Skip to content

সূরা ফাতিহা I Sura Fatiha,fatiah

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

সূরা ফাতিহা বলা এবং সাথে অন্য একটি সূরা বলা : Sura Fatiha

আসসালামু আলাইকুম, আল-কোরআনুল কারিমের গুরুত্বপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ সুরা ‘সুরাতুল ফাতিহা’। নামাজে শুরুতেই সুরাটি পড়া আবশ্যক। কিন্তু নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে কী বলেছেন বিশ্বনবি (সা:)? কিংবা নামাজে সুরা ফাতিহা কেন পড়তে হবে তা নিন্মে আল- কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হল :

সলাতে কুরআন পাঠের শুরুতেই ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ করা :

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন :

فَاِذَا قَرَاۡتَ الۡقُرۡاٰنَ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ

অর্থ – ” তুমি যখনি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়ত্বান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে “।

যদিও সম্বোধন নবী (সাঃ)-কে করা হয়েছে; কিন্তু উদ্দেশ্য সকল উম্মত। অর্থাৎ কুরআন পাঠের পূর্বে  أَعُوذُْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ  পাঠ কর।

( সূরা নাহল আয়াত : ৯৮ )

নোটঃ  “ছানা ও আউযুবিল্লাহ ” পড়বে কেবল সালাতের প্রথম রাকআতে এবং চুপি চুপি বলবে ।

” বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” পাঠ করা :

মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল হাকাম (রহঃ) … নুয়ায়ম মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করি। তিনি প্রথমে পড়লেন বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন, যখন তিনি غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ এ পর্যন্ত পৌছলেন তখন ’আমীন, বললেন, তারপরে সকল লোক বলল,’আমীন’। যখনই তিনি সিজদা করতেন তখন বলতেন, ’আল্লাহু আকবার’ আর যখন তিনি বসা থেকে দাড়াতেন তখনও আল্লাহু আকবার বলতেন। তিনি সালাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত সালাত আদায় করে তোমাদের দেখালাম।

( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস:  ৯০৮, ৯০৭ ই ফা বা )

সলাত  বা  নামাজে  বিসমিল্লাহ্‌ উচ্চস্বরে পাঠ না করা :

মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমার ও উসমান (রাঃ) এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি, কিন্তু তাঁদের কাউকে بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ সরবে পড়তে শুনিনি।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ৭৭৫,৭৭৬,৭৭৭,৭৭৮  ই ফা বা , ৩৯৯ আন্তঃ,      আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস- ৯০৯, ৯১০ ই ফা বা )

সূরা ফাতিহা পাঠ করা :

 

ক। যখন আল-কোরআন পাঠ করা হয় তখন মনোযোগ দিয়ে শুন :

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَ اِذَا قُرِیٴَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ وَ اَنۡصِتُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ

অর্থঃ আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর।

তাফসীর : এখানে ঐ সকল কাফেরদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যারা কুরআন তিলাঅতের সময় চেঁচামেচি করত এবং সঙ্গী-সাথীদের বলত, {لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ} অর্থাৎ, তোমরা কুরআন শোন না এবং হট্টগোল কর। ( সূরা হা-মীম সাজদাহ : ২৬) তাদেরকে বলা হল যে, এর পরিবর্তে তোমরা যদি মন দিয়ে শোন ও নীরব থাক, তাহলে হয়তো বা তোমাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করবেন এবং সেই সাথে তোমরা আল্লাহর দয়া ও রহমতের অধিকারী হয়ে যাবে। কোন কোন ইমাম এটিকে সাধারণ আদেশ বলে ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ, যখনই কুরআন পাঠ করা হবে; নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে তখনই সকলকেই নীরব থেকে কুরআন শ্রবণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই সাধারণ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সশব্দে ক্বিরাআত পড়া হয়, এমন সমস্ত নামাযে মুক্তাদীদের সূরা ফাতিহা পাঠ কুরআনের এই আদেশের পরিপন্থী বলেছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামদের মত হল, সশব্দে ক্বিরাআত পড়া হয়, এমন নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে নবী (সাঃ) তাকীদ করেছেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাঁদের নিকট এই আয়াত শুধুমাত্র কাফেরদের জন্য মনে করাই সঠিক। যেমন এই সূরার মক্কী হওয়ার মধ্যেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু যদি এটিকে সাধারণ আদেশ মেনে নেওয়া যায়, তবুও নবী (সাঃ) এই সাধারণ আদেশ হতে মুক্তাদীদেরকে আলাদা করে নিয়েছেন। আর এভাবে কুরআনের এই আদেশ সত্ত্বেও মুক্তাদীদের সশব্দে ক্বিরাআতবিশিষ্ট নামাযেও সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যিক হবে। কারণ কুরআনের এই সাধারণ আদেশ থেকে সূরা ফাতিহা পাঠ করার আদেশ সহীহ মজবূত হাদীস দ্বারা ব্যতিক্রান্ত। যেমন অন্য কিছু ক্ষেত্রে কুরআনের ব্যাপক আদেশকে সহীহ হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট করে নেওয়া স্বীকৃত। যেমন, (الزَّانِيَةُ والزَّانِي فَاجلِدُوا) এর ব্যাপক আদেশ হতে বিবাহিত ব্যভিচারীকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অনুরূপ (والسَّارِقُ وَالسَّارِقة) এর ব্যাপক আদেশ হতে এমন চোরকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যে দীনারের এক চতুর্থাংশের কম মাল চুরি করেছে অথবা চুরির মাল যথেষ্ট হিফাযতে ছিল না ইত্যাদি। অনুরূপ (فَاستَمِعُوا لَهُ وأَنصِتُوا) এর ব্যাপক আদেশ হতে মুক্তাদীদেরকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করে নেওয়া হবে। সুতরাং তাদের সশব্দে ক্বিরাআত হয় এমন সকল নামাযেও সূরা ফাতিহা পাঠ করা জরুরী হবে। কারণ নবী (সাঃ) এর তাকীদ দিয়েছেন। যেমন সূরা ফাতিহার তফসীরে ঐ সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

( সূরা আল-আরাফ আয়াত : ২০৪ )

 

খ।  কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআনের নির্দেশ শুন না এবং এর আবৃত্তি কালে শোরগোল সৃষ্টি কর :

মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আরেকটি আয়াতে বলেন :

وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَا تَسۡمَعُوۡا لِهٰذَا الۡقُرۡاٰنِ وَ الۡغَوۡا فِیۡهِ لَعَلَّکُمۡ تَغۡلِبُوۡنَ

অর্থঃ আর কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআনের নির্দেশ শুন না এবং এর আবৃত্তি কালে শোরগোল সৃষ্টি কর, যেন তোমরা জয়ী হতে পার।

তাফসীর আহসানুল বায়ান :

ক। এ কথা তারা আপোসে বলাবলি করে। কেউ কেউ لاَ تَسْمَعُوْا (এ কুরআন শুনো না) এর অর্থ করেছেন, তার অনুসরণ করো না। তার কথা মেনো না।

খ। অর্থাৎ, চেঁচামেচি কর, তালি বাজাও, শিস্ দাও এবং চিৎকার করে কথা বল, যাতে উপস্থিত জনগণের কানে কুরআনের আওয়াজ না পৌঁছে এবং তাদের অন্তর কুরআনের লালিত্যময় ভাষা ও তার চমৎকারিত্বে যেন প্রভাবিত না হয়ে যায়।

গ। অর্থাৎ, সম্ভবতঃ এইভাবে চিৎকার করার কারণে মুহাম্মাদ কুরআন পাঠ করাই ছেড়ে দেবে; যা শুনে মানুষ প্রভাবিত হয়।

( সূরা হা-মীম আস-সাজদা আয়াত : ২৬ )

 

গ।  নামাজে  ” আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন “– এর মাধ্যমে কিরাআত শুরু করা :

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ

অর্থ – অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ানسبع مثاني ( পুনঃপুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত ) থেকে উদ্দেশ্য কি? এ সর্ম্পকে মুফাসসিরীনদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এর উদ্দেশ্য সূরা ফাতেহা এটাই সঠিক। যেহেতু এটি সাত আয়াতবিশিষ্ট এবং তা প্রত্যেক নামাযে বার বার পাঠ করা হয়। (মাসানীর অর্থ একাধিকবার পড়া।) হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। সুতরাং একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ-লামীন। এটি সাবএ মাসানী ও কুরআন আযীম, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হিজ্র) অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘উম্মুল কুরআনই হল সাবএ মাসানী ও কুরআনে আযীম।’’ (ঐ)  সূরা ফাতেহা কুরআনের একটি অংশ, সেই জন্য সাথে সাথে কুরআন আযীমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

( সূরা আল-হিজর আয়াত : ৮৭ )

হাদিসের বর্ননায় :

ক।  আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ولقد آتيناك سبعا من المثاني والقرآن العظيم ” আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃপুন আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহা কুরআন “।

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ সাইদ ইবনু মুয়াল্লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিলেন, তখন আমি সালাত শেষ না করে আসিনি। এরপর আমি আসলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার কাছে আসতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছিল? আমি বললাম, আমি সালাত আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা কি একথা বলেননি, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ এবং রাসুলের ডাকে সাড়া দাও”? তারপর তিনি বললেন, আমি মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগেই কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরাটি শিখিয়ে দিবনা? তারপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ থেকে বের হতে লাগলেন , আমি তাঁকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, সে সূরাটি হল, “আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন”। এটি হল পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৪৩৪৭, ৪৩৪৮ ই ফা বা / ৪৭০৩, ৪৭০৪ আন্তঃ )

 

নোটঃ উম্মুল কুরআন বলা হয় সুরা ফাতিহাকে। কুরআন শরীফের সকল বিষয়বস্তু এর মধ্যে সংক্ষেপে রয়েছে বলে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ কুরআনের মা বলা হয়।

 

খ।  কুতায়বা (রহঃ) ….. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলেই আল -হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন থেকে কিরাআত শুরু করতেন।

( তিরমিজী  সহীহ  হাদিস নম্বর :  ২৪৬  ই ফা বা , ইবনু মাজাহ সহীহ হাদিস :  ৮১৩, মুসলিম সহীহ হাদিস : ৭৭৭ ই ফা বা,  আবূ দাঊদ সহীহ হাদিস : ৭৮২ )

 

সূরা ফাতিহা :

সূরা ফাতিহা পাঠের পর আমিন বলা :

স্বশব্দে আমিন বলা :

বুনদার (রহঃ) ……. ওয়াইল ইবনু হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা কেনন যে, তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ) পাঠের পর ” আমীন “ বলতে শুনেছি। আর তিনি দীর্ঘস্বরে তা পাঠ করেছেন।

( তিরমিজী সহীহ হাদিস :  ২৪৮ ই ফা বা , ইব্নে মাজাহ সহীহ হাদিস- ৮৫৫, নাসায়ী সহীহ হাদিস- ৯৩২ ই ফা বা ,  আবূ দাঊদ সহীহ হাদিস : ৯৩২ ই ফা বা , বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৪৬ ই ফা বা)

 

নিঃশব্দে আমিন বলা-

 

আমীন বলার ফযীলত :

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’আমীন’ বলেন, তখন তোমারও ’আমীন’ বলো। কেননা, যারা ’আমীন’ (বলা) ও ফিরিশতাদের ’আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ’আমীন’ বলতেন।

( বুখারী সহীহ হাদিস : ৭৪৪,৭৪৫,৭৪৬ ই ফা বা /৭৮০,৭৮১,৭৮২ আন্তঃ)

 

সূরা ফাতিহা পাঠ না করলে নামাজ অসম্পূর্ন হয় :

ক।  আল-কানবী ….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার নামায ক্রটিপূর্ণ, তার নামায ক্রটিপুর্ণ, তার নামায ক্রটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ। রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি যে, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন সূরা ফাতিহা পাঠ করব কি? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বলেন, হে ফারসী! তখন তুমি তোমার মনে মনে তা পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি মহান আল্লাহ বলেন, আমি নামাযকে (অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত করেছি। এর অর্ধেক আমার জন্য এবং বাকী অর্ধেক আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা আমার নিকট যা কামনা করে, তাই তাকে দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমরা সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যখন আমার বান্দা বলেঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন, তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। অতঃপর বান্দা যখন বলেঃ আর-রাহমানির রাহীম, তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। বান্দা যখন বলেঃ মালিকি ইয়াওমিদ্দীন, তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার বান্দা আমার সম্মান প্রদর্শন করেছে। অতঃপর যখন বান্দা বলেঃ ইয়াকা’নাবুদু ওয়া ইয়াকা’নাস্তাইন, তখন আল্লাহ্ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দা যা প্রার্থনা করল, তাই তাকে দেয়া হয়। অতঃপর বান্দা যখনই “ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকীম, সীরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন” বলে তখন আল্লাহ্ বলেন, এ সমস্তই আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা যা কিছু প্রার্থনা করেছে- তাও প্রাপ্ত হবে।

( আবু দাঊদ সহীহ হাদিস – ৮২১,৮২২,৮২৩,৮২৪ ই ফা বা, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনু মাজা, নাসাঈ )

 

খ।  আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সলাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হল না।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৭২০ ই ফা বা / ৭৫৬ আন্তঃ, অনুচ্ছেদ ৪৮৭  ই ফা বা )

 

গ। মুক্তাদির সুরা ফাতিহা মনে মনে পাঠ করা :

কুতায়বা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সালাত আদায় করে আর তাতে সূরা ফাতিহা না পড়ে তা অসস্পূর্ণ, তা অসস্পূর্ণ, তা অসস্পূর্ণ, পূর্ণ হয় না। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আমি অনেক সময় ইমামের পেছনে সালাত আদায় করে থাকি, তিনি আমার বাহু টান দিয়ে বললেন, হে পারসিক (ইরানী); তুমি তা মনে মনে পড়বে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সালাত আধা আধি ভাগ করেছি। অতএব, এর অর্ধেক আমার জন্য আর অর্ধেক বান্দার জন্য। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে যা সে চায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পড়। বান্দা যখন বলে, “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। আর যখন বান্দা বলে, “আর রহমানির রাহীম” তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার স্তুতি বর্ণনা করল। আর বান্দা যখন বলে “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন” তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করল। আর বান্দা যখন বলে, “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্‌তায়ীন” তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এই আয়াতটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে। আর আমার বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে, যা-সে চায়। বান্দা বলে, “ইহ্‌দিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম, সিরাতাল লাযীনা আন আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বা-ল্লীন” (তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন) এসবই আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে যা সে চায়।

( আন-নাসাঈ সহীহ হাদিস- ৯১২ ই ফা বা )

 

ঘ। ইমামের পেছনে মুকতাদীর জোরে কিরা’আত পাঠ নিষেধ :

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বললেন, আমি মনে করলাম তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।

( মুসলিম সহীহ হাদিস – ৭৭৪ ই ফা বা/ ৩৯৮ আন্তঃ)

 

ঙ। সুফইয়ান ইবনু ওয়াকী (রহঃ) …. আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন সালাতের চাবি হল তাহারাত। তাকবীর তাহরীমা (সালাতের পরিপন্থী) সকল কাজ হারাম করে দেয় আর সালাত তা হালাল করে। কেউ যদি সূরা ফতিহা ও একটি সূরা না পড়ে তবে তাঁর সালাত হয় না তা ফরয হোক বা অন্য কিছু।

( তিরমিজী সহীহ হাদিস – ২৩৮ ই ফা বা /তাহকীককৃত )

 

চ। কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে :

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সাহাবী এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি তো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে আগের মত সালাত আদায় করলেন। তারপর এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। এভাবে তিনবার বললেনঃ ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন।

সাহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন- আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানিনা। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। তারপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে আদায় করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর এভাবেই পূরো সালাত আদায় করবে।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৭২১ ই ফা বা / ৭৫৭ আন্তঃ )

শেষ দুরাকাতে শুধু সূরা ফাতিহাহ্ পড়া :

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষ দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি প্রথম রাকাআতে যতটুকু দীর্ঘ করতেন, দ্বিতীয় রাকাআতে ততটুকু দীর্ঘ করতেন না। এরূপ করতেন আসরে এবং ফজরেও।

( বুখারী সহীহ হাদিস – ৭৪০ ই ফা বা /৭৭৬ আন্তঃ)

 

সাকতা বা নীরব থাকা :

সূরা পাঠ শেষ হলে  রুকুতে যাওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (স.) সামান্য পরিমাণ সময় চুপ থেকে দম নিতেন। অতঃপর রুকুতে যেতেন এবং রুকূতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন।

( আবু দাউদ যঈফ হাদিস  : ৭৭৮ ই ফা বা  )

Related Links / সম্পর্কিত লিংক :

১। নামাজ আদায়ের পদ্ধতি বিস্তারিত।
২। বিতরের নামাজ।
৩। নফল নামাজ।
৪। রাতের নামাজ।
৫। মহিলাদের নামাজ।

৬। নামাজের নিষিদ্ধ সময়।

 

নামাজের অধ্যায়ের সূচিপত্র/Table of Contents of Prayers …………..

 

দ্বীনি কাজের স্বার্থে আমরা এই পোষ্টটি বেশি করে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে যেন সহীহ ভাবে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন আমিন।

 

Leave a Reply