম, তাকবিরে তাহরিমা নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আল্লাহর বড়ত্বসূচক শব্দ দিয়ে নামাজ শুরু করাকে তাকবিরে তাহরিমা বলে। তাকবীর বলে নামাজ শুরু করতে হয় এবং সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা হয়।

প্রতি নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বেঁধেছেন। সহীহ হাদিসে হাত বাধা প্রসঙ্গে বিভিন্ন সহীহ হাদিস রয়েছে যেমন -ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা, ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখা, ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখা, ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখা, ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভীর নিচে রাখা। সাহাবায়ে কেরামকে এভাবেই নামায পড়ার আদেশ করা হত এবং তাঁরাও এভাবেই হাত বেঁধে নামায পড়তেন।

 

তাকবীর বলে হাত বাধা ?

নামাজে তাকবীর বলে হাত বাধা

নামাজে তাকবীর বলে হাত বাধা

ক।  সলাতে তাকবীর বলে সলাত শুরু করা ফরয –

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাযের চাবি হল পবিত্রতা, তার তাহরীম হল শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা, তার তাহলীল হল (শেষে) সালাম বলা। যে ব্যক্তি আলহামদু লিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা ) ও অন্য সূরা পাঠ করেনি তার নামায হয়নি, চাই তা ফরয নামায হোক বা সুন্নাত নামায।

( তিরমিজী সহীহ হাদিস - ২৩৮ তাহকীককৃত/ই ফা বা , ইব্নে মাজাহ সহীহ হাদিস - ২৭৬, বুখারী সহীহ হাদিস - ৬৯৬,৬৯৭,৬৯৮ ই ফা বা /৭৩২,৭৩৩,৭৩৪ আন্তঃ )

 

খ।  তাকবীর বলে উভয় হাত কতটুকু পর্যন্ত উঠাবে -

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীর দিয়ে সালাত (নামায) শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকূ’র তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন, তখনও এরূপ করতেন এবং رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না। আর সিজদার থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরূপ করতেন না।

( বুখারী সহীহ হাদিস - ৭০২ ই ফা বা / ৭৩৮ আন্তঃ,   আবু দাঊদ সহীহ হাদিস - ৭২৮ ই ফা বা )

 

গ। তাকবীর তাহরীমা বলার সময় হাতের আঙ্গুল সমুহ প্রসারিত করে রাখা-

আবদুল্লাহ ইবনু আবদির রহমান, উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদিল মাজীদ আল হানাফী, ইবনু আবী যির (রহঃ) এর সূত্রে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়তেন তখন হাত দুটি প্রসারিত করে উপরে তুলতেন।

( সহিহ আবু দাউদ-  ৭৩৫, তিরমিজী হাদিস - ২৪০ ই ফা বা )

নামাজের সময় হাত বাধা প্রসঙ্গে  ?

নামাজের সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে বুকের উপর রাখা-

নামাজের সময় হাত বাধা প্রসঙ্গে

নামাজের সময় হাত বাধা প্রসঙ্গে

আবূ তাওবা ..... তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বেঁধে রাখতেন।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস - ৭৫৯ ই ফা বা )

 

তাকবীর বলে নাভির নিচে হাত বাধা –

সলাত আদায়ের সময় হাত কোথায় বাধবে এ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক সময় তর্কবিতর্ক হয়ে থাকে যেমন - হাত নাভির নিচে বাধবে, না বুকের উপরে বাধবে।  অথচ দুটি পদ্ধতিই সহীহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।  তারই ধারাবাহিকতায় নিন্মে কিছু সহীহ এবং যঈফ বর্ণনা দেওয়া হল :-

 

নাভির নিচে হাত বাধা প্রসঙ্গে কিছু সহীহ, যঈফ এবং  হাসান হাদিস -

ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখা কিছু ( সহীহ ) হাদিস  -

ক. সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত -

তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কবজির উপর রাখবে। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, সাহল (রহঃ) এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমায়ীল (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাহল (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস- ৭০৪ ই ফ বা / ৭৪০ আন্তঃ)

 

খ. আল-হাসান ইবনু আলী আসেম থেকে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণিত-

রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ও এর জোরে আকড়িয়ে ধরেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি কিছুদিন পর সেখানে গিয়ে দেখতে পাই যে, সাহাবায়ে কিরাম অত্যধিক শীতের কারণে শরীর আবৃত করে রেখেছেন। এবং তাদের হাতগুলো স্ব-স্ব কাপড়ের মধ্যে নড়াচড়া করছে।

( আবু দাউদ সহীহ হাদিস – ৭২৬, ৭২৭)

 

গ। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কবজির উপর রাখবে। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, সাহল (রহঃ) এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ………………।

( বুখারী সহীহ হাদিস - ৭০৪ ই ফা বা /৭৪০ আন্তঃ )

 

ঘ। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি আমার বাম হাত ডান হাতের উপর রেখেছিলাম। তিনি আমার ডান হাত ধরে বাম হাতের উপর রাখেন।

( ইবনে মাজাহ সহীহ হাদিস - ৮১১)

নাভির নিচে হাত বাধা প্রসঙ্গে কিছু ( যঈফ ) হাদিস -

ক। মুহাম্মাদ ইবনু মাহবূব ..... আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত-

তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেন, নামাযে রত অবস্থায় নাভির নীচে বাম হাতের উপর ডান হাতের তালু রাখা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।

( আবু দাঊদ যঈফ হাদিস – ৭৫৬ ই ফা বা )

 

খ। মূসা’দ্দাদ ..... আবূ ওয়ায়েল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি নামাযে নাভির নীচে (বাম) হাতের উপর (ডান) হাত রাখি।

আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ইসহাক আল-কূফীকে দুর্বল রাবী হিসাবে অভিহিত করতে শুনেছি।

( আবু দাঊদ যঈফ হাদিস – ৭৫৮ ই ফা বা )

 

 নোটঃ (আরও বিস্তারিত জানতে – “ জাল হাদিসের কবলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছালাত ” , পৃষ্ঠা ২১৪  থেকে ২১৮ এই বই টি পড়ুন )

 

গ। কুতায়বা (রহঃ) .... কাবীসা ইবনু হুলব তাঁর পিতা হুলব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা - তিনি বলেন, নবী (সা:) যখন আমদের ইমামতি  করতেন তখন ডান হাত দিয়ে তাঁর বাম হাত ধারণ করতেন।

( তিরমিজী হাসান হাদিস নং-  ২৫২ ই ফ বা,   ইবনু মাজাহ হাসান হাদিস- ৮০৯ ,   মিশকাত হাসান হাদিস- ৮০৩ )

 

এই বিষয়ে ওয়াইল ইবনু হুজর, গুতায়ফ ইবনুল হারিছ, ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ ও সাহল ইবনু সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদিস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ হুলব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসটি হাসান। সাহাবী, তাবিঈ ও পরবর্তীযুগের আলিমগণ এই হাদিস অনুসারেই আমল করেছেন। তাঁরা সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ উভয় হাত নাভির উপর স্থাপন করার আর কেউ কেউ নাভীর নীচে স্থাপন করার অভিমত দিয়েছেন। তবে আলিমগণের নিকট এই উভয় সুরতেরই অবকাশ রয়েছে। হুলব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নাম হল উয়াযীদ ইবনু কানাফা আত-তাঈ।

 

ইমাম কাউকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতে দেখলে-

আমর ইবনু ’আলী (রহ.) ..... ইবনু মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাকে দেখলেন যে, আমি সালাতে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখেছি। তিনি আমার ডান হাত ধরে তা বাম হাতের উপর রাখলেন।

( আন নাসাঈ যঈফ হাদিস - ৮৮৮ হা একা:/ ৮৮৯ আন্তঃ )

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতে দেখলে-

মুহাম্মাদ ইবনু বাক্‌কার .... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতে পেয়ে তাঁর বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে দেন।

( আবু দাঊদ হাসান হাদিস - ৭৫৫ )

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers ..............

 

সলাতে কোমরে হাত রাখা নিষেদ –

কোমরে হাত রাখা নিষেদ

কোমরে হাত রাখা নিষেদ

আবূ নু’মান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতে কোমরে হাত রাখা নিষেধ করা হয়েছে। হিশাম ও আবূ হিলাল (রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস - ১১৪৬ ই ফা বা , ১২১৯ আন্তঃ, আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস - ৮৯৩ ই ফা বা )

 

Related Links / সম্পর্কিত লিংক -

১। নামাজ আদায়ের পদ্ধতি বিস্তারিত।

২। বিতরের নামাজ।

৩। নফল নামাজ।

৪। রাতের নামাজ।

৫। মহিলাদের নামাজ।

৬। নামাজের নিষিদ্ধ সময়।

৭। নামাজের সকল অধ্যায়

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers ..............

 

দ্বীনি কাজের স্বার্থে আমরা সবাই এই পোষ্টটি বেশি করে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে যেন সহীহ হাদিস অনুসারে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন ।

আমিন

Leave a Reply